Wednesday, November 5, 2014

২০৫. যুগে যুগে মহামানবদের প্রচারিত বাণীর নির্যাস একই

কোয়ান্টাম মুক্ত আলোচনায় আমন্ত্রিত হন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৌদ্ধ ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ বৌদ্ধকৃষ্টি প্রচার সঙ্ঘের সভাপতি ও ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ মহামান্য শুদ্ধানন্দ মহাথের। ‘মহামতি বুদ্ধের জীবন ও শিক্ষা’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি বলেন, সকল ধর্মেরই মূল বাণী এক; যাতে বলা আছে অন্যের উপকার করার কথা, কর্মফল অর্জনের গুরুত্বের কথা, ভিন্ন মতাবলম্বীর প্রতি সহনশীলতার কথা।
যে দুঃখ একজন মানুষকে রাজপুত্র হয়েও, ভোগবিলাসের সমস্ত হাতছানিকে উপেক্ষা করে গৃহত্যাগী করেছিলো, প্রবৃত্ত করেছিলো দীর্ঘ আত্মনিমগ্নতায়, বোধিত্ব লাভের মাধ্যমে তিনি পেলেন সে দুঃখকে জয় করার উপায়। সিদ্ধার্থ থেকে তিনি হলেন গৌতম, মহামতি গৌতম বুদ্ধ।
দুঃখ সংক্রান্ত চতুরার্থ সত্য উপলব্ধির পর মহামতি বুদ্ধ এর প্রতিকারের জন্যে যে দুই ধর্মচক্রের কথা বলেন, তার প্রথম  হলো মধ্যপন্থা অনুসরণ অর্থাৎ, জীবনে অতি সুখ-বিলাস-ব্যসন যেমন পরিত্যাজ্য, তেমনি অতি সংযম ও কৃচ্ছ্রসাধনও অপ্রয়োজনীয়। আর ২য় ধর্মচক্রে আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গে তিনি আটটি সৎ পথের কথা বলেন। আর তা হলো, সৎদৃষ্টি, সৎসংকল্প, সৎবাক্য, সৎকর্ম, সৎজীবিকা, সৎপ্রচেষ্টা, সৎস্মৃতি এবং সৎসমাধি। আর এর যথার্থ উপলব্ধির জন্যে একজন মানুষকে মেডিটেশন বা ধ্যানে আত্মমগ্ন হতে হবে। সংঘবদ্ধভাবে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে অহিংসা ও মানবীয় গুণাবলিতে সমৃদ্ধ হতে হবে। আসলে সকল ধর্মের মূল বাণীই এক। যাতে বলা আছে অন্যের উপকার করার কথা, কর্মফল অর্জনের গুরুত্বের কথা, ভিন্ন মতাবলম্বীর প্রতি সহনশীলতার কথা। মহামতি বুদ্ধ যে সাম্য-মৈত্রীর কথা বলেছেন, তার সাথে যুগে যুগে আগত ধর্মীয় মহামানবদের প্রচারিত শিক্ষার নির্যাস একই।
ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারকে নিশ্চিত করার এ শাশ্বত বাণীকে অনুসরণ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন মানুষের নৈতিক পুনর্জাগরণ ও এক মানবিক মহাসমাজ গঠনে যে ভূমিকা রাখছে, আমি অন্তর থেকে তাকে সাধুবাদ জানাই।
আমি তো মনে করি, পঞ্চাশের দশকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মোতাহার হোসেন, ড. মো. শহীদুল্লাহ এবং ড. জিসি দেবের উদ্যোগে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের যে শুভ উদ্যোগ আমাদের দেশে সূচিত হয়েছিলো ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সে ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ আবারও শুরু হতে পারে। আর সে জন্যে আপানাদের প্রতি রইলো আমার সর্বাঙ্গীণ শুভ কামনা।

মহামান্য শুদ্ধানন্দ মহাথের
মহামান্য শুদ্ধানন্দ মহাথের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৌদ্ধব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ বৌদ্ধকৃষ্টি প্রচার সঙ্ঘের সভাপতি ও ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ।

সৌজন্যেঃ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন

২০৪. ধ্যানের পথেই আমাদের মুক্তি

প্রভু যিশু একবার এক বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। নানা জায়গা থেকে অভ্যাগতদের দ্বারা ঘরটি এত পরিপূর্ণ ছিলো যে, দরজা দিয়ে আর একজনেরও প্রবেশের সুযোগ ছিলো না। এ অবস্থায় এক চলৎশক্তিহীন অবশ রোগীকে নিয়ে হাজির হলো তার বন্ধুরা। তাদের বিশ্বাস ছিলো যে, প্রভু যিশুর কাছে গেলেই সে নিরাময় হয়ে যাবে। কিন্তু ভেতরে প্রবেশের কোনো সুযোগ না পেয়ে তারা হতাশ হচ্ছিলো। অগত্যা এক উপায় অবলম্বন করলো। ঘরের চালার একটা অংশ খুলে তার ভেতর দিয়ে নামিয়ে দিলো দড়িবাঁধা বিছানায় শোয়া সেই অবশ রোগীকে। যিশু তাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তা দেখে বললেন, বাছা! প্রভু তোমাকে ক্ষমা করেছেন। উঠে দাঁড়াও এবং বিছানা হাতে নিয়ে চলে যাও। সবার বিস্মিত দৃষ্টির সামনে লোকটি তা-ই করলো।
আরেকবার সঙ্গীদের নিয়ে যিশু জেরুজালেম ত্যাগ করছেন। জেরিকোর কাছাকাছি পৌঁছে দেখলেন, পথের ওপর এক অন্ধ ভিক্ষুক বসে আছে। বার্টিমোস নামের এই ভিক্ষুক চিৎকার করে বলতে লাগলো, হে যিশু, আমাকে দয়া করুন। তার সঙ্গীরা তাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করলো। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে বার্টিমোস আরো জোরে জোরে যিশুকে ডাকতে লাগলো। যিশু থামলেন। অন্ধ ভিক্ষুকটিকে তার কাছে নিয়ে আসতে বললেন। তিনি বললেন, তুমি কী চাও? বার্টিমোস বললো, আমি আমার দৃষ্টি ফিরে পেতে চাই। যিশু বললেন, তা-ই হবে। তোমার বিশ্বাসই তোমাকে নিরাময় করবে। তৎক্ষণাৎ বার্টিমোস দৃষ্টি ফিরে পেলেন এবং পরিণত হলেন তাঁর অনুসারীতে।
বিশ্বাস ছিলো প্রভু যিশুর প্রথম শিক্ষা। তিনি বিশ্বাস করেছেন এবং বিশ্বাসী হতে বলেছেন। দীক্ষিত হওয়ার পর ৪০ দিন-রাতের উপবাস ব্রতের সময় শয়তানের নানা বিভ্রান্তি-চেষ্টাকে তিনি নস্যাৎ করে দিয়েছেন বিশ্বাসের দৃঢ়তা দিয়ে। প্রথমবার শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলো তার ক্ষুৎপিপাসা কাতরতার সুযোগে। তাকে বললো- হে যিশু, তুমি যদি সত্যই প্রভুর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে থাকো, তাহলে এ পাথরকে বল রুটি হয়ে যেতে। যিশু বলেছিলেন, শুধু দেহের খাবার নয়, ঈশ্বর নিঃসৃত বাণী মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।
দ্বিতীয়বার শয়তান তাকে পৃথিবীর ভূ-ভাগের দৃশ্য দেখিয়ে বললো, আমার আনুগত্য করলে তোমাকে এ সমস্ত রাজ্যের অধিপতি করে দেবো। যিশু বলেছিলেন, আনুগত্য তো কেবল ঈশ্বরেরই প্রাপ্য। উপাসনা তো তাঁরই একাধিপত্য। তৃতীয় এবং শেষবারের মতো শয়তানের ধোঁকাকেও তিনি জয় করেছেন বিশ্বাসের শক্তি দিয়ে।
দ্বিতীয় শিক্ষা হলো প্রত্যাশা। যিশু বলেছেন, যারা ধৈর্যের সাথে সৎকর্ম করে ঈশ্বরের কাছে সুখ-সম্মান ও অনন্ত জীবন প্রত্যাশা করে, ঈশ্বরও তা-ই দেবেন।
আর তৃতীয় হলো মমতা। যিশু বলেন, বিশ্বাস প্রত্যাশা ও মমতা- এ তিনটিই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে। এর মধ্যে মমতাই সবচেয়ে মহৎ। এই মমতা এমনকি শত্রু বা বিরোধিতাকারীর জন্যেও। তিনি বলেন, যে তোমার শত্রুতা করে, তাকে ভালবাসো। যে তোমাকে ঘৃণা করে তার কল্যাণ কর। আর যে তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করে, তার জন্যে প্রার্থনা কর।
সারাজীবন যিশু তা-ই করেছেন। এমনকি ক্রুশবিদ্ধ করার জন্যে যখন সাধারণ কয়েদীদের সাথে তাকেও বেঁধে আনা হচ্ছিলো তখনও তিনি ঈশ্বরের কাছে এ প্রার্থনাই করছিলেন যে, হে প্রভু! তুমি এদের ক্ষমা কর। কারণ এরা জানে না, এরা কী করছে।
উদারতা আর সহিষ্ণুতার এক মূর্ত প্রতীক ছিলেন যিশু। একবার ব্যভিচারের দায়ে এক মহিলাকে শাস্তির জন্যে তার কাছে নিয়ে আসা হলো। যিশু যখন উপলব্ধি করলেন মহিলাটি আন্তরিকভাবে অনুশোচনা করছে, তখন তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কিছু লোকের ব্যাপারে অভিযোগ এলো তারা যিশুর নামে ভূত তাড়ায়, রোগমুক্ত করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন কি না জানতে চাইলে শিষ্যদের তিনি নিরস্ত করে বলেছিলেন, আমি প্রেরিত হয়েছি মানুষের মুক্তির জন্যে। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যে। তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার জন্যে নয়।
অর্থাৎ একজন মানুষ একশটা ভুল করতে পারে। কিন্তু একটা ভালো কাজ তো সে করেছে। এই ভালোর ওপর ভিত্তি করেই আমরা চেষ্টা করি গড়ে তোলার জন্যে। যিশুর আদর্শে এটা হলো আমাদের শিক্ষা এবং নীতি। যেখানে অনৈতিকতা দেখছি, আমরা তা দূর করার জন্যে চেষ্টা করছি।
যিশুর শক্তির উৎস ছিলো তাঁর ধ্যান, তাঁর প্রার্থনা। যে ধ্যানে তিনি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতেন। যে প্রার্থনা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, প্রার্থনায় যা কিছু তোমরা চাও বিশ্বাস করবে তা পেয়েছ, তাহলে তা-ই পাবে। সারাদিন ধরে ভক্ত-শিষ্য-অভ্যাগতদের সাথে সময় কাটানোর পর সন্ধ্যাবেলা খানিকটা নির্জনে গিয়ে তিনি প্রার্থনায় নিমগ্ন হতেন, ভুলে যেতেন সমস্ত ক্ষুধা-ক্লান্তি-অবসাদ। অন্যদেরকেও তিনি বলতেন, অনেক কাজ করেছো, এখন ধ্যান কর। নিজেকে পর্যালোচনা কর, ভুলগুলো খুঁজে বের কর, মনের পর্দায় নিজেকে দাঁড় করাও, জীবন পরিবর্তন কর।
আমি মনে করি, ধ্যান-মেডিটেশন বা রিফ্লেকশন- যে নামেই বলি, ধ্যানের পথেই আমাদের মুক্তি। কারণ ধ্যান আধ্যাত্মিকতার দ্বার উন্মুক্ত করে আর আধ্যাত্মিকতার ফসল হলো শান্তি সমপ্রীতি সমৃদ্ধি। কারণ ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্ট- কোনো ধর্মই সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না, অনৈতিকতাকে সমর্থন করে না, অশান্তিকে সমর্থন করে না।
এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মিশনারীর উদ্যোগে প্রতিবছরই আমরা আয়োজন করি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের। সেখানে ২০০ জন অংশ নিলে ৫০ জন মুসলমান, ৫০ জন হিন্দু, ৫০ জন বৌদ্ধ এবং ৫০ জন খ্রিষ্টান সমবেত হন। অত্যন্ত খোলামেলা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব ঘোচাতে প্রয়াস পান।
কোয়ান্টাম এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সর্ব ধর্ম প্রতিনিধিত্বের সহাবস্থানের যে দৃষ্টান্ত এখানে স্থাপিত হয়েছে তা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এ সংগঠনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক- এটাই কামনা করি।
আর্চবিশপ পৌলিনুস কস্তা
বাংলাদেশে খ্রিষ্টান সমপ্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ঢাকার আর্চবিশপ পৌলিনুস কস্তা।

সৌজন্যেঃ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন

২০৩. ধ্যান সমাধির পথ

শ্রী রামকৃষ্ণের জীবনটাকে আমরা বলতে পারি যে, ধর্মের একটা গবেষণাগার। তিনি ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মসহ বিভিন্ন ধর্মমত অভ্যাস করেছিলেন এবং উপলব্ধি করেছিলেন- ধর্মসমূহের পথ ভিন্ন হলেও সকলেরই উদ্দিষ্ট এক ও অভিন্ন- ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ। তার ভাষায় ‘সকল ধর্মই সত্য, যত মত তত পথ’, অর্থাৎ ধর্মীয় মত ও পথ ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য ও গন্তব্য এক।
ঊনবিংশ শতকের প্রখ্যাত বাঙালি যোগসাধক দার্শনিক ও ধর্মগুরু শ্রী রামকৃষ্ণ। ১৮৩৬ সালে গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বৈষ্ণব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে গদাই নামে পরিচিত। গদাধর তাঁর গ্রামবাসীদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। অঙ্কন ও মাটির প্রতিমা নির্মাণে তাঁর ছিলো সহজাত দক্ষতা। যদিও প্রথাগত শিক্ষায় তাঁর আদৌ মনোযোগ ছিলো না। সে যুগে ব্রাহ্মণ সমাজে প্রচলিত সংস্কৃত শিক্ষাকে তিনি “চালকলা- বাঁধা বিদ্যা” (অর্থাৎ পুরোহিতের জীবিকা উপার্জনী শিক্ষা) বলে উপহাস করেন এবং তা গ্রহণে অস্বীকার করেন। তবে নতুন কিছু শিখতে তাঁর আগ্রহের অন্ত ছিলো না। গানবাজনা, কথকতা ও ধর্মীয় উপাখ্যান অবলম্বনে যাত্রাভিনয়ে তিনি পারদর্শিতা অর্জন করেন। তীর্থযাত্রী সন্ন্যাসী ও গ্রাম্য পুরাণকথকদের কথকতা শুনে অতি অল্প বয়সেই পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন গদাধর।
শ্রী রামকৃষ্ণের স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, ৬/৭ বছর বয়স থেকেই তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিক ভাবতন্ময়তা দেখা দিত। পিতৃবিয়োগের পর তাঁর অগ্রজ রামকুমার পরিবারের ভার গ্রহণ করেন ও পুরোহিতের বৃত্তি গ্রহণ করেন। দাদাকে পৌরোহিত্যে সহায়তা করার মানসে গদাধর কলকাতায় পদার্পণ করেন।
১৮৫৫ সালে কলকাতার নিম্নবর্ণের কৈবর্ত্য সমাজের এক ধনী জমিদারপত্নী রানি রাসমণি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা করলে রামকুমার সে মন্দিরে প্রধান পুরোহিতের পদ গ্রহণ করেন। ১৮৫৬ সালে রামকুমারের মৃত্যু হলে গদাধর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। মন্দিরের উত্তর-পশ্চিম আঙিনায় তাঁকে একটি ছোট ঘর দেয়া হয়। এ ঘরেই তিনি অতিবাহিত করেন তাঁর অবশিষ্ট জীবন।
রামকুমারের মৃত্যুর পর রামকৃষ্ণের ভাবতন্ময়তা বৃদ্ধি পায়। তার ১২ বছরের তপস্যা জীবনে তিনি দুজন গুরুর দীক্ষা লাভ করেন। তারা হলেন ভৈরবী ব্রাহ্মণী ও তোতাপুরী। ভৈরবী তাকে তান্ত্রিক সাধনা সম্পর্কে শিক্ষা দেন এবং তোতাপুরী শিক্ষা দেন বৈদান্তিক সাধনা সম্পর্কে। দীক্ষা লাভের পর তার নাম হয় শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস। একইসঙ্গে রামকৃষ্ণ বৈষ্ণব সাধনায়ও সিদ্ধি লাভ করেন।
তিনি প্রথাগত সন্ন্যাসীদের সাথে একমত ছিলেন না বা তাদের মতো পোশাকও পরতেন না। ব্রাহ্মণের জাত্যাভিমান দূর করার জন্যে তিনি নিম্নবর্ণীয়দের হাতে খাদ্যগ্রহণ, অন্ত্যজ পারিয়াদের (চাকর ও ঝাড়ুদার) সেবা করতে থাকেন।
লোকশিক্ষক হিসেবে রামকৃষ্ণ পরমহংস ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। গ্রামবাংলায় ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে দেয় তাঁর উপদেশাবলি জনমানসে বিস্তার করেছিলো ব্যাপক প্রভাব। ঈশ্বর-উপলব্ধিকেই তিনি মানবজীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য বলে মনে করতেন। শ্রী রামকৃষ্ণের মতে, কাম ও অর্থই মানুষকে ঈশ্বরের পথ হতে বিচ্যুত করে; তাই ‘কাম-কাঞ্চন’ বা ‘কামিনী-কাঞ্চন’ ত্যাগের পথই তাঁর কাছে ছিলো ঈশ্বরের পথ। জগতকে তিনি ‘মায়া’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে জগতের অন্ধকার শক্তি ‘অবিদ্যা-মায়া’ (অর্র্থাৎ কাম ক্রোধ লোভ) মানুষকে বন্ধনে ফেলে আর বিদ্যা-মায়া (অর্থাৎ আধ্যাত্মিক গুণাবলি, জ্ঞান দয়া শুদ্ধতা প্রেম ভক্তি) মানুষকে চৈতন্যের সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যায়।
‘জীবে দয়া নয়, শিবজ্ঞানে জীবসেবা’- তাঁর এ উপদেশ স্বামী বিবেকানন্দের কর্মের পাথেয় হয়েছিলো। শ্রী রামকৃষ্ণ সংগঠিত করেন একদল অনুগামী, যারা ১৮৮৬ সালে তাঁর প্রয়াণের পর সন্ন্যাস গ্রহণ করে তাঁর কাজ চালিয়ে যান। এঁদেরই নেতা ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
১৮৯৩ সালে শিকাগোতে বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় বিবেকানন্দ তাঁর ধর্মীয় চিন্তাধারাকে পাশ্চাত্যের সমক্ষে উপনীত করেন। বিবেকানন্দ যে বিশ্ব মানবতাবাদের বার্তা প্রেরণ করেন তা সর্বত্র সমাদৃত হয় এবং তিনিও সকল সমাজের সমর্থন অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদর্শনের সার্বজনীন সত্য প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেদান্ত সোসাইটি এবং ভারতে রামকৃষ্ণ মিশন।
একাগ্রচিত্তে ঈশ্বরভাবনা বা ধ্যানের মধ্য দিয়েই সমাধির স্তরে যাওয়ার কথা বলেছেন শ্রী রামকৃষ্ণ। তিনি এ-ও বলেছেন- শুধু চোখ বন্ধ করে বসে থাকলেই ধ্যান হয় না যদি না যাবতীয় লোভ-কামনা-বাসনা ও শত্রুভাবনা থেকে মনকে মুক্ত করা না যায়। পুনঃপুনঃ চেষ্টার মধ্য দিয়ে এ অভ্যাস আয়ত্ত করতে হবে। আবার তিনি বলেছেন, খালি পেটে ধর্ম হয় না। চোখ বন্ধ করে ধ্যান করলেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না। স্বামী বিবেকানন্দের ইচ্ছা ছিলো তিনি হিমালয়ে বসে ধ্যান করে করে তার শরীর ত্যাগ করবেন। শুনে শ্রী রামকৃষ্ণ ধমক দিয়েছিলেন, তুই নিজের মুক্তি চাস শুধু, এ-তো স্বার্থপরতা| আর্তের সেবা করলে তা ধ্যানেরই সহায়ক। আত্মমুক্তি ও জগতের কল্যাণসাধন- এ দুধারী আদর্শ বাস্তবায়নের জন্যেই বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণ মিশন। ধ্যান ও অপরের কল্যাণের জন্যে আমাদের সমাজে যে সকল প্রতিষ্ঠান কাজ করছে কোয়ান্টাম তাদের একটি। পাশাপাশি বিবিধ ধর্মের বাণী নিয়ে কণিকা প্রকাশের যে উদ্যোগ কোয়ান্টাম নিয়েছে তা আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার এক চমৎকার পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি ধর্মবাণীর ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও ভাবগত পার্থক্য নেই। আমাদের সবারই লক্ষ্য- দুঃখমুক্তির মধ্য দিয়ে পরমানন্দ লাভ। ফলে আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং নিজস্ব বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। এ কাজে কোয়ান্টাম আরো এগিয়ে যাক, শ্রী ভগবানের কাছে এ প্রার্থনাই করছি।
Wisdom tag: 
স্বামী স্থিরাত্মানন্দজী মহারাজ
রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী স্থিরাত্মানন্দজী মহারাজ

সৌজন্যেঃ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন

২০২. ধ্যান ॥ উচ্চস্তরের ইবাদত

আজকের বিশ্বে মুসলমানদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে, আধুনিক জ্ঞানের সকল শাখায়ই তারা পাশ্চাত্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যারা বর্তমান তথাকথিত ধার্মিক মানুষদের আচরণ দিয়ে ধর্মকে বিচার করেন তারা ভ্রান্তভাবে একেই আমাদের ধর্ম বা মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। অথচ অতীতে ইসলামি সভ্যতা ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সভ্যতার অন্যতম। মুসলিম বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিলো জ্ঞানকেন্দ্র যা মুখরিত থাকতো প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খ্যাতনামা শিক্ষকদের বই আন্তর্জাতিকভাবেই পণ্ডিতদের নিকট গণ্য হতো রেফারেন্সরূপে। আরবি ভাষা জ্ঞানচর্চায় পালন করেছে মৌলিক ভূমিকা। রবার্ট ব্রিফল্ট, জর্জ সার্টন, গুস্তব লি বন এবং উইল ডুরান্ত-এর মতো ঐতিহাসিকগণ এ ব্যাপারে প্রকাশ করেছেন ঐকমত্য।
পিওর সায়েন্স ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বা সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত। তবে এর নেপথ্য দর্শন বা শিক্ষা প্রক্রিয়ার বিষয়টি ভিন্ন। মানব ও সমাজবিজ্ঞান স্বাভাবিকভাবেই মানুষের সাথে সম্পৃক্ত। স্বভাবতই তা তাদের আচরণ বিশ্বাস মূল্যবোধ ও পারস্পরিক সম্পর্ক দ্বারা প্রভাবিত। যদিও কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী দাবি করেন, মানবীয় বিজ্ঞানগুলো আন্তঃসাংস্কৃতিক, কিন্তু বাস্তবে তা মূলত পাশ্চাত্যের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রকাশ।
মুসলিম বিশেষজ্ঞদের অবশ্যই মুক্তমন নিয়ে এ বিজ্ঞানগুলো পর্যালোচনা করা উচিত। প্রয়োজন ইসলামের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্লেষণ করা। এতে নতুন তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া যাবে যা এ বিজ্ঞানগুলোয় বিরাজমান অনেক প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করবে।
সোশ্যাল সায়েন্সের একটি বিশাল ক্ষেত্র হচ্ছে মনোবিজ্ঞান, যাতে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি সংযোজিত হলে অফুরন্ত কল্যাণ সাধিত হতে পারে। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে মানবাত্মা, তার সহজাত সম্ভাবনা ও দৃশ্যমান আচরণ গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সামপ্রতিককালে মুসলিম বিশেষজ্ঞরা এ ক্ষেত্রে বেশকিছু কাজ করেছেন। এ ক্ষেত্রে অগ্রগামীদের একজন হচ্ছেন মিশরীয় বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ ওসমান নাজাতী। যিনি ‘আল কোরআন ওয়া ইলম আন-নাফস’ (আল কোরআন ও মনোবিজ্ঞান) এবং ‘আল হাদীস ওয়া ইলম আন-নাফস’ (আল হাদীস ও মনোবিজ্ঞান) নামে দুটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয়জন অধ্যাপক মালিক বাদ্‌রী, তিনি বিশিষ্ট গবেষক, মনোবিজ্ঞানী ও থেরাপিস্ট। অধ্যাপক বাদ্‌রী প্রচলিত মনোবিজ্ঞানের সাথে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সংযুক্ত করে নতুন এক ধারার সূত্রপাত করেছেন। তিনি ইসলামি আকিদা বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও আমল থেকে সূত্র নিয়ে তা প্রয়োগ করে বিভিন্ন মানসিক রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন। রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেন নি যার নিরাময় নেই। কেউ এই নিরাময় জানে, কেউ জানে না।’ রসুলুল্লাহ (স)-র এ বাণী শারীরিক এবং মানসিক- উভয় রোগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
অধ্যাপক বাদ্‌রী তার বর্তমান গ্রন্থ ‘আল-তাফাক্কুর মিন আল মুশাহাদাহ ইলা আল-শুহুদ’ (Contemplation : An Islamic Psychospiritual Study)-তে আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। বইয়ের আরবি নামকে ইংরেজিতে অনায়াসে বলা যায় Contemplation : from perception to spiritual cognition অর্থাৎ ধ্যান : ইন্দ্রিয়ানুভূতি থেকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পথ। তিনি ধ্যানকে ইন্দ্রিয় উপলব্ধি বা প্রত্যক্ষন (যা সকল গবেষণামূলক বিজ্ঞানের ভিত্তি) থেকে অবধারণ বা পূর্বজ্ঞান বা অন্তর্দৃষ্টির (Cognition) স্তরে উন্নীত করতে চান। রসুলুল্লাহ (স) এই অন্তর্দৃষ্টি বা পূর্বজ্ঞানের কথাই বলেছেন ‘ইহসান’ শব্দের ব্যাখ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘তুমি তাকে দেখতে না পেলেও তিনি তোমাকে দেখছেন- এই জেনে যখন তুমি আল্লাহর ইবাদত কর তখন তা হচ্ছে ইহসান।’
গ্রন্থকার তার গ্রন্থে ধ্যান করা এবং প্রশান্ত মনে সৎচিন্তার আলোকে বিচার করার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনাকে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন। যথার্থই আল কোরআন বলে, ‘আমি একটি বিষয়ে সতর্ক করছি, আল্লাহর সামনে দাঁড়াও একক বা যৌথভাবে এবং চিন্তা কর ....’ (সাবা : ৪৬)। ‘আল্লাহর সামনে দাঁড়াও’ অর্থ এখানে আন্তরিকভাবে সত্যকে অনুসন্ধান করা। ‘একক বা যৌথভাবে’ অর্থ হচ্ছে সামাজিক বা ব্যক্তিগত সংস্কারের প্রভাব বা চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করে চিন্তা বা বিচার বিশ্লেষণ করা।
অধ্যাপক বাদ্‌রী ইবাদতের একটি মাধ্যম হিসেবে ধ্যানের গুরুত্বকে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, এক ঘণ্টার ধ্যান সারা রাত জেগে ইবাদতের চেয়ে উত্তম। অন্যান্য হাদীসবেত্তারা বলেছেন, এক ঘণ্টার ধ্যান সারা বছরের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। আরো সুবিধা হচ্ছে ধ্যানকে বলা যায় বিন্যাস বা আকারহীন ইবাদত যা স্থান বা কাল; দৃশ্যমান বা অদৃশ্য- কোনো কিছু দিয়েই বাধাগ্রস্ত হয় না।
অন্যান্য ধ্যানের সাথে বিশেষত ট্রানসেন্ডেন্টাল মেডিটেশনের সাথে যা পাশ্চাত্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, ইসলামি ধ্যানের পার্থক্যও লেখক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। এক্ষেত্রে তার অভিমত হচ্ছে যে, একজন মুসলমান নিজেকে নিয়ে, স্রষ্টার সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হলে আল্লাহর রহমতে অন্য ধ্যানীদের চেয়ে উচ্চতর উপলব্ধিতে উপনীত হবেন।

Wisdom tag: 
আল্লামা শেখ ড. ইউসুফ আল-কারযাভী
সর্বজনমান্য ইসলামি চিন্তাবিদ। ১৯৭৩ সালে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উসূল আদ-দ্বীন অনুষদ হতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. কারযাভী মিশর সরকারের বোর্ড অব রিলিজিয়াস এফেয়ার্স এর সদস্য, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডীন এবং আলজেরিয়ার বিম্ববিদ্যালয়সমূহের ইসলামিক সায়েন্টিফিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফতোহা এন্ড রিসার্চ এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ পর্যণ্ত তার ৫০ টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ইংরেজি তুর্কি ফারসি উর্দৃ ইন্দোনেশিয়সহ বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় তার বই অনুদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাভাষায় অনূদিত তার বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামে হালাল হারামের বিধান, ইসলামের যাকাত বিধান, ইসলামি শরীয়তের বাস্তবায়ন, ইসলামি পুনর্জাগরণ : সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম ইত্যাদি। আল্লামা কারযাভী আল জাজিরা টেলিভিশনের শরীয়া এন্ড লাইফ সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে সরাসরি কোরআন ও জীবন সম্পর্কিত প্রশ্নোত্ত ও ফতোয়া প্রদান করেন।
সৌজন্যঃ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন

অধ্যায়১ঃ প্রারম্ভিকা (সূরা ফাতিহা)

কৃতজ্ঞতাপূর্ণ যত প্রশংসা
জগতসমূহের প্রভূ-সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালক
পরম দয়া ও স্নেহের আধার
জীবন কালের অধিপতি
একক বিধাতার নিমিত্ত
প্রভূ! আমরা কেবল তোমারই দাসত্ব করি,
তোমারই কাছে সাহায্য চাই।
আমাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করো।
তাদের পথ যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ।
তাদের পথ নয়
যারা অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট।
(নিত্যপাঠ্য, অধ্যায়ঃ১, সূত্রঃ১-৭)

অধ্যায়২ঃ গাভী (৬০-৯৬)

স্মরণ করো,
যখন মূসা তার জাতির জন্য পানির দোয়া করলো,
তখন আমরা বললাম,
অমুক পাথরের ওপর তোমার লাঠিটি মারো।
এর ফলে সেখান থেকে বারোটি ঝর্ণাধারা উৎসারিত হলো।
প্রত্যেক গোত্র তার পানি গ্রহণের স্থান জেনে নিল।
(সে সময় এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, )
উপাস্য প্রদত্ত রিযিক খাও, পান করো
এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।৬০

স্মরণ করো, যখন তোমরা বলেছিলে,
“হে মূসা! একই ধরনের খাবার আমাদের ভালো লাগছে না,
তোমার প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করো
যেন তিনি আমাদের জন্য
শাক-সব্জি, গম, রসুন, পেঁয়াজ, ডাল ইত্যাদি
কৃষিজাত দ্রব্যাদি উৎপন্ন করেন।”
তখন মূসা বলেছিল,
“তোমরা কি একটি উৎকৃষ্ট জিনিসের পরিবর্তে
নিকৃষ্ট জিনিস নিতে চাও? 
তাহলে তোমরা কোন নগরে গিয়ে বসবাস করো,
তোমরা যা কিছু চাও সেখানে পেয়ে যাবে।”
অবশেষে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছলো
যার ফলে লাঞ্ছনা, অধঃপতন, দুরবস্থা ও অনটন
তাদের ওপর চেপে বসলো
এবং উপাস্যের ক্রোধ তাদেরকে ঘিরে ফেললো।
এ ছিল তাদের উপাস্যের বানীসমূহ অস্বীকার করার 
এবং সে বানী প্রচারকদের অন্যায়ভাবে হত্যা করার ফল।
আর এটি ছিল তাদের অবাধ্যতা ও সীমালংঘনের ফল।৬১

নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো,
যারা তোমার প্রতি বিশ্বাস রাখে কিংবা ইহুদি, খৃষ্টান বা সাবি
তাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই
একাকার উপাস্য ও শেষ সময়ের প্রতি বিশ্বাস রেখে
ভাল কাজ করতে থাকে,
তাদের কাজের প্রতিদান থাকে তাদের প্রভূর কাছে।
আর তাদের উপর কোন ভয় আপতিত হয় না
 এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হয় না।৬২

স্মরণ করো সেই সময়ের কথা
যখন আমরা ‘তূর’কে তোমাদের ওপর উঠিয়ে
তোমাদের থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলাম
এবং বলেছিলামঃ “যে উপদেশমালা আমরা তোমাদেরকে দিচ্ছি
তাকে সুদৃড়ভাবে আঁকড়ে ধরো
এবং এতে যা আছে তা স্মরণ রেখো।
তাহলে আশা করা যায় যে,
তোমরা সচেতন মানুষ হতে পারবে।”৬৩

কিন্তু এরপর তোমরা নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে।
তবুও উপাস্যের অনুগ্রহ ও তাঁর করুণা
তোমাদের সঙ্গ ছাড়েনি
নয়তো তোমরা কবেই ধ্বংস হয়ে যেতে।৬৪

নিজেদের জাতির সেইসব লোকের ঘটনা তো
তোমাদের জানাই আছে
যারা শনিবারের বিধান ভেঙেছিল।
আমরা তাদের বলে দিলামঃ বানর হয়ে যাও
এবং এমনভাবে অবস্থান করো
যাতে তোমাদের সবদিক থেকে লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে হয়।৬৫


এভাবে আমরা তাদের পরিণতিকে সমকালীন লোকদের
ও পরবর্তী বংশধরদের জন্য শিক্ষণীয়
এবং যারা সচেতন মানুষ তাদের জন্য 
মহান উপদেশে পরিণত করেছি।৬৬

এরপর স্মরণ করো সেই ঘটনার কথা
যখন মূসা তার জাতিকে বললো,
আল্লাহ‌ তোমাদের একটি গাভী যবেহ করা হুকুম দিচ্ছেন।
তারা বললো, তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো?
মূসা বললো, নিরেট মূর্খদের মতো কথা বলা থেকে
আমি আল্লাহ‌ কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।৬৭

তারা বললো, আচ্ছা তাহলে তোমার প্রভূর কাছে আবেদন করো
তিনি যেন সেই গাভীর কিছু বিস্তারিত বিবরণ আমাদের জানিয়ে দেন।
মূসা জবাব দিল, আল্লাহ‌ বলছেন,
সেটি অবশ্যি এমন একটি গাভী হতে হবে
যে বৃদ্ধা নয়, একেবারে ছোট্ট বাছুরটিও নয়
বরং হবে মাঝারি বয়সের।
কাজেই যেমনটি হুকুম দেয়া হয় ঠিক তেমনটিই করো।৬৮

আবার তারা বলতে লাগলো,
তোমার রবের কাছে আরো জিজ্ঞেস করো,
তার রংটি কেমন?
মূসা জবাব দিল, তিনি বলছেন,
গাভীটি অবশ্যি হলুদ রংয়ের হতে হবে,
তার রং এতই উজ্জল হবে
যাতে তা দেখে মানুষের মন ভরে যাবে।৬৯

আবার তারা বললো,
তোমার প্রভূর কাছ থেকে এবার পরিষ্কার ভাবে জেনে নাও,
তিনি কেমন ধরনের গাভী চান?
গাভীটি নির্ধারণ করার ব্যাপারে আমরা সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছি।
আল্লাহ‌ চাইলে আমরা অবশ্যি এটি বের করে ফেলবো।৭০

মূসা জবাব দিল আল্লাহ‌ বলছেন,
সেটি এমন একটি গাভী যাকে কোন কাজে নিযুক্ত করা হয়না,
জমি চাষ বা ক্ষেতে পানি সেচ কোনটিই করে না,
সুস্থ-সবল ও নিখুঁত।
একথায় তারা বলে উঠলো,
হ্যাঁ,, এবার তুমি ঠিক সন্ধান দিয়েছো।
অতঃপর তারা তাকে যবেহ করলো,
অন্যথায় তারা এমনটি করতো বলে মনে হচ্ছিল না।৭১

আর স্মরণ করো সেই ঘটনার কথা
যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে
এবং একজন আর একজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিয়োগ আনছিলে।
আর আল্লাহ‌ সিদ্ধান্ত করেছিলেন
তোমরা যা কিছু গোপন করছো তা তিনি প্রকাশ করে দেবেন।৭২

সে সময় আমরা আদেশ দিলাম,
নিহতের লাশকে তার একটি অংশ দিয়ে আঘাত করো।
দেখো এভাবে আল্লাহ‌ মৃতদের জীবন দান করেন
এবং তোমাদেরকে নিজের নিশানী দেখান,
যাতে তোমরা (সত্য) অনুধাবন করতে পারো।৭৩

কিন্তু এ ধরনের নিশানী দেখার পরও
তোমাদের দিল কঠিন হয়ে গেছে,
পাথরের মত কঠিন বরং তার চেয়েও কঠিন।
কারণ এমন অনেক পাথর আছে
যার মধ্য দিয়ে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়
আবার অনেক পাথর ফেটে গেলে
তার মধ্য থেকে পানি বের হয়ে আসে,
আবার কোন কোন পাথর
আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পড়েও যায়।
আল্লাহ‌ তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে বেখবর নন।৭৪

তোমরা কি তাদের থেকে আশা করো
তারা তোমাদের আহবানে বিশ্বাসী হবে? 
অথচ তাদের একটি দলের চিরাচরিত রীতি
এই চলে আসছে যে,
আল্লাহর কালাম শুনার পর
খুব ভালো করে জেনে বুঝে সজ্ঞানে
তার মধ্যে বিকৃতি সাধন করেছে।৭৫

 যারা বিশ্বাসী তাদের সাথে সাক্ষাত হলে তারা বলে,
আমরাও বিশ্বাস স্থাপন করেছি।
আবার যখন পরস্পরের সাথে নিরিবিলিতে কথা হয়
তখন বলে, তোমরা কি বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে গেলে?
এদেরকে তোমরা এমন সব কথা বলে দিচ্ছো
যা আল্লাহ‌ তোমাদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন,
ফলে এরা তোমাদের প্রভূর কাছে তোমাদের মোকাবিলায়
তোমাদের একথাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করবে?৭৬

এরা কি জানে না,
যা কিছু এরা গোপন করছে
এবং যা কিছু প্রকাশ করছে সমস্তই আল্লাহ‌ জানেন?৭৭

এদের মধ্যে দ্বিতীয় একটি দল হচ্ছে নিরক্ষরদের।
তাদের আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান নেই,
নিজেদের ভিত্তিহীন আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো নিয়ে বসে আছে
এবং নিছক অনুমান ও ধারণার ওপর নির্ভর করে চলছে।৭৮

কাজেই তাদের জন্য ধ্বংস অবধারিত
যারা নিজেরা শরীয়াত রচনা করে
তারপর লোকদের বলে
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।
এভাবে তারা এর বিনিময়ে সামান্য স্বার্থ লাভ করে। 
তাদের এই রচনা তাদের ধ্বংসের কারণ
এবং তাদের এই উপার্জনও তাদের ধ্বংসের উপকরণ।৭৯

তারা বলে, আগুন আমাদের কখনো স্পর্শ করবে না,
তবে কয়েক দিনের শাস্তি হলেও হয়ে যেতে পারে।
এদেরকে জিজ্ঞেস করো,
তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার নিয়েছো,
যার বিরুদ্ধাচারণ তিনি করতে পারেন না?
অথবা তোমরা আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দিয়ে
এমন কথা বলছো
যে কথা তিনি নিজের ওপর চাপিয়ে নিয়েছেন বলে
তোমাদের জানা নেই?
আচ্ছা জাহান্নামের আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে না কেন?৮০
যে ব্যক্তিই পাপ করবে
এবং পাপের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়বে
সে-ই হবে নরকের বাসিন্দা এবং সেখানে থাকবে চিরকাল।৮১

আর যারা (এই গ্রন্থ) মেনে চলবে
এবং সৎকাজ করবে
তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী,
সেখানে থাকবে তারা চিরকাল।৮২

স্মরণ করো যখন ইসরাঈল সন্তানদের থেকে
আমরা এই মর্মে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে,
আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারোর দাসত্ব করবে না,
মা-বাপ, আত্মীয়-পরিজন, ইয়াতিম ও মিসকিনদের সাথে
ভালো ব্যবহার করবে,
লোকদেরকে ভালো কথা বলবে,
প্রার্থনা প্রতিষ্ঠা করবে
ও পরিশুদ্ধির জন্য দান করবে।
কিন্তু সামান্য কয়েকজন ছাড়া
তোমরা সবাই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছিলে
এবং এখনো ভেঙে চলছো।৮৩

আবার স্মরণ করো,
যখন আমরা তোমাদের থেকে
মজবুত অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এই মর্মে যে,
তোমরা পরস্পর রক্তপাত করবে না
এবং একে অন্যকে গৃহ থেকে উচ্ছেদ করবে না।
তোমরা এর অঙ্গীকার করেছিলে, তোমরা নিজেরাই এর সাক্ষী।৮৪

কিন্তু আজ সেই তোমরাই
নিজেদের ভাই-বেরাদারদেরকে হত্যা করছো,
নিজেদের গোত্রীয় সম্পর্কযুক্ত কিছু লোককে
বাস্তভিটা ছাড়া করছো,
যুলুম ও অত্যধিক বাড়াবাড়ি সহকারে
তাদের বিরুদ্ধে দল গঠন করছো
এবং তারা যুদ্ধবন্দী হয়ে তোমাদের কাছে এলে
তাদের মুক্তির জন্য তোমরা মুক্তিপণ আদায় করছো।
অথচ তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে উচ্ছেদ করাই
তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল।
তাহলে কি তোমরা
আল্লাহর কিতাবের একটি অংশকে মানছ
এবং অন্য অংশকে অস্বীকার করছো? 
তারপর তোমাদের মধ্য থেকে যারাই এমনটি করবে
তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হতে পারে যে,
দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত ও পর্যুদস্ত হবে
এবং পরকালে তাদেরকে
কঠিনতম শাস্তির দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে?
তোমাদের কর্মকান্ড থেকে আল্লাহ‌ বেখবর নন।৮৫

এই লোকেরাই পরকালের বিনিময়ে
দুনিয়ার জীবন কিনে নিয়েছে।
কাজেই তাদের শাস্তি কমানো হবে না
এবং তারা কোন সাহায্যও পাবে না।৮৬

আমরা মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছি।
তারপর ক্রমাগতভাবে বার্তাবাহক পাঠিয়েছি।
অবশেষে ঈসা ইবনে মারয়ামকে পাঠিয়েছি
উজ্জ্বল নিশানী দিয়ে
এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেছি। 
এরপর তোমরা এ কেমনতর আচরণ করে চলছো,
যখনই কোন বার্তাবাহক
তোমাদের প্রবৃত্তির কামনা বিরোধী
কোন জিনিস নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে
তখনই তোমরা তার বিরুদ্ধাচরণ করেছো,
কাউকে মিথ্যা বলেছো এবং কাউকে হত্যা করেছো।৮৭

তারা বলে, আমাদের হৃদয় সুরক্ষিত।
না, আসলে তাদের অস্বীকৃতির কারণে
তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে,
তাই তারা খুব কমই বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে।৮৮

আর এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে
তাদের কাছে যে একটি গ্রন্থ এসেছে
তার সাথে তারা কেমন ব্যবহার করছে?
তাদের কাছে আগে থেকেই যে গ্রন্থটি ছিল
যদিও এটি তার সত্যতা স্বীকার করতো
এবং যদিও এর আগমনের পূর্বে
তারা নিজেরাই অবিশ্বাসীদের মোকাবিলায়
বিজয় ও সাহায্যের দোয়া চাইতো,
তবুও যখন সেই জিনিসটি এসে গেছে
এবং তাকে তারা চিনতেও পেরেছে
তখন তাকে মেনে নিতে তারা অস্বীকার করেছে। 
এই অস্বীকারকারীদের ওপর আল্লাহর অভিশম্পাত ।৮৯

যে জিনিসের সাহায্যে তারা মনের সান্ত্বনা লাভ করে,
তা কতই না নিকৃষ্ট! 
সেটি হচ্ছে, আল্লাহ‌ যে পথনির্দেশনা অবতীর্ন করেছেন
তারা কেবল এই জিদের বশবর্তী হয়ে
তাকে মেনে নিতে অস্বীকার করছে যে,
আল্লাহ‌ তাঁর যে দাসকে চেয়েছেন
নিজের অনুগ্রহ (অহী ও রিসালাত) দান করেছেন। 
কাজেই এখন তারা উপর্যুপরি অভিশপ্ত হয়েছে।
আর এই ধরনের অস্বীকারকারীদের জন্য
চরম লাঞ্ছনার শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।৯০

যখন তাদেরকে বলা হয়,
আল্লাহ‌ যা অবতীর্ন করেছেন তার প্রতি বিশ্বাসী হও,
তারা বলে, “আমরা কেবল আমাদের এখানে (অর্থাৎ তাওরাত)
যা কিছু অবতীর্ন হয়েছে তার প্রতি বিশ্বাসী।”
এর বাইরে যা কিছু এসেছে
তার প্রতি বিশ্বাসী হতে তারা অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
অথচ তা সত্য
এবং তাদের কাছে পূর্ব থেকে যে শিক্ষা ছিল
তার সত্যতার স্বীকৃতিও দিচ্ছে।
তাদেরকে বলে দাওঃ
যদি তোমরা তোমাদের ওখানে যে শিক্ষা অবতীর্ন হয়েছিল
তার প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো,
তাহলে ইতিপূর্বে আল্লাহর বার্তাপ্রচারকদেরকে হত্যা করেছিলে কেন?৯১

তোমাদের কাছে মূসা এসেছিল
কেমন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে।
তারপরও তোমরা এমনি যালেম হয়ে গিয়েছিলে যে,
সে একটু আড়াল হতেই তোমরা বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে বসেছিলে।৯২

তারপর সেই অঙ্গীকারের কথাটাও একবার স্মরণ করো,
যা আমি তোমাদের থেকে নিয়েছিলাম
তূর পাহাড়কে তোমাদের ওপর তুলে ধরে।
আমি জোর দিয়েছিলাম,
যে পথনির্দেশ আমি তোমাদেরকে দিচ্ছি,
দৃঢ়ভাবে তা মেনে চলো
এবং মন দিয়ে শুনো।
তোমাদের পূর্বসূরীরা বলেছিল, আমরা শুনেছি কিন্তু মানবো না।
তাদের বাতিল প্রিয়তা ও অন্যায় প্রবণতার কারণে
তাদের হৃদয় প্রদেশে বাছুরই অবস্থান গেড়ে বসেছে।
যদি তোমরা বিশ্বাসী হয়ে থাকো,
তাহলে এ কেমন বিশ্বাস,
যা তোমাদেরকে এহেন খারাপ কাজের নির্দেশ দেয়?৯৩

তাদেরকে বলো,
যদি সত্যি সত্যিই আল্লাহ‌ সমগ্র মানবতাকে বাদ দিয়ে
একমাত্র তোমাদের জন্য আখেরাতের ঘর নির্দিষ্ট করে থাকেন,
তাহলে তো তোমাদের মৃত্যু কামনা করা উচিত 
যদি তোমাদের এই ধারণায় তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।৯৪

নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো,
তারা কখনো এটা কামনা করবে না।
কারণ তারা স্বহস্তে যা কিছু উপার্জন করে সেখানে পাঠিয়েছে
তার স্বাভাবিক দাবী এটিই
(অর্থাৎ তারা সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে না) ।
আল্লাহ‌ ঐ সব যালেমদের অবস্থা ভালোভাবেই জানেন।৯৫

বেঁচে থাকার ব্যাপারে তোমরা তাদেরকে পাবে
মানুষের মধ্যে সবচেয়ে লোভী।
এমনকি এ ব্যাপারে তারা মুশরিকদের চাইতেও এগিয়ে রয়েছে।
এদের প্রত্যেকে চায়
কোনক্রমে সে যেন হাজার বছর বাঁচতে পারে।
অথচ দীর্ঘ জীবন কোন অবস্থায়ই তাকে
শাস্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না।

যে ধরনের কাজ এরা করছে আল্লাহ‌ তার সবই দেখছেন।৯৬