Wednesday, May 28, 2014

১৮১.৩. প্রার্থনা

প্রার্থনা আল্লাহর সাথে সম্পর্কের মাধ্যম, প্রার্থনায় দাঁড়াবার নিয়মঃ
তোমাদের প্রার্থনাসমূহের ব্যাপারে যত্নশীল হও যাতে তা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরীর মাধ্যম হয়। আল্লাহর সামনে এমনভাবে দাঁড়াও যেমন অনুগত সেবকরা দাঁড়ায়। সূরা আল বাকারাহ/২৩৮

অজু, গোসল ও তায়াম্মুমঃ 
হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা প্রার্থনার জন্য তৈরী হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, মাথার ওপর হাত বুলাও এবং পা দু’টিও গোড়ালী পর্যন্ত। যদি তোমরা ‘স্ত্রী-সহবাস’ পরবর্তী অবস্থায় থাকো, তাহলে পবিত্র হয়ে নাও। যদি তোমরা রোগগ্রস্ত হও বা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে বা তোমরা নারীদেরকে স্পর্শ করে থাকো এবং পানি না পাও, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তার ওপর হাত রেখে নিজের চেহারা ও হাতের ওপর মুছে নাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে, হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞ হবে। সূরা আল মায়েদাহ-৬।
কিয়াম, সেজদা, সমবেত প্রার্থনা, প্রার্থনার নির্ধারিত সময়ে করা আবশ্যকঃ
যখন তুমি মুসলমানদের মধ্যে থাকো এবং (যুদ্ধাবস্থায়) তাদেরকে নিয়ে প্রার্থনার জন্য দাঁড়াও তখন তাদের মধ্য থেকে একটি দলের তোমার সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত এবং তারা অস্ত্রসস্ত্র সঙ্গে নেবে। তারপর তারা সিজদা করে নিলে পেছনে চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দলটি, যারা এখনো প্রার্থনা করেনি, তারা এসে তোমার সাথে প্রার্থনায় শামিল হবে। আর তারাও সতর্ক থাকবে এবং নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র বহন করবে। কারণ অবিশ্বাসীরা সুযোগের অপেক্ষায় আছে, তোমরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ও জিনিস পত্রের দিক থেকে সামান্য দৃষ্টি ফেরালেই তারা তোমাদের ওপর অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়বে। তবে যদি তোমরা বৃষ্টির কারণে কষ্ট অনুভব করো অথবা অসুস্থ থাকো, তাহলে অস্ত্র রেখে দিলে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু তবুও সতর্ক থাকো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ‌ অবিশ্বাসীদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তারপর তোমরা প্রার্থনা শেষ করার পর দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো। আর মানসিক প্রশান্তি লাভ করার পর যথাযথভাবে প্রার্থনা করো। আসলে নির্ধারিত সময়ে প্রার্থনা করা বিশ্বাসীগণের জন্য আবশ্যক করা হয়েছে। সূরা নিসা/১০২-১০৩।
 প্রার্থনায় আওয়াজ মাঝামাঝি রাখাঃ
এদেরকে বলে দাও, আল্লাহ‌ বা দয়াময় যে নামেই ডাকো না কেন, তাঁর জন্য সবই ভাল নাম। আর নিজের প্রার্থনা খুব বেশী উচ্চ কণ্ঠেও করবে না, বেশী ক্ষীণ কণ্ঠেও না, বরং এ দু’য়ের মাঝামাঝি মধ্যম পর্যায়ের কণ্ঠস্বর অবলম্বন করবে। সূরা বনী ইসরাঈল-১১০।


প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করছি তা অবশ্যই বুঝে শুনে করতে হবেঃ
 হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রার্থনার কাছেও যেও না। প্রার্থনা সেই সময় করা উচিত যখন তোমরা যা বলছো তা জানতে পারো। অনুরূপভাবে অপবিত্র অবস্থায়ও  তা ধৌত না করা পর্যন্ত প্রার্থনার কাছে যেয়ো না। তবে যদি পথ অতিক্রমকারী হও, তাহলে অবশ্যি স্বতন্ত্র কথা। আর যদি কখনো তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো, সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ মলমূত্র ত্যাগ করে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ করে থাকো এবং এরপর পানি না পাও, তাহলে পাক–পবিত্র মাটির সাহায্য গ্রহণ করো এবং তা নিজেদের চেহারা ও হাতের ওপর বুলাও। নিঃসন্দেহে আল্লাহ‌ কোমলতা অবলম্বনকারী ও ক্ষমাশীল। সূরা নিসা/৪৩।

প্রার্থনায় বিনয়ী থাকাঃ
যারা নিজেদের প্রার্থনায় বিনীত থাকে। সূরা আল মুমিনুন/২।

প্রার্থনায় যা বলতে হবেঃ
﴿ وَقُل رَّبِّ اَدۡخِلۡنِىۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّاَخۡرِجۡنِىۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّاجۡعَل لِّىۡ مِنۡ لَّدُنۡكَ سُلۡطٰنًا نَّصِيۡرًا‏﴾



আর বলো, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে যেখানেই তুমি নিয়ে যাও সত্যতার সাথে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকেই বের করো সত্যতার সাথে বের করো। এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও।
﴿ وَقُلۡ جَآءَ الۡحَقُّ وَزَهَقَ الۡبَاطِلُ‌ؕ اِنَّ الۡبَاطِلَ كَانَ زَهُوۡقًا﴾

আর ঘোষণা করে দাও, “সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, মিথ্যার তো বিলুপ্ত হবারই কথা।” সূরা বনী ইসরাঈল/৮০-৮১।


﴿ وَقُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِىۡ لَمۡ يَتَّخِذۡ وَلَدًا وَّلَمۡ يَكُنۡ لَّهٗ شَرِيۡكٌ فِىۡ الۡمُلۡكِ وَلَمۡ يَكُنۡ لَّهٗ وَلِىٌّ مِّنَ الذُّلِّ‌ؕ وَكَبِّرۡهُ تَكۡبِيۡرًا‏﴾


আর বলো, সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি কোন পুত্রও গ্রহণ করেননি। তাঁর বাদশাহীতে কেউ শরীকও হয়নি এবং তিনি এমন অক্ষমও নন যে, কেউ তাঁর সাহায্যকারী ও নির্ভর হবে। আর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করো, চূড়ান্ত পর্যায়ের শ্রেষ্ঠত্ব। সূরা বনী ইসরাঈল/১১১।
 
প্রার্থনার সময়ঃ
(জীবনের সকল স্তরে) প্রার্থনা প্রতিষ্ঠিত করো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে নিয়ে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং ফজরে কুরআন পড়ারও ব্যবস্থা করো। কারণ ফজরের কুরআন পাঠ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।  আর একে (কোরআন) নিয়ে রাত্রি জাগরণ কর। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। অচিরেই তোমার রব তোমাকে “প্রশংসিত স্থানে” প্রতিষ্ঠিত করবেন। সূরা বনী ইসরাঈল/৭৮-৭৯।

প্রার্থনা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে শুধু আল্লাহর স্মরনের জন্যঃ
আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, কাজেই তুমি আমার গোলামী করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য (জীবনের সকল স্তরে) প্রার্থনা প্রতিষ্ঠিত করো। সূরা ত্বহা/১৪।

১৮০. জামাতে নামাজ (সমবেত প্রার্থনা)

(জীবনের সকল স্তরে) প্রার্থনা প্রতিষ্ঠিত করো, পরিশুদ্ধির জন্য দান করো এবং যারা আমার সামনে অবনত হচ্ছে তাদের সাথে তোমরাও অবনত হও। 
সূরা আল বাকারাহ/৪৩।
জামাতে নামাজ ফরজ হওয়ার প্রমান হিসেবে এই আয়াতটিকে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু একই রকম আদেশ আল্লাহ মারয়াম (আঃ) কে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন,
হে মারয়াম! তোমার রবের আদেশের অনুগত হয়ে থাকো। তাঁর সামনে সিজদাবনত হও এবং যেসব বান্দা তাঁর সামনে অবনত হয় তুমিও তাদের সাথে অবনত হও।” 
সূরা আলে ইমরান/৪৩।

১৭৯. যাকাত কত পার্সেন্ট???


হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা সাধারণ নারীদের মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে অসন্তুষ্টিকে ভয় করে থাকো, তাহলে মিহি স্বরে কথা বলো না, যাতে মনের গলদে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি প্রলুব্ধ হয়ে পড়ে, বরং পরিষ্কার সোজা ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলো। নিজেদের গৃহ মধ্যে অবস্থান করো। এবং পূর্বের জাহেলী যুগের মতো সাজসজ্জা দেখিয়ে বেড়িও না। (জীবনের সকল স্তরে) প্রার্থনা প্রতিষ্ঠিত করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। আল্লাহ‌ তো চান, তোমাদের নবী পরিবার থেকে ময়লা দূর করতে এবং তোমাদের পুরোপুরি পাক-পবিত্র করে দিতে। সূরা আল আহযাব/৩২-৩৩।
আল্লাহ নবীর স্ত্রীগণকে যাকাত দেয়ার নির্দেশ দিলেন এই আয়াতে। আল্লাহ কি জানতেন না নবীর ঘরে কোনো ধন-সম্পদ জমা থাকে না? (নাউজুবিল্লাহ)। যাকাত বলতে যদি সেই ২.৫% দেওয়া বুঝায় তাহলেতো এই আয়াত মিলে না। আসলে যাকাত দেওয়া বলতে আল্লাহ কি বুঝাতে চেয়েছেন? এখানে বলা হয়েছে 'আতিনা আয যাকাত'। 'আতিনা' শব্দের অর্থ তোমরা দাও। 'আয যাকাত' শব্দের অর্থ পবিত্রতা, পরিশুদ্ধি, বৃদ্ধিকরন। তাহলে অর্থ দাঁড়ায় তোমরা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য দান করো। যখন যতটুকু সাধ্য থাকে ততটুকুই দান করো। আল্লাহ বলেন,
"তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছেঃ আমরা আল্লাহর পথে কি ব্যয় করবো? বলে দাওঃ যা কিছু তোমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়।" সূরা বাকারা/২২০।
দানের ব্যাপারে ভারসাম্য রক্ষা করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,  
"নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে।" সূরা বনী ইসরাঈল/২৯।

যাকাতের খাতগুলো হচ্ছে,
এ সাদকা গুলো তো আসলে ফকীর, মিসকীনদের জন্য। আর যারা সাদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং যাদের জন্য মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য। তাছাড়া দাস মুক্ত করার, ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করার, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের উপকারে ব্যয় করার জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষে থেকে একটি বিধান এবং আল্লাহর সবকিছু জানেন, তিনি বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ। সূরা আত তওবা/৬০।
(এগুলো আমার নিজের বুঝ। কোরআন পড়ে আমি যা বুঝেছি তাই লিখলাম। দয়া করে কেউ বিতর্ক করবেন না।)