Friday, October 3, 2014

১৮৭. সত্য কখনো গোপন থাকে না

রাসূলের নামে কুরআন সমর্থিত প্রচলিত হাদিসগুলো দীন
ইসলামের ধারক, বাহক ও প্রচারকগণ মানেন কী?

১. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে রাসূলকে যে জন্য পাঠানো হয়েছিল
কুরআনে দেখুন, ‘রাসূল এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহ্র নির্দেশ অনুসারে তাঁর (আল্লাহ্র) আনুগত্য করা হবে;-৪:৬৪। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর;-৫:৬৭।’ [নিচের হাদিসগুলো পড়লে মনে হবে রাসূল কুরআন প্রচার করতে এসেছিলেন। রাসূল নিজ ভাষায় বলেছেন যা কুরআন বিরোধী নয়।]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘আমার (রাসূলের) কালাম আল্লাহ্র কালামকে রহিত করে না; বরং আল্লাহ্র কালাম আমার (রাসূলের) কালামকে রহিত (বাতিল) করে। এ ছাড়া আল্লাহ্র এক কালাম তাঁর অপর কালামকে রহিত করে (দারাকুতনী);-মেশকাত-১/১৮৫। [কুরআনের এক আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আরেকটি আয়াত। কুরআন বিরোধী হাদিস পরিতাজ্য নয় কী?]
২. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে সকল সমস্যার সমাধান আছে কুরআনে
কুরআনে দেখুন, ‘কিতাবে কিছুই আমি বাদ দেইনি;-৬:৩৮। আকাশম-লী ও পৃথিবীর অণু পরিমাণও তোমার রবের অগোচর নয় এবং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহত্তর কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই;-১০:৬১। সুস্পষ্ট কিতাবে সব কিছুই আছে;-১১:৬। আকাশে ও পৃথিবীতে এমন কোন গোপন রহস্য নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই;-২৭:৭৫। আমি তো মানুষের জন্য এ কুরআনে সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত দিয়েছি;-১৭:৮৯; ১৮:৫৪; ৩৯:২৭। আকাশম-লী ও পৃথিবীতে তাঁর অগোচর নয় অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহৎ কিছু; এর প্রত্যেকটি আছে সুস্পষ্ট কিতাবে;-৩৪:৩। [দীনের সকল বিষয়ই কুরআনে থাকলে দীন ইসলামকে বোঝার জন্য অন্য গ্রন্থের প্রয়োজন আছে কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন সালাত হলো নূর। সদ্কা হলো দলীল। .... কুরআন হলো তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ (মুসলিম ও দারেমী);-মেশ্কাত-২/২৬২। কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে কুরআন এবং তার পাঠকদের যারা কুরআন অনুযায়ী আমল করত (মুসলিম);-মেশকাত-৫/২০১৯। শীঘ্রই দুনিয়াতে ফ্যাসাদ আরম্ভ হবে। তা হতে বাঁচার উপায় আল্লাহ্র কিতাব, তাতে তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের খবর রয়েছে এবং তোমাদের মধ্যকার বিতর্কের মীমাংসা। এ সত্য মিথ্যার প্রভেদকারী এবং নিরর্থক নয়। যে অহংকারী তাকে ত্যাগ করবে আল্লাহ্ তার অহংকার চূর্ণ করবেন; যে এর বাইরে হেদায়াত তালাশ করবে আল্লাহ্ তাকে গোমরাহ্ করবেন। এ হলো আল্লাহ্র মজবুত রজ্জু, প্রজ্ঞাময় যিকির এবং সত্য সরল পথ। এর অবলম্বনে বিপথগামী হয় না প্রবৃত্তি, কষ্ট হয় না তাতে জবানের। বিতৃষ্ণ হয় না তা হতে জ্ঞানীগণ। পুরাতন হয় না তা বারবার পাঠে। অন্ত নেই তার বিস্ময়কর তথ্য সমূহের। তা শুনে স্থির থাকতে পারেনি জিনরা এমন কি বলে উঠেছে তারা; ‘শুনেছি আমরা এমন এক বিস্ময়কর কুরআন, যা সন্ধান দেয় সৎপথের। অতএব, ঈমান এনেছি আমরা তার ওপর।যে তা বলে - সত্য বলে, যে তার সাথে আমল করে - পুরস্কার প্রাপ্ত হয়, যে তার সাথে বিচার করে - ন্যায় করে এবং যে তার দিকে ডাকে - সত্য সরল পথের দিকে ডাকে (তিরমিযি ও দারেমী);-মেশ্কাত-৫/২০৩৫। [কুরআনই দীনের একমাত্র দলিল নয় কী?]
৩. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে কুরআন অনুসরণে ভয় নেই, দুঃখিত হবে না
কুরআনে দেখুন, ‘যখন আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসবে তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না;-২:৩৮। হে বনী আদম! যদি তোমাদের মধ্য হতে কোন রাসূল তোমাদের নিকট এসে আমার আয়াত বিবৃত করে তখন যারা সাবধান হবে এবং নিজেদের সংশোধন করবে, তা হলে তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না;-৭:৩৫। আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না;-২০:১২৩। [দুনিয়া ও আখিরাতে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি লাভের জন্য কুরআন ব্যতীত কোন অন্য গ্রন্থ অনুসরণের প্রয়োজন আছে কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন. যে আল্লাহ্র কিতাব শিক্ষা করেছে, অতঃপর তাতে যা আছে তার অনুসরণ করেছে, আল্লাহ্ তাকে দুনিয়াতে গোমরাহী হতে বাঁচিয়ে রাখবেন এবং আখিরাতে তাকে হিসেবের কষ্ট হতে রক্ষা করবেন।অপর রেওয়াতে আছেÑ তিনি বলেন, ‘যে আল্লাহ্র কিতাবের অনুসরণ করবে সে দুনিয়াতে গোমরাহ হবে না এবং আখিরাতে হতভাগ্য হবে না। অতঃপর তিনি প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করেন,.... অর্থাৎ যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করে সে গোমরাহ হবে না এবং হতভাগ্য হবে না (রযীন);-মেশকাত-১/১৮১। [কুরআনের অনুসরণ করলে কেউ হতভাগ্য হতে পারে কী?]
৪. কুরআন ও হাদিসে মধু শরীরের এবং কুরআন মনো রোগের নিবারক
কুরআনে দেখুন, মধু সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, ‘তোমার রব মৌমাছিকে  তার  অন্তরে  ইংগিত  দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে; ‘এর পর প্রত্যেক ফুল হতে কিছু কিছু আহার কর, অতঃপর তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ কর।তার উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়; যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য;-১৬:৬৮-৬৯।

কুরআনে দেখুন, কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের নিকট হতে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরগ্য এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত;-১০:৫৭। আমি অবতীর্ণ করি কুরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে;-১৭:৮২। [অন্তরের রোগ সবচেয়ে বড় রোগ। অন্তরের কুমন্ত্রণা দ্বারা মানুষ অন্যায় কাজ করে। ভোগ-বিলাসের জন্য যিনা করে, অন্যকে হত্যাও করে। ব্যবসায়ীরা ভেজাল খাওয়ায়। চোর চুরি করে। সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসের কাজ করে। ফলে যৌনাচার থেকে শুরু করে গোটা সমাজ অন্যায় অত্যাচারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। কুরআনের অনুসরণ করলে ঐ সকল রোগের আরগ্য সম্ভব নয় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘নিরাময়কারী দুইটি জিনিসকে তোমরা আঁকড়িয়ে ধর। তা হলো মধু এবং কুরআন;-মেশকাত-৮/৪৩৭০। আল্লাহ্র কিতাবের মধ্যে রয়েছে হিদায়াত ও আলো। অতএব, তোমরা আল্লাহ্র কিতাবকে খুব শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধর এবং দৃঢ়তার সাথে এর বিধি-বিধান মেনে চল (মুসলিম);-মেশকাত-১১/৫৮৮০। [নিরাময়, হিদায়াত ও আলোর জন্য কুরআনকে শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরার প্রয়োজন আছে কী?]
৫. প্রচলিত হাদিসে রাসূলের আখলাক ছিল কুরআন
কুরআনে দেখুন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ্ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ্র মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ;-৩৩:২১। নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত;-৬৮:৪। [রাসূলের আদর্শের অনুসরণ করা উচিত নয় কী?]
প্রচলিত হাদসে দেখুন, সাদ বিন হিশাম রাসূলের আখ্লাক সম্পর্কে জানতে চাইলে মা আয়শা বলেন, ‘তুমি কি কুরআন পড় না? তিনি উত্তরে বলেন, হাঁ। মা আয়শা বললেন, ‘নবীর আখ্লাক ছিল কুরআন (মুসলিম);-মেশকাত-৩/১১৮৮। [বর্তমান বিশ্বে দীন ইসলামের প্রচারকদের আখ্লাক কী? কুরআন না মানব রচিত শয়তানের কিতাব?]
৬. আল্লাহ্র হাদিসই রাসূলের হাদিস
কুরআনে দেখুন, ‘আল্ল¬¬¬¬াহ অবতীর্ণ করেছেন আহসানাল (উত্তম) হাদিস সম্বলিত কিতাব যা সুসমঞ্জস এবং যা পুন: পুন: আবৃত্তি করা হয়। এতে, যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গাত্র রোমাঞ্চিত হয়, অতঃপর তাদের দেহমন বিনম্র হয়ে আল্লাহ্র স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এ-ই আল্লাহ্র পথনির্দেশ;-৩৯:২৩। এগুলো আল্লাহ্র আয়াত, যা আমি তোমার নিকট তিলাওয়াত করছি যথাযথ ভাবে। সুতরাং আল্লাহ্ এবং তাঁর আয়াতের পরিবর্তে তারা আর কোন হাদিসে বিশ্বাস করবে?;-৪৫:৬। [কুরআনের ৬,২৩৬টি আয়াতই হলো আল্লাহর হাদিস। এ সকল হাদিস (আয়াত) নিয়ে আল্লাহ্র হাদিসের গ্রন্থ কুরআন। রাসূল তার মুখ (৬৯:৪০; ৮১:১৯) দিয়ে এ সকল আয়াত বলেছেন বলেই কুরআন হলো রাসূলের হাদিস।]
প্রচালত হাদিসে দেখুন, ‘রাসূল বলেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম হাদিস হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাব (মুসলিম);-মেশকাত-১/১৩৪। আহসানাল (সর্বাপেক্ষা উত্তম) কথা আল্লাহ্র কথা এবং সর্বাপেক্ষা উত্তম আদর্শ মুহাম্মাদের আদর্শ (নাসাঈ);-মেশকাত-২/৮৯৪। [রাসূল আহসানাল হাদিসের কিতাব কুরআনের অনুসরণ করতে বলেছেন। আমরা রাসূলের নির্দেশ মানি কী?]
৭. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে কুরআন নিয়ে গবেষণা কর
কুরআনে দেখুন, ‘তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অনুধাবন করে না?;-৪:৮২। তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?;-৪৭:২৪। [কুরআন বাদ দিয়ে প্রচলিত হাদিস, ইযমা বা কিয়াস নিয়ে আল্লাহ্ চিন্তা-গবেষণা করতে বলেছেন কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘হে কুরআনধারীগণ! তোমরা কুরআনকে বালিশ বানাবে না বরং তিলাওয়াত করার মত হকভাবে তা তিলাওয়াত করবে- রাত্র ও দিনে তা প্রকাশ করবে ও এতে যা আছে তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবে যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার (বায়হাকী- শোয়াবে);-মেশকাত-৫/২১০৬। তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং লোকদের কুরআন শিক্ষা দিতে থাক, কেননা আমি এমন এক ব্যক্তি যাকে শেষ পর্যন্ত তুলে নেয়া হবে এবং জ্ঞান চর্চা বন্ধ হয়ে যাবে আর ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। এমন কি ফরয নিয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে মতভেদ হবে, অথচ এমন কাউকেও রাস্তায় খুঁজে পাওয়া যাবে না যে তা মীমাংসা করে দিতে পারে (দারেমী ও দারাকুতনী);-মেশকাত-২/২৬০। [রাসূল কি উপরোক্ত হাদিসের কথা বলেননি? হাদিস অনুসারে কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা উচিত নয় কী?]
৮. প্রচলিত হাদিসে একমাত্র আল্লাহ্র কিতাবঅনুসরণের নির্দেশ
কুরআনে দেখুন, ‘মহান হজ্জের দিবসে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে মানুষের প্রতি এ এক ঘোষণা যে, নিশ্চয়ই মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ্ দায়মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও;-৯:২।   এ ঘোষণাকে সে স্থায়ী বাণীরূপে রেখে গিয়েছে তার পরবর্তীদের জন্য, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে;-৪৩:২৮। [মুশরিক অর্থ অংশীবাদী; যারা বহু ইলাহের অনুসরণ করে। আল্লাহ্র অংশীদার হিসেবে মুসলিমরা কুরআনের (আল্লাহ্র) সাথে শিরক করে ১. হাদিস (রাসূলের কথা), ২. সাহাবীদের হাদিস, ৩. তাবেয়ীদের হাদিস, ৪. তাবে তাবেয়ীনদের হাদিস, ৫. ইমামদের হাদিস, ৬. মসজিদে ইমামদের (দীন ইসলামের ধারক, বাহক ও প্রচাকদের) হাদিস, ৭. রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাদিস .... বিশ্বাস ও অনুসরণ করে বিধায় তারা মুশরিক। সুতরাং মুশরিকদের সাথে সম্পর্কছেদ করা আমাদের উচিত নয় কী?]

প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা ধরে থাক, তবে তোমরা আমার পর কখনও বিপথগামী হবে নাÑ তা হলো আল্লাহ্র কিতাব (মুসলিম);-মেশকাত-৫/২৪৪০। [রাসূল বিদায় হজ্জের ভাষণে কুরআন ব্যতীত অন্য কোন গ্রন্থের অনুসরণ করতে বলেছেন কী?]
৯. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে রাসূলের দীন প্রচার
কুরআনে দেখুন, ‘বল, হে কিতাবীগণ! আসুন সে কথায় যা আমাদের ও আপনাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত কারো ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই তাঁর শরিক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকেও আল্লাহ্ ব্যতীত রব হিসেবে গ্রহণ না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক, অবশ্যই আমরা মুসলিম;-৩:৬৪। [সিয়া, সূন্নী, হানাফী, মালেকী নয় পরিচয় হবে মুসলিম হিসেবে। আল্লাহ্ বলেন,] ‘কথায় কে উত্তম ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা যে আল্লাহ্র প্রতি মানুষকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি তো মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত;-৪১:৩৩। [কোন মুসলিম অন্য নামে পরিচয় দিতে পারে কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘রাসূল দীন প্রচারের জন্য রোমান সম্রাট হিরাকিল-এর নিকট যে পত্র পাঠান তাতে লিখা ছিল, ‘.... হে কিতাবী সম্প্রদায়! আপনারা এমন এক কথার দিকে আসুন, যাতে আমরা ও আপনারা সমবিশ্বাসী। আর তা হলো আমরা সকলে মিলে এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো ইবাদত করব না। আর তাঁর সাথে অন্য কিছুকেই অংশীদার সাব্যস্ত করব না এবং কেউই আল্লাহ্ ছাড়া একে অন্যকে রব হিসেবে গ্রহণ করব না। যদি তারা এ কথাগুলো মেনে না নেয়, তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম (বুখারী-মুসলিম);-মেশকাত-৮/৩৭৫০। [আয়াত ও হাদিসের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায় কী?]   
১০. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে আল্লাহ্র কিতাবই আল্লাহ্র রজ্জু
কুরআনে দেখুন, ‘তোমরা সকলে আল্লাহ্র রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না .... তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা তাদের নিকট স্পষ্ট আয়াত আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে;-৩:১০৩, ১০৫। [একই স্রষ্টার, একই বিশ্বে, একই সংবিধান আল্লাহ্র রজ্জু কুরআনের মাধ্যমে এক জাতি গঠন করা সম্ভব নয় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘আল্লাহ্র কিতাবের মধ্যে রয়েছে হেদায়েত ও আলো। অতএব, তোমরা আল্লাহ্র কিতাবকে খুব শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধর এবং দৃঢ়তার সাথে এর বিধি-বিধান মেনে চল। ....আল্লাহ্র কিতাব হলো আল্লাহ্র রজ্জু। যে ব্যক্তি এর আনুগত্য করবে, সে হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর যে একে পরিত্যাগ করবে, সে পথভ্রষ্ট, গোমরাহ্ (মুসলিম);-মেশকাত-১১/৫৮৮০। [আল্লাহ্র রজ্জুর অনুসরণ বন্ধ করে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দলে বিভক্ত নয় কী?] ‘এ এহেতু যে, আল্লাহ্ সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং যারা কিতাব সম্পর্কে মতভেদ সৃষ্টি করেছে, নিশ্চয়ই তারা দুস্তর মতভেদে আছে;-২:১৭৬।
১১. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে আল্লাহ্র কিতাবই যথেষ্ট
কুরআনে দেখুন, ‘এ (কুরআন) কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমি তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা তাদের নিকট পাঠ করা হয়। এতে (কুরআনে) অবশ্যই অনুগ্রহ ও উপদেশ রয়েছে সে কওমের জন্য যারা ঈমান আনে;-২৯:৫১। [উপরোক্ত আয়াত অনুসারে ইযমা-কিয়াস যথেষ্ট, না কুরআনই বিশ্বের সকল মানুষের জন্য যথেষ্ট?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘রাসূলের ইন্তেকালের সময় তিনি বলেন, ‘আসো, আমি তোমাদের জন্য একটি লিপি লিখে দেই, যাতে এর পর তোমরা গোমরাহ না হও। তখন ওমর বললেন, রাসূলের ওপর এখন রোগ-যন্ত্রণা প্রবল হয়ে পড়েছে। আর তোমাদের কাছে কুরআন মাজীদ রয়েছে, সুতরাং আল্লাহ্র কিতাবই তোমাদের জন্য যথেষ্ট (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-১১/৫৭১৪। [ওমরের তারাবির পূজা করা যথেষ্ট, না কুরআনের অনুসরণ করা যথেষ্ট?]
১২. প্রচলিত হাদিসে সঠিক রাস্তার আহ্বায়ক হলো কুরআন
কুরআনে দেখুন, ‘তোমাদের যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা  হতে  বিরত  থাকলে  তোমাদের  লঘুতর  পাপগুলো মোচন করব এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে দাখিল করব;-৪:৩১। তারাই বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্য হতে, ছোটখাট অপরাধ করলেও। তোমার রবের ক্ষমা অপরিসীম;-৫৩:৩২। [সূদ-ঘুষ, ওজনে কম ও ভেজাল মিশণ, মিথ্যা, চুরি, হত্যা, অন্যের অর্থ আতœসাৎ, যিনাসহ ইত্যাদি বড় বড় পাপ কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত নয় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘রাসূল একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন তা হলো, ‘একটি সরল সঠিক রাস্তা, তার দুই পাশে দুইটি দেওয়াল যাতে বহু খোলা দরজা রয়েছে এবং সে সকল দরজায় পর্দা ঝুলান আছে। আর রাস্তার মাথায় একজন আহ্বায়ক যে মানুষকে আহ্বান করছে- আসো, এ রাস্তায় সোজা চলে আসো। বাঁকা টেরা চলো না। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘ঐ সঠিক সরল রাস্তা হচ্ছে ইসলাম। আর খোলা দরজাসমূহ হচ্ছে আল্লাহ্ কর্তৃক হারাম করা বিষয়সমূহ এবং ঝুলান পর্দাসমূহ হচ্ছে আল্লাহ্ নির্ধারিত সীমাসমূহ। রাস্তার মাথার আহ্বায়ক হচ্ছে কুরআন (তিরমিযি, আহমদ, বায়হাকী);-মেশকাত-১/১৮২। [আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধ মানার জন্য রাসূল বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন। মুসলিমরা কুরআন সমর্থিত হাদিসগুলো মানেন কী?]
১৩. কুরআনে ও প্রচলিত হাদিসে দীনের নতুন কথায় পথভ্রষ্ট
কুরআনে দেখুন, ‘যখন আমার আয়াত, যা সুস্পষ্ট, তাদের নিকট পাঠ করা হয় তখন যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তারা বলে, ‘অন্য এক কুরআন আন এ ছাড়া, অথবা একে বদলাও। বল, ‘নিজ হতে এ (কুরআন) বদলান আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যা ওহী হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি আমার রবের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই আমি মাহাদিবসের শাস্তির আশংকা করি;-১০:১৫। বল, ‘যদি আমি এ উদ্ভাবন করে থাকি, তবে তোমরা তো আল্লাহ্ হতে আমাকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না;-৪৬:৮। সে (রাসূল) যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করত, আমি অবশ্যই তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম তার জীবন ধমনী, অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই, যে তাকে রক্ষা করতে পারে;-৬৯:৪৪-৪৭। [রাসূল আল্লাহ্র নামে কোন কিছু রচনা করলে তাকে রক্ষা করার মত কেউ ছিল কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে যা দীন সম্পর্কে নতুন সৃষ্টি (বেদআত) করা হয়েছে এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই পথভ্রষ্ট (মুসলিম);-মেশকাত-১/১৩৪। যে ব্যক্তি কোন বেদআতিকে সম্মান দেখিয়েছে সে নিশ্চয়ই ইসলামের ধ্বংস সাধনে সাহায্য করেছে (বায়হাকী শোআবে);-মেশকাত-১/১৮০। কুরআন .... ব্যতীত যে কোন বেদআত সৃষ্টি করবে কিংবা বেদআতীকে আশ্রয় দিবে তার ওপর আল্লাহ্র, মালাইকা ও মানুষ সকলেরই লানত, তার ফরজ বা নফল কিছুই কবূল হবে না (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৫/২৬০৮। আলীকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু লিখিত জিনিস আপনাদের নিকট আছে কি যা কুরআনে নেই? উত্তরে তিনি বলেন, ‘সে সত্তার কসম যিনি খাদ্য-শস্য অংকুরিত করেছেন এবং মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন, কুরআনে যা কিছু আছে এ ছাড়া অন্য কিছুই আমাদের কাছে নেই (বুখারি);-মেশকাত-৭/৪১৮৫। [কুরআন ছাড়া অন্য কিছু মানা যাবে কী?]
১৪. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে আল্লাহ্র কিতাব না জানলে
আখিরাতে উঠান হবে অন্ধ অবস্থায়
কুরআনে দেখুন, ‘আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট;-১৭:৭২। যে আমার স্মরণে (আল্লাহ্র নির্দেশ অনুসরণে)  বিমুখ  থাকবেঅবশ্য তার জীবন- যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, আমার রব! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান। আল্লাহ বলবেন, ‘এরূপই আমার আয়াতসমূহ তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তুমিও বিস্মৃত হলে এবং এভাবেই আমি প্রতিফল দেই তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার রবের আয়াতে বিশ্বাস করে না। আখিরাতের শাস্তি তো অবশ্যই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী;-২০:১২৪-১২৭। [কুরআন শিক্ষা এবং কুরআনের অনুসরণ বন্ধ করে আখিরাতে অন্ধ হয়ে উঠার প্রয়োজন আছে কী?]   
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘আখিরাতে আল্লাহ্ বলবেন, ‘....দুনিয়াতে তুমি যেভাবে আমাকে ভুলে ছিলে, আজ আমিও আখিরাতে অনুরূপভাবে তোমাকে ভুলে থাকব (মুসলিম);-মেশকাত-১০/৫৩২১। [মুর্খ, পড়তে পারি না, কুরআন জানি না বলে আখিরাতে মুক্তির আশা নেই। বয়স যতই হোক না কেন কুরআন পড়ে ও  বুঝে তার অনুসরণ করা উচিত নয় কী?]                     

১৫. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে কুৎসিত শাসক
কুরআনে দেখুন, ‘তাদের আমি করেছিলাম ইমাম (নেতা); তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ প্রদর্শন করত; তাদের ওহী প্রেরণ করেছিলাম সৎকর্ম করতে, সালাতে (প্রার্থনাত) দাঁড়াতে এবং যাকাত প্রদান করতে; তারা আমারই ইবাদত করত;-২১:৭৩। তারা আল্লাহ্র বাণী প্রচার করত এবং তাঁকে ভয় করত, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করত না;-৩৩:৩৯। ঐশ্বর্য দিয়ে নয়, জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধরাই রাজত্ব করবেন (২:২৪৭)।
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘যদি কোন বিকলাঙ্গ কুৎসিত ক্রীতদাসকেও তোমাদের শাসক নিযুক্ত করা হয় এবং সে তোমাদের আল্লাহ্র কিতাব অনুযায়ী পরিচালিত করে, তবে তোমরা অবশ্যই তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে এবং তার অনুসরণ করবে (মুসলিম);-মেশকাত-৭/৪৩৬৬। তোমরা হুকুম শ্রবণ করবে এবং অনুসরণ করবে যদিও তোমাদের ওপর কিশমিসের ন্যায় মস্তকবিশিষ্ট হাবশী গোলামকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয় (বুখারি);-মেশকাত-৭/৪৩৬৭। [ইমাম সাহেবগণ! বর্তমান বিশ্বে উক্ত হাদিসের অনুসরণ হয় কী?]
১৬. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে কুরআন পাঠ শ্রবণে রহমত বর্ষিত হয়
কুরআনে দেখুন, ‘যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে তা শ্রবণ করবে এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকবে যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়;-৭:২০৪। [কুরআনের আলোচনা মনোযোগসহ নিশ্চুপ হয়ে শুনলে কি আল্লাহ্র দয়ার মধ্যে অবস্থান করা হয় না?]
প্রচলিত হাদসে দেখুন, ‘যখনই কোন একটি দল আল্লাহ্র ঘরসমূহের মধ্যে কোন একটি ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহ্র কিতাব পাঠ করতে থাকে এবং পরস্পর এর আলোচনা করতে থাকে তখনই তাদের ওপর স্বস্তি ও শান্তি অবতীর্ণ হতে আরম্ভ করে (মুসলিম);-মেশকাত-২/১৯৪। [মানুষ শয়তানের (৬:১১২) কিতাব ফাজায়েলে আমলআলোচনা করে কেন?]
১৭. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে মসজিদে করণীয়
কুরআনে দেখুন, ‘যে কেউ আল্লাহ্র মসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা প্রদান করে এবং তাদের বিনাশ সাধনে প্রয়াসী হয় তার অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হতে পারে? অথচ ভয়-বিহ্বল না হয়ে তাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা সংযত ছিল না। পৃথিবীতে তাদের জন্য লাঞ্ছনা ভোগ ও আখিরাতে তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে;-২:১১৪। [অধিকাংশ মসজিদে অর্থসহ কুরআন পাঠ করতে দেওয়া হয় না। ফাজায়েলে আমলে সমস্যা নেই কেন?]
প্রচলিত হাদসে দেখুন, ‘মসজিদ শুধু আল্লাহ্র যিকির, সালাত এবং কুরআন পাঠের জন্য (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-২/৪৬০। আমার দলের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি তারাই যারা কুরআনের বাহক এবং রাত্রি জাগরণকারী (বায়হাকী);-মেশকাত-৩/১১৭০। [অধিকাংশ মসজিদে শয়তানের গ্রন্থ (৬:১১২) তাবলীগে নিসাব বা ফাজায়েলে আমলছাড়া আল্লাহ্র কিতাব পাঠ করা হয় কী?]
১৮. কুরআন পাঠের রীতি
কুরআনে দেখুন, ‘তুমি ক্লেশ পাবে এজন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি, বরং যে ভয় করে কেবল তার উপদেশার্থে;-২০:২-৩। আমি অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কুরআন, যাতে তোমরা বুঝতে পার;-৪৩:৩। আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে;-৭৩:৪। কুরআন আমি আমি সহজ করে দিয়েছি শিক্ষা গ্রহণের জন্য; অতএব শিক্ষা গ্রহণকারী কেউ আছে কী?;-৫৪:১৭, ২২, ৩২, ৪০। [কুরআন ছাড়া কোন গ্রন্থ না বুঝে পড়া হয় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘ওমর বিন্ খাত্তাব হিশাম বিন্ হাকামকে তার চাদর গলায় পেঁচায়ে রাসূলের কাছে এনে অভিযোগ দিল সে সূরাহ ফুরকান ভিন্নভাবে পড়ে। রাসূল তার পাঠ শুনে বললেন, ‘বস্তুত এ কুরআন সাত রীতিতে নাযিল হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যা সহজ হয় তাই পড়বে (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৫/২১০৭, ২১০৯। আবদুল্লাহ বিন্ মাসঊদ এক ব্যক্তিকে রাসূলের নিকট নিয়ে গিয়ে বলল সে ভিন্ন ভাবে কুরআন পড়ে। রাসূল বললেন, ‘তোমাদের উভয়ই শুদ্ধ। সুতরাং তোমরা এ নিয়ে বিবাদ করবে না। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তীরা বিবাদ বিসম্বাদে লিপ্ত হয়েছে,- ফলে তারা ধ্বংস হয়েছে (বুখারি);-মেশকাত-৫/২১০৮। রাসূলকে জিব্রীল সাত রীতিতে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন; তবে এই সাত রীতি অর্থের দিক দিয়ে একই (মুসলিম);-মেশকাত-৫/২১১০। বৃদ্ধা ও বৃদ্ধ, কিশোর ও কিশোরী এবং নিরক্ষর ব্যক্তিদের জন্য কুরআন সাত রীতিতে নাযিল হয়েছে। তার প্রত্যেক রীতিই আরোগ্য দানকারী ও যথেষ্ট (তিরমিযি, আবূ দাঊদ ও আহমদ);-মেশকাত-৫/২১১১। [রামাদানকে (২:১৮৫), রমযান, ফরদকে (৯:৬০; ২৪:১), ফরয, গদবকে (২৪:৯) বলা হয় গযব। হাদিস অনুসারে আরও পাঁচ প্রকার উচ্চারণ না জেনে দ্বোয়াল্লীন (১:৭) আর জোয়াল্লীননিয়ে মুসলিমের মধ্যে দলাদলি ও মারামারি কেন?]
১৯. কুরআন তিলাওয়াতের সময়
কুরআনে দেখুন, ‘রাত্রি জাগরণ কর, কিছু অংশ ব্যতীত, অর্ধ রাত্রি কিংবা তদপেক্ষা অল্প, অথবা তদপেক্ষা বেশি। আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে;-৭৩:২-৪। তোমার রব তো জানেন যে, তুমি জাগরণ কর কখনও রাত্রির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, কখনও অর্ধাংশ এবং কখনও এক-তৃতীয়াংশ এবং জাগে তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও এবং আল্লাহ্ই নির্ধারণ করেন দিবস ও রাত্রির পরিমাণ। তিনি জানেন যে, তোমরা তা পুরাপুরি অনুসরণ করতে পারবে না, অতএব আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হয়েছেন। কাজেই কুরআনের যতটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর;- ৭৩:২০। কুরআন পড়বে ফাজরে। নিশ্চয়ই ফাজরের (সময়) কুরআন পড়া বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়;-১৭:৭৮। [সকলের জন্য কুরআন পাঠ বাধ্যতা মূলক। কুরআন না জেনে অন্ধ অবস্থায় (২০:১২৪-১২৭) হাসর করা উচিত হবে কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘প্রত্যেক মাসে কুরআন পড় একবার। .... কুরআন খতম করবে সপ্তাহে একবার, এর অধিক করবে না (বুখারি, মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযি, নাসাঈ ও ইবনূ মাযাহ);-মেশকাত-৪/১৯৫৬। যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন পড়েছে সে কুরআন বোঝেনি (তিরমিযি, আবূ দাঊদ ও দারেমী);-মেশকাত-৫/২০৯৭। রাসূল কখনও এক রাত্রে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করেননি (মুসলিম);-মেশকাত-৩/১১৮৮। [আল্লাহ্ বলেন,] ‘বল, ‘তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাস তবে আমাকে (রাসূলকে) অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অবরাধ ক্ষমা করবেন;-৩:৩১। [রাসূল একদিনে বা এক রাত্রে কুরআন খতম করেছেন কী? যারা একদিনে বা এক রাত্রে কুরআন খতম করে করে তারা রাসূলের অনুসরণ করে কী?
৭। মাসআলা ঃ আমাদের ইমাম আযম সাহেব প্রত্যেক রমযান মাসে কুরআন ৬১ বার খতম করতেন। ৩০ দিনে ৩০ খতম, ৩০ রাত্রে ৩০ খতম এবং তারাবির মধ্যে ১ খতম এতে তার মোট ৬১ খতম হত;-বেহেশতী জেওর, আশরাফ আলী থানভী চিশ্তি, অনুবাদ - মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, পৃষ্ঠা-১৬৭, এমদাদিয়া পুস্তকালয়, জুলাই, ১৯৯৮ ইং থেকে। [ইমাম আযম সাহেব কী রাসূলের নির্দেশ অমান্য করেননি? আমরা অনুসরণ করব কার-ইমামের না রাসূলের?]
২০. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে  প্রত্যেক নবী স্বজাতির
ভাষায় দীন প্রচার করতেন
কুরআনে দেখুন, ‘আমি (আল্লাহ্) প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য;-১৪:৪। আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় কুরআন, যাতে তোমরা বুঝতে পার;-৪৩:৩। [রাসূলের কাজের দায়িত্ব যারা নিয়েছেন, তাদের মাতৃভাষায় মানুষকে কুরআন বুঝিয়ে দেওয়া উচিত নয় কী?]
 প্রচলিত হাদসে দেখুন, ‘আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আমি যখনই কোন নবী প্রেরণ করেছি, তাকে আপন সম্প্রদায়ের ভাষা দিয়েই পাঠিয়েছি যেন তিনি তাদেরকে আল্লাহ্র বিধান ব্যক্ত করতে পারেন। ....আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য রাসূল করে পাঠিয়েছি;-মেশকাত-১০/৫৫২৫। [বিশ্বের সকল মানুষকে মাতৃভাষায় আল্লাহ্র কিতাব বুঝাতে হবে কী?]
২১. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে রাসূলের খোত্বা
কুরআনে দেখুন, ‘তুমি তোমার প্রতি ওহীকৃত তোমার রবের কিতাব হতে পাঠ করে শুনাও;-১৮:২৭। তুমি আবৃত্তি কর কিতাব হতে যা তোমার প্রতি ওহী করা হয় এবং (পরে) সালাতে (প্রার্থনাতে) দাঁড়াও। সালাত অবশ্যই বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কার্য হতে;-২৯:৪৫। [রাসূলকে আল্লাহ্ কুরআন পাঠ করে মানুষকে শুনানোর নির্দেশ দিয়েছেন কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘রাসূল খুত্বাতে কিছু কুরআন পাঠ করতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন (মুসলিম);-মেশকাত-৩/১৩২১। তোমাদের মধ্যে সে-ই শ্রেষ্ঠ যে কুরআন শিক্ষা করে ও তা শিক্ষা দেয় (বুখারি);-মেশকাত-৫/২০০৭। [মসজিদগুলোতে ইমামগণ মুসল্লিদের কুরআন বর্জন করে বারো মাসের শয়তানের (৬:১১২) তের খোত্বা শুনান কেন?]
২২. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে তাওহীদের কালেমা
কুরআনে দেখুন, ‘তাদেরকে লা ইলাহা ইল্ল¬াল্লাহুবলা হলে তারা অহংকার করত;-৩৭:৩৫। জেনে রাখ! লা ইলাহা ইল্ল¬াল্ল¬াহু (আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই);-৪৭:১৯। এ-ই যে মসজিদসমূহ আল্লাহ্রই জন্য। সুতরাং আল্ল¬াহ্র সাথে অন্য কাউকে ডেকো না;-৭২:১৮। [আল্লাহ্-খোদা, আল্লাহ্-পাক, আল্লাহ্-মাবুদ, আল্লাহ্-তায়ালা, আল্লাহ্-রাসূল বলা যাবে কী?]
   প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘লা-ইলাহা ইল্ল¬াল্ল¬াহ্ু হলো তাওহীদের কালিমা (রযীন);-মেশকাত-৫/২২১৪। যদি সপ্ত আকাশ আর আমি ভিন্ন তার সমস্ত অধিবাসী এবং সপ্ত পৃথিবী এক পাল্ল¬ায় রাখা হয় আর লা-ইলাহা ইল্ল¬াল্ল¬াহ্ু অপর পাল¬ায় রাখা হয় তবে লাইলাহা ইল্ল-াল্ল¬াহ্্ুর পাল্ল¬া ভারী হবে (শরহে সূন্নাহ);-মেশকাত-৫/২২০১। নিশ্চয়ই যে এ বিশ্বাস নিয়ে মরবে, ‘লা ইলাহা ইল্ল¬াল্লাহু, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে (বুখারি, মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযি, ইবনু মাযাহ);-মেশকাত-১/৩৩, ৩৫, ৩৬, ৩৯; ৪/১৫২৮, ১৫৩৩, ১৫৩৮; ৫/২১৯৮, ২২০৬; ১০/৫৩৩৭, ৫৩৪৩, ৫৫০৬; ১১/৫৭০৭। [আল্লাহ্ ও মুহাম্মাদকে এক করে (৭২:১৮) লা ইলাহা ইল্ল¬াল্ল¬াহু মুহাম্মাদুররাসূলুল্ল¬াহ্ লেখা যাবে কী?]
২৩. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে কুরআন পাঠের বিনিময় গ্রহণযোগ্য নয়
কুরআনে দেখুন, ‘অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের নিকট কোন  প্রতিদান  চায়  না  এবং যারা সৎপথপ্রাপ্ত;-৩৬:২১। [প্রত্যেক রাসূল বলেছেন,] ‘আমি এর (আল্লাহ্র কিতাব প্রচারের) জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না; আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের রবের নিকট আছে;-২৬:১০৯, ১২৭, ১৪৫, ১৬৪, ১৮০; ৩৪:৪৭; ৩৮:৮৬; ৬:৯০; ১০:৭২; ১১:২৯, ৫১; ১২:১০৪; ২৫:৫৭; ৩৬:২০, ২১। আল্লাহ্ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যারা তা গোপন রাখে ও বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে তারা নিজেদের উদরে আগুন ব্যতীত আর কিছুই ভক্ষণ করে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। তাদের জন্য মর্মন্তদ শাস্তি রয়েছে;-২:১৭৪। [ইমাম সাহেবগণ! আপনারা রাসূলদের কথা ভুলে গেছেন কী?]

প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘আল্লাহ্ তাঁর নবীকে বলেছেন, ‘বল, আমি তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাই না। আর কষ্ট কল্পনা করে যারা কথা বলে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-২/২৫৪। যে কুরআন পড়ে সে যেন তার বিনিময় আল্লাহ্র নিকট চায়। শীঘ্রই এমন লোকেরা আসবে যারা কুরআন পড়ে তার বিনিময় মানুষের নিকট চাইবে (তিরমিযি ও আহমদ);-মেশকাত-৫/২১১২। যে কুরআন পড়ে মানুষের নিকট খাবার চাইবে কিয়ামতের দিন সে উপস্থিত হবে তার চেহারায় হাড় থাকবে, তার ওপর মাংস থাকবে না (বায়হাকী শোয়াবে);-মেশকাত-৫/২১১৩। [অধিকাংশ মসজিদের ইমাম! আপনারা উপরোক্ত হাদিসগুলো মানেন কী?]
    ২৪. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে নবী-রাসূলের মধ্যে পার্থক্য নেই
কুরআনে দেখুন, ‘আমি তো তোমার নিকট ওহীপ্রেরণ করেছি যেমন নূহ্ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট ওহী প্রেরণ  করেছিলাম, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণ, ‘ঈসা, আইউব ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকটও ওহীপ্রেরণ  করেছিলাম;-৪:১৬৩। [মুহাম্মাদ ও ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, ‘ঈসা, আইউব ইউনুস, হারূন, সুলায়মান ও অন্যান্য নবীদের মধ্যে আল্লাহ্ পার্থক্য করতে বলেছেন কী?]                                                                                                                                                                                                                                    
কুরআনে দেখুন, ‘বল, ‘আমরা নবীদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই নিকট মুসলিম;-২:১৩৬। আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না;-২:২৮৫। বল, ‘আমরা আল্লাহ্তে এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং ইব্রাহীম, ইসমাইল, ইস্হাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যা মূসা, ‘ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের রবের নিকট হতে প্রদান করা হয়েছে তাতে ঈমান এনেছি, আমরা তাদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না;-৩:৮৪। যারা আল্লাহে ও তাঁর রাসূলগণে ঈমান আনে এবং তাদের একের সাথে অপরের পার্থক্য করে না তাদেরকে তিনি অবশ্যই পুরস্কার দিবেন;-৪:১৫২। [আল্লাহ্র নির্দেশ মোতাবেক নবী-রাসূলদেরকে ছোট বড় করা যাবে কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘তোমরা নবীদের পরস্পরের মধ্যে একজনকে আরেকজনের ওপর প্রাধান্য দিও না। .... তোমরা নবীদের মধ্যে একজনকে আরেকজনের ওপর মর্যাদা প্রদান করো না (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-১০/৫৪৬৪। যে ব্যক্তি বলবে আমি ইউনুস ইবনে মাত্তা হতে উত্তম, সে মিথ্যা বলেছে (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-১০/৫৪৬৫। নবীগণ পরস্পরে আল্লাতী ভাই’, তাঁদের মা ভিন্ন ভিন্ন এবং তাঁদের দীন এক (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-১০/৫৪৭৭। [রাসূল মুহাম্মাদকে সায়েদানা (আমাদের সর্দার), মাওলানা (আমাদের মাওলা / অভিভাবক), হাবিবানা (আমাদের হাবীব / দোস্ত), সাফিয়ানা (আমাদের সুপারিশকারী) বলা উচিত হবে কী? দরূদে ইব্রাহীমে নবী ইব্রহীম ও মুহাম্মাদ’-এর মধ্যে পার্থক্য করলে আল্লাহ্ ও মুহাম্মাদের নির্দেশ মান্য করা হয় কী?]

২৬. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে সালাতের পূর্বে ওজূ
কুরআনে দেখুন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতে দাঁড়াবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা ও পা গ্রন্থি পর্যন্ত মসেহ করবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান হতে আগমন কর, অথবা তোমরা স্ত্রীর সাথে সংগত হও এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তা তোমাদের মুখম-লে ও হাতে মসেহ করবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না;-৫:৬। [আল্লাহ্র নির্দেশ মুখ ও হাত ধৌত এবং মাথা ও পা মসেহ করা। পা ধৌত করা কার নির্দেশ?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়াতে ইচ্ছা করবে- ওজূ করবে যেভাবে আল্ল¬¬াহ তোমাকে নির্দেশ দিয়াছেন (আবূ দাঊদ, তিরমিযি ও নাসাঈ);-মেশকাত-২/৭৪৮। রাসূল প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতের জন্যই নূতন ওজূ করতেন (দারেমী);-মেশকাত-২/৩৯১, ৩৯২। রাসূল বলেন, ‘যখন আমি সালাতের জন্য প্রস্তুত হব, তখনই ওজূ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি (তিরমিযি, আবূ দাঊদ ও নাসাঈ);-মেশকাত-৮/৪০২৬।
২৯. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে সালাতের কেরাআত হবে মধ্যম স্বরে
কুরআনে দেখুন, ‘তোমার সালাতের (প্রার্থনার) স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; এ দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন কর;-১৭:১১০। [এ আয়াতে তিনটি স্বরের উল্লেখ আছে। তবে সালাত পড়তে হবে মধ্যম স্বরে।] বল, ‘তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন;-৩:৩১। [আল্লাহ্ রাসূলকে মধ্যম স্বরে সালাত পড়তে বলেছেন। আর আমাদের নারী-পুরুষ সকলকেই রাসূলের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।] যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে তা শ্রবণ করবে এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকবে যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়;-৭:২০৪। [ইমাম মধ্যম স্বরে সালাত পড়লে মুক্তাদীরা নিরবে শুনবে। এতে আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হবে। ইমাম নিরবে সালাত পড়লে রহমত বর্ষিত হবে কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘যখন ইমাম কেরাত পড়বেন তখন তোমরা চুপ থাকবে (মুসলিম);-মেশকাত-২/৭৬৯। যখন ইমাম কুরআন পড়বেন তোমরা চুপ থাকবে (আবূ দাঊদ, নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ);-মেশকাত-২/৭৯৭। রাসূল-এর সালাতের কেরাআত এ পরিমাণ হতোÑ যখন তিনি ঘরে সালাত পড়তেন বারান্দায় যারা থাকতেন তারা তা শুনতে পেত (আবূ দাঊদ ও তিরমিযি);-মেশকাত-৩/১১৩৫ ও ৩/১১৩২, ১১৩৬। ফজরের মত জোহরের ও আসরের সালাতেও রাসূল মুসল্লীদের আয়াত [সূরা-৯২, লায়ল ও সূরা-৮৭ আলা] শুনিয়ে পড়তেন (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-২/৭৭০, ৭৭২। [প্রচলিত সালাতের স্বর মধ্যম স্বরে হয় কী? জোহর ও আসরের সালাতে মুক্তাদীরা সূরা আলা ও লায়ল শুনেছেন কী?]


৩৬. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে রাসূল একজন মানুষই
কুরআনে দেখুন, ‘বল, ‘পবিত্র মহান আমার রব! আমি তো হচ্ছি কেবল একজন মানুষ, একজন রাসূল;-১৭:৯৩। বল, ‘আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একমাত্র ইলাহ....;-১৮:১১০। যখনই তাদের নিকট তাদের রবের কোন নুতন উপদেশ আসে তারা তা শ্রবণ করে কৌতুকচ্ছলে, তাদের অন্তর থাকে অমনোযোগী। .... এ তো তোমাদের মত একজন মানুষই;-২১:২-৩। বল, ‘আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ;-৪১:৬। [রাসূল রক্ত মাংসের একজন মানুষ যিনি বিয়ে করেছেন, সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ও খাওয়া-দাওয়া করেছেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন একজন নবী, এক জন রাসূল।]
[প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘আমি যখন আমার নিজের মত অনুসারে তোমাদের কোন নির্দেশ দেই, তখন যেন আমিও একজন মানুষ (মুসলিম);-মেশকাত-১/১৪০। আমিও তোমাদের মত একজন মানুষই। আমিও ভুলে যাই তোমরা যেরূপ ভুলে থাক। সুতরাং আমি যখন কিছু ভুলে যাই তখন তোমরা আমাকে স্মরণ করায়ে দিবে (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৩/৯৫০ মা আয়শা বলেন, রাসূল অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষই ছিলেন (তিরমিযি);-মেশকাত-১০/৫৫৭৪। [রাসূল নূরের বা মাটির তৈরি নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ কেন?]
৩৭. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে রাসূল কারো সুপারিশকারী নয়
কুরআনে দেখুন, ‘তোমরা সে দিনকে ভয় কর যেদিন কেউ কারো কোন উপকারে আসবে না, কারো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কারো নিকট হতে বিনিময় গৃহীত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না;-২:৪৮, ১২৩। হে মুমিনগণ! আমি যা তোমাদেরকে দিয়েছি তা হতে তোমরা ব্যয় কর সে দিন আসার পূর্বে, যেদিন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না;-২:২৫৪।
কুরআন দেখুন, ‘রাসূল বলবেন,‘হে আমার রব! আমার সম্প্রদায় তো এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করেছিল;-২৫:৩০। বল, ‘আমি কোন নূতন রাসূল নই। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে; আমি আমার প্রতি যা ওহী করা হয় কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র;-৪৬:৯। [রাসূল নিজের ভালোমন্দ (৭:১৮৮) জানতেন না। তাহলে আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন কীভাবে?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘তবে কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মতের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব সাক্ষীরূপে এদের বিরুদ্ধে। .... (এ আয়াত পাঠের সময় দেখা গেল) রাসূলের দুই চক্ষু অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে (বুখারি-মুসলিম);-৫/২০৯১। সুপারিশ সম্পর্কে রাসূল বলেন, ‘তখন আমি আল্ল¬াহর নেক বান্দা [ঈসা] যেমন বলেছিলেন অনুরূপ বলব, ‘আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম ততদিনই আমি তাদের অবস্থা অবগত ছিলাম .... আপনি সর্বশক্তিমান ও মহাজ্ঞানীপর্যন্ত (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-১০/৫৩০১। অর্থাৎ পুরা আয়াতটি- আমার অন্তরের কথা তো আপনি অবগত আছেন, কিন্তু  আপনার  অন্তরের  কথা  আমি  অবগত নইআপনি  তো  অদৃশ্য সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। আপনি আমাকে যে আদেশ করেছেন তা ব্যতীত তাদের আমি কিছুই বলি নি, তা এ-ই: তোমরা আমার ও তোমাদের রব আল্ল¬াহর ইবাদত কর এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম তত দিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী, কিন্তু যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং আপনিই সর্ববিষয়ে সাক্ষী। আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদের ক্ষমা করেন তবে আপনি সর্বশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী;-৫:১১৬-১১৮। [সুপারিশ সম্পর্কে,] ‘.... (বিচার দিবসে মানুষ) আমাকে বলবে, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলব, আজ আমি তোমার কোন সাহায্যই করতে পারব না। আমি তো তোমাকে আল্লাহ্র বিধান পূর্বেই (দুনিয়াতে) জানায়েছি (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৮/৩৮২০; ১০/৫৩৩৪। হে ফাতিমা! তুমি তোমার শরীরকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর! কেননা, আল্লাহ্র শাস্তি হতে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৯/৫১৪১। আল্লাহ্র কসম! আমি জানি না যে আমার সাথে কি আচরণ করা হবে? আর এও জানি না যে, তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে? অথচ আমি হলাম আল্লাহ্র রাসূল (বুখারি);-মেশকাত-৯/৫১০৮। [রাসূল আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন কী?
আল্লাহ্ ব্যতীত কোন সুপারিশ নেই
কুরআনে দেখুন, ‘কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করবে?;-২:২৫৫। তুমি এ (কুরআন) দ্বারা তাদের সতর্ক করে দাও যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রবের নিকট সমবেত করা হবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ব্যতীত  তাদের কোন অভিভাবক বা সুপারিশকারী থাকবে নাহয়ত তারা সাবধান হবে;-৬:৫১। এ (কুরআন) দ্বারা তাদের উপদেশ দাও, যাতে কেউ নিজ কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, যখন আল্লাহ্ ব্যতীত তার কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী থাকবে না;-৬:৭০। তিনি (আল্লাহ্) ব্যতীত তোমাদের কোন ওলী নেই এবং সুপারিশকারীও নেইতবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?;-৩২:৪। তবে কি তারা আল্লাহ্ ব্যতীত অপরকে সুপারিশকারী ধরেছে? বল, ‘তাদের কোন ক্ষমতা না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও;-৩৯:৪৩। বল, ‘সকল সুপারিশ আল্লাহ্রই ইখতিয়ারে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব আল্লাহ্রই;-৩৯:৪৪। [আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্য করে পীর বা ফকিরকে সুপারিশকারী হিসেবে ধরলে জান্নাত পাওয়া যাবে কী?]


সুপারিশ করবেন ফিরিশতাগণ
তাঁর (আল্লাহ্র) অনুমতি লাভ না করে সুপারিশ করার কেউ নেই;-১০:৩। যারা আগে বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি আল্লাহ্ সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত;-২১:২৭-২৮। আকাশে কত মালাইকা (ফিরিশতা) রয়েছে; তাদের সুপারিশ কিছুমাত্র ফলপ্রসূ হবে না, তবে আল্লাহ্র অনুমতির পর; যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন ও যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট;-৫৩:২৬। [জিন ও ইনসান অপরাধী। একজন অপরাধী আরেক অপরাধীর জন্য সুপারিশ করতে পারে কী? মালাইকা (ফিরিশতা) সুপারিশ করবেন (৪০:৭-৯); কারণ তারা আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে না (৬৬:৬)। [অপরাধীদের সুপারিশ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,] ‘ফলে সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না;-৭৪:৪৮।
রাসূল কারো উকিল নন
কুরআনে দেখুন, ‘বল, ‘আমি তোমাদের উকিল নই;-৬:৬৬। আমি তোমাকে তাদের উকিল করে পাঠাই নি;-১৭:৫৪। যারা আল্লাহ্র পরিবর্তে অপরকে আঊলিয়ারূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সম্যক দৃষ্টি রাখেন। তুমি তাদের উকিল নও;-৪২:৬। [নবী-রাসূল, পীর-ফরিক-আউলিয়া, ঠাকুর-দেবতা, গড-ভগবান বা ঈশ্বর কেউই এ-ই ভক্ত মানুষের মুক্তিদাতা, মধ্যস্তাকারী উকিল-মুক্তার-ব্যারিস্টার নয়। কারণ তারা সবাই লিঙ্গ ও বচনে দুষ্ট এবং সৃষ্টির পর্যায়ভুক্ত। শ্রী কৃষ্ণ, কালিকা, লক্ষè, দূর্গা, শিব, সরস্বতী অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্যরে পূজা করা যাবে না। আখিরাতে উকিল ধরলেও কোন কাজ হবে না।]
সকল সুপরিশ ব্যর্থ হবে
কুরআনে দেখুন, ‘তোমরা তো আমার নিকট নিঃসংগ অবস্থায় এসেছো যেমন আমি প্রথমে তোমাদের সৃষ্টি করেছিলাম; তোমাদের যা দিয়েছিলাম তা তোমরা পশ্চাতে ফেলে এসেছ, তোমরা যাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে শরিক মনে করতে তোমাদের সে-ই সুপরিশকারীগণকেও তোমাদের সাথে দেখছি না; তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক অবশ্যই ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তাও নিষ্ফল হয়েছে .... তিনিই তো আল্লাহ্ , সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরে যাবে?;-৬:৯৪-৯৫।  আবার বলি, কর্মফল সম্পর্কে তুমি কী জান? সে-দিন একে অপরের জন্য কিছু করার সামর্থ্য থাকবে না; এবং সে-দিন সমস্ত কর্তৃত্ব হবে আল্লাহ্র;-৮২:১৮-১৯। আল্লাহ্ই সত্য;-৩১:৩০। [পীর ধরার প্রয়োজন আছে কী?]



৩৮. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে সকল কর্ম রেকর্ড হচ্ছে
কুরআনে দেখুন, ‘স্মরণ রাখ, দুই গ্রহণকারী মালাইকা তার দক্ষিণে ও বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে; মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে;-৫০:১৭-১৮। প্রত্যেক মানুষের কর্ম আমি তার গ্রীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট;-১৭:১৩-১৪। এবং উপস্থিত করা হবে কিতাব এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তুমি অপরাধিদের দেখবে আতংকগ্রস্ত এবং তারা বলবে, ‘হায়! দুর্ভাগ্য আমাদের! এ কেমন গ্রন্থ! এ তো ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয় নি; বরং তা সমস্ত কিছুর হিসাব রেখেছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে;-১৮:৪৯। [সকল কর্ম (৮২:১১) অডিও-ভিডিও (৫৪:৫৩; ৭৮:২৯) হচ্ছে। কিয়ামতের দিন প্রত্যেকের হাতে ঐ কিতাবটি (৫০:২৩) তুলে দেওয়া হবে।]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘হে আয়েশা! তুমি ঐ সকল পাপ হতে বেঁচে থাকো যে গুলোকে ক্ষুদ্র ধারণা করা হয়, এ সমস্ত ছোট ছোট পাপগুলোর খোঁজ রাখার জন্য আল্লাহ্র পক্ষ হতে মালাইকা নিয়োজিত আছে (ইবনু মাযাহ, দারেমী, ও বায়হাকী শোআবুল ইমানে);-মেশকাত-৯/৫১২৪। [ইমামগণ! আল্লাহ্র নির্দেশ সম্পর্কে সাবধান হওয়া উচিত নয় কী?]

৪৩. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে নারী নয় পুরুষ শাসক
কুরআনে দেখুন, ‘কিন্তু নারীদের ওপর পুরুষদের মর্যদা আছে। আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়;-২:২২৮। পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লাহ্ তাদের এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এজন্য যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ্র হিফাজতে তারা হিফাজত করে....;-৪:৩৪। তোমার পূর্বে জনপদবাসীদের মধ্য হতে পুরুষদেরই প্রেরণ করেছিলাম, যাদের নিকট ওহী পাঠাতাম;-১২:১০৯। [দুই বা তিন জনের মধ্যে একজন দৈহিক বা মানুষিক দিক দিয়ে সব সময়ই অগ্রগামী হয়। পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য একজনের মর্যদা হবে সবার ওপরে। একে অপরের নিকট শান্তি ও ভালোবাসার (৩০:২১) জন্য বিশ্বে মানব সৃষ্টি।]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘সে জাতি কখনও সফলতা অর্জন করতে পারে না যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব মহিলাদের হাতে সোপর্দ করে (বুখারী);-মেশকাত-৭/৪৩৯৭। [দেশের প্রায় তিন লক্ষ মসজিদের ছয় লক্ষ ইমাম-মুয়াজ্জিন চাইলে কয়েক দিনের মধ্যে আল্লাহ্ নির্দেশিত একজন শাসক নির্বাচন করতে পারে। ইমাম সাহেবগণ! ভেবে দেখবেন কী?]

৪৪. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে হজ্জের জন্য প্রয়োজন সামর্থ্য ও পাথেয়
কুরআনে দেখুন, ‘(হজ্জের জন্য) তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা কর, আতœসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর;-২ঃ১৯৭। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্যই কর্তব্য;-৩ঃ৯৭।
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘মানুষের প্রতি বায়তুল্লাহর হজ্জ ফরয যে সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য লাভ করেছে (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-১/২, ৫/২৪০৭। হজ্জ হয় পথের পাথেয় ও বাহনে (বুখারি, তিরমিযি, ইবনু মাযাহ);-মেশকাত-৫/২৪১১, ২৪১২ ও ২৪১৮। [হজ্জের ব্যপারে কুরআন এবং প্রচলিত হাদিসের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য দেখা যায় কী?]
৪৬. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে আল্লাহ্র নামে যিকির নিরবে
কুরআনে দেখুন, ‘তোমরা আল্ল¬াহ্কে যিকির (স্মরণ) করবে, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না;-২:২৩৯। যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহ্কে যিকির করবে;-৪:১০৩। তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক; তিনি যালিমদের পছন্দ করেন না;-৭:৫৫। তোমার রবকে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় যিকির করবে এবং তুমি গাফিল হবে না;-৭:২০৫। কুরআন আমি সহজ করে দিয়েছি শিক্ষা গ্রহণের জন্য; অতএব শিক্ষা গ্রহণকারী কেউ আছে কি?;-৫৪:১৭, ২২, ৩২, ৪০। [কুরআন শিক্ষা সহজ নয় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘মৌখিক যিকিরে আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের আশা পূর্ণও করতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে তা বারণ করতে পারেন।....যারা (কুরআন) জানে না তাদের যারা শিক্ষা দিচ্ছে; তারাই উত্তম। আর আমিও শিক্ষাদাতা হিসেবে প্রেরিত হয়েছি (দারেমী);-মেশকাত-২/২৪০। ও সাহেবরা, তোমরা নিজেদের প্রতি রহম কর, তোমরা বধিরকে ডাকছো না, আর না অনুপস্থিতকে, তোমরা ডাকছো শ্রোতা ও দর্শককে, তিনি তোমাদের সাথে আছেন, আর যাকে তোমরা ডাকছো তিনি তোমাদের বাহনের ঘাড় অপেক্ষাও নিকটে আছেন (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৫/২১৯৫। [মনে মনে যিকির করা উচিত নয় কী?]
৫১. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে ইবাদতের কাজে পারিশ্রমিক গ্রহণযোগ্য নয়
কুরআনে দেখুন, ‘আল্লাহ্ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যারা তা গোপন রাখে ও বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে তারা নিজেদের উদরে অগ্নি ব্যতীত আর কিছুই ভক্ষণ করে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। তাদের জন্য মর্মন্তদ শাস্তি রয়েছে;-২:১৭৪। তোমরা আমার কিতাবের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করো না;-২:৪১। স্মরণ কর, যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল আল্লাহ্ তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, ‘তোমরা তা (আল্লাহ্র কিতাব) মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না।এর পরও তারা তা অগ্রাহ্য করে ও তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে; সুতরাং তারা যা ক্রয় করে তা কত নিকৃষ্ট!;-৩:১৮৭। আমার আয়াতসমূহ তুচ্ছ মুল্যে বিক্রয় করো না;-৫ঃ৪৪; ৩:১৯৯; ৯:৯। কিতাবের অঙ্গীকার কি তাদের নিকট হতে নেয়া হয় নি যে, তারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত বলবে না? এবং তারা তো তাতে যা আছে তা অধ্যয়নও করে;-৭:১৬৯। [অধিকাংশ মানুষই জেনে-শুনে অবৈধ ভক্ষণ করে।]
কুরআনে দেখুন, ‘তোমরা অনুসরণ কর রাসূলদের; ‘অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের নিকট প্রতিদান চায় না এবং যারা সৎপথপ্রাপ্ত;-৩৬:২০-২১। [বল,] ‘আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না; আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের রবের নিকট আছে;-২৬:১০৯, ১২৭, ১৪৫, ১৬৪, ১৮০; ৩৪:৪৭; ৩৮:৮৬; ৬:৯০; ১০:৭২; ১১:২৯, ৫১; ১২:১০৪; ২৫:৫৭। তোমরা কি মানুষকে সৎকার্যের নির্দেশ দাও, আর নিজেদেরকে বিস্মৃত হও! অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর। তবে কি তোমরা বুঝ না?;-২:৪৫। [নবী-রাসূলদের অনুসরণ করলে সালাত পড়ে এবং কুরআন শিক্ষা দিয়ে অর্থ গ্রহণ করা যাবে কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘যে কুরআন পড়ে মানুষের নিকট খাবার চাবে কিয়ামতে সে উপস্থিত হবে তার চেহারায় হাড় থাকবে, তার ওপর মাংস থাকবে না (বায়হাকী শোয়াবে);-মেশকাত-৫/২১১৩। যে কুরআন পড়ে সে যেন তার বিনিময় আল্লাহ্র নিকট চায়। শীঘ্রই এমন লোকেরা আসবে যারা কুরআন পড়ে তার বিনিময় মানুষের নিকট চাবে (তিরমিযি ও আহ্মদ);-মেশকাত-৫/২১১২। [কুরআনের আয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা কি উচিত?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘উসমান বিন্ আবুল আছ বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে আমার গোত্রের ইমাম নিযুক্ত করুন। তিনি বললেন, আচ্ছা! তুমি তাদের ইমাম। তবে ইমামতিতে তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দুর্বল ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য রেখ এবং নিজের জন্য একজন মোআজ্জিন নিযুক্ত কর যে আজানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ না করে (আবূ দাঊদ, নাসাঈ ও আহমদ);-মেশকাত-২/৬১৭। [শ্রদ্ধেয় ইমাম ও মুআজ্জিনগণ! আপনারা স্বাধীনভাবে চলার জন্য সদ্কা আদায়-বণ্টন (৯:৬০, ১০৩) করেন কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘উবাদা বিন ছামেত বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! এক ব্যক্তি যাকে আমি লেখা এবং কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলাম সে তার বিনিময়ে আমার জন্য একটি ধনুক উপহার পাঠায়েছে যা মূল্যবান কোন মাল নয়। সুতরাং আমি কি তা দিয়ে জিহাদে তীর মারতে পারি? তিনি বললেন, যদি তুমি জাহান্নামের শিকল গলায় পরতে ভালোবাসো, তবে তা গ্রহণ করতে পার (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাযাহ);-মেশকাত-৬/২৮৬০। ব্যাখ্যাঃ ইবাদতের কাজে ঊজুরা বা পারিশ্রমিক গ্রহণ না করার ব্যাপারে এ ইমাম আজম আবূ হানীফা ও তাঁর সমতাবলম্বীদের প্রধান দলীল। [কুরআন, হাদিস, কিয়াস বা ইজমা কোনটাই মানা হয় না। বিশ্বে ইসলাম নামে হ-য-ব-র-ল দীনের অনুসরণ চলছে কী?]


৫২. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে আল্লাহ্র নিকট
মুত্তাকীরাই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন
কুরআনে দেখুন, ‘হে মানব! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন ও  যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দুইজন হতে বহু নর-নারী ছড়ায়ে দেন;-৪:১; ৬:৯৮; ৭:১৮৯; ৩৯:৬। হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সে-ই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সকল কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন;-৪৯:১৩। [মুত্তাকীরাই (২:১১৭) অধিক মর্যাদাসম্পন্ন নয় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, [ইতিহাস দেখুন-] খাতামান নবী ৬৩২ খ্রি: ২০ ফেব্রুয়ারি লক্ষাধিক মুসলিম নিয়ে বিদায় হজ্জউদযাপন করলেন। সেখানে তিনি বললেন, ‘সাবধান, দীন ইসলাম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করো না। এ অতিরিক্ততার ফলে তোমাদের পূর্ববতী বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। হে লোক সকল! স্মরণ রাখ! তোমাদের আল্লাহ্ এক, তোমাদের আদি পিতা এক। হুঁশিয়ার! কোন আরবের ওপর অনারবের যেমন প্রাধান্য নেই, তেমনি কোন অনারবের ওপর আরবদেরও কোন প্রাধান্য নেই, কোন শ্বেতাঙ্গের ওপর যেমন কৃষ্ণাঙ্গের প্রাধান্য নেই, তেমনি কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গেরও কোন প্রাধান্য নেই। পরস্পরের মাপকাঠি হচ্ছে একমাত্র আল্ল¬¬াহ্ভীতি (মুত্তাকী) বা সৎকর্ম;-দেখুন-ইসলামের ইতিহাস, কে. আলী রচিত (ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও সম্মান শ্রেণির পাঠ্য)। [বিদায় হজ্জের কাহিণীই কি প্রমাণ করে না যে, ‘কুরাইশ বংশকে শ্রেষ্ঠপ্রমাণের হাদিসগুলো মিথ্যা?]
৫৩. কুরআন অনুসারে জান্নাতিদের দল
কুরআনে দেখুন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একদল হোক যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কার্য নিষেধ করবে; এরাই সফলকাম;-৩:১০৪। আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি; তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তদ্দারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তদ্দ¦ারা তারা দেখে না এবং তাদের কর্ণ আছে, তদ্দ¦ারা তারা শ্রবণ করে না; তারা পশুর ন্যায়, বরং তারা অধিক বিভ্রান্ত। তারাই গাফেল;-৭:১৭৯। কর্ণ, চক্ষু, হৃদয়Ñ তাদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে;-১৭:৩৬। জাহান্নামীরা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তা হলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না;-৬৭:১০। [উপরোক্ত আয়াত অনুসারে কর্ণ, চক্ষু, হৃদয়Ñ এর প্রত্যেকটির সঠিক ব্যবহার যে দল করে তারাই জান্নাতি নয় কী?] 

প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘নবীদের মা ভিন্ন ভিন্ন এবং তাঁদের দীন এক (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-১০/৫৪৭৭। কারো পক্ষেই এ কথা বলা উচিত নয় যে, আমি (মুহাম্মাদ) ইউনূস ইবনে মাত্তা অপেক্ষা উত্তম। .... রাসূল আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বলবে আমি (মুহাম্মদ) ইউনুস ইবনে মাত্তা হতে উত্তম, সে মিথ্যা বলেছে (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৫৪৬৫। বনি ইসরাইল বিভক্ত হয়েছিল ৭২ (বাহাত্তর) দলে, আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ (তিয়াত্তর) দলে। এদের সকল দলই জাহান্নামে যাবে একদল ব্যতীত। সংগীরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সেটি কোন দল?’ রাসূল উত্তরে বললেন, ‘যে দলে আমি ও আমার সংগীরা যার ওপর আছি তার ওপর থাকবে (আবূ দাঊদ, তিরমিযি ও আহমদ);-মেশকাত-১/১৬৩। [রাসূলের মৃত্যুর পর মুসলিমগণ বহু দলে বিভক্ত নয় কী? তারা কুরআনের অনুসরণ করে কী? দুনিয়ার সকল নবী-রাসূল মিল্ল¬তে মুসলিমীনের অন্তর্গত ছিলেন। তা প্রত্যাখ্যান করে নামধারী মুসলিমগণ বিভিন্ন মাজহাব (দল) গঠন করে মুসলিম মিল্লত ধ্বংস করেছে। খাতামান নবীর মৃত্যুর পর মুসলিমরা যে সকল দলে বিভক্ত হয়েছে বিভিন্ন পুস্তক ও ইতিহাস গ্রন্থ থেকে যা পাওয়া গেছে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-]
প্রথম পর্যায়ঃ ১. শিয়া মুসলিম। শিয়া (৬:১৫৯; ১৫:১০; ১৯:৬৯; ৩০:৩২) অর্থ দল। শিয়া মুসলিমরা তিন ওয়াক্ত সালাতে দাঁড়ান, ২. সুন্নী মুসলিম। সূন্নী (১৭:৭৭) অর্থ  আমার আইন, আমার বিধান।  সূন্নী মুসলিমগণ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে দাঁড়ান। 
দ্বিতীয় পর্যায়: (ক) হানাফী মাজহাবী মুসলিম, (খ) শাফী মাজহাবী মুসলিম, (গ) মালেকী মাজহাবী মুসলিম, (ঘ) হাম্বলী মাজহাবী মুসলিম।
তৃতীয় পর্যায়: (ক) কাদেরিয়া তরীকাপন্থি মুসলিম, (খ) চিছতিয়া তরীকাপন্থি মুসলিম, (গ) নকসবন্দীয়া তরীকাপন্থি মুসলিম, (ঘ) মুযাদ্দাদিয়া তরীকাপন্থি মুসলিম।
চতুর্থ পর্যায়: (ক) ওহাবী মুসলিম, (খ) আহম্মদীয়া মুসলিম, (গ) বাহাই মুসলিম, (ঘ) ইসমাইলিয়া মুসলিম, (ঙ) তাবলীগ জামাতী মুসলিম, (চ) আশেকে রাসূল মুসলিম, (ছ) মাইজভান্ডারী মুসলিম, (জ) সুরেস্বরী মুসলিম, (ঝ) বিশ্ব জাকের মুসলিম, (ঞ) আলীয়া নেসাবী মুসলিম, (ট) কওমী নেসাবী মুসলিম ইত্যাদি।
পঞ্চম পর্যায়: (ক) সৌদি মুসলিম, (খ) ইরাকী মুসলিম, (গ) ইরানী মুসলিম, (ঘ) কুয়েতি মুসলিম, (ঙ) আফগানস্তানী মুসলিম, (চ) চীনা মুসলিম (ছ) ভারতীয় মুসলিম, (ছ) বাংলাদেশী মুসলিম ইত্যাদি। [অবশেষে সকল দলই মুসলিমনামটি পছন্দ না হওয়ায় দলের শেষে মুসলিমশব্দটি কর্তন করে অমুসলিম হয়ে গিয়েছে। সে অমুসলিমদের নামÑ‘শিয়া, সুন্নী, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী, কাদেরিয়া, চিছতিয়া, নকসবন্দী, মুযাদ্দেদিয়া, ওহাবী, আহম্মদীয়া, বাহাই, ইসমাইলিয়া, তাবলীগ জামাতী, আশেকে রাসূল, মাইজভান্ডারী, সুরেস্বরী, বিশ্ব জাকের, আলীয়া, কওমী, নেসাবী, সৌদি, ইরাকী, ইরানী, কুয়েতি, আফগানস্তানী, চীনা, ভারতীয়, বাংলাদেশী ইত্যাদি। বিবেকবানেরা চিন্তা করুন,] ‘কথায় কে উত্তম ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা যে আল্লাহ্র প্রতি মানুষকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, ‘আমি তো মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত;-৪১:৩৩। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে যথার্থভাবে ভয় এবং মুসলিম না হয়ে কোন অবস্থায় মরিও না;-৩:১০২। [সু-প্রিয় পাঠক! কুরআনের আয়াত অনুসারে আমাদের কি নামে পরিচয় হওয়া উচিত?]
বিভিন্ন দলে বিভক্ত হওয়ার কারণ
কুরআনে দেখুন: ‘....আল্লাহ্ সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং যারা কিতাব সম্পর্কে মতভেদ সৃষ্টি করেছে নিশ্চয়ই তারা দুস্তর মতভেদে রয়েছে;-২:১৭৬। [কুরআনে যাদের ঐক্যমত নেই তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত।] কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত। সুতরাং কিছু কালের জন্য তাদেরকে স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকতে দাও;-২৩:৫৩। যারা নিজেদের দীনে মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল;-৩০:৩২। [মহান স্্রষ্টা আল্লাহ্র এক কিতাবে ফিরে আসলে এক দল হওয়া সম্ভব নয় কী?
৫৪. নামধারী মুসলিমদের লাইন
সুন্নীদের লাইন-১. আবুবকরক, ২. ওমর, ৩. ওসমান, ৪. আলী, ৫. মুয়াবীয়া, ৬. ইয়ায়ীদ, ৭. মুয়াবীয়া ইবন ইয়াযীদ (দ্বিতীয়া মুয়াবিয়া), ৮. মারওয়ান ইবন আব্দুল মালিক, ৯. আবদুল মালিক ইবন মারওয়ান, ১০. ওয়ালিদ ইবন আব্দুল মালিক, ১১. সুলায়মান ইবন আব্দুল মালিক, ১২. ওমর ইবন আব্দুল আযীয।
শিয়াদের লাইন-১. আলী (ফাতেমা), ২. ইমাম হাসান, ৩. ইমাম হুসাইন, ৪. জয়নুল আবেদীন, ৫. মুহম্মদ আলী-বাকের, ৬. জাফর আস-সাদেক, ৭. মুসা আল-কাযিম, ৮. আলী আল-রেজা, ৯. মুহম্মদ আল জায়েদ, ১০. আলী আল-হাদী, ১১. হাসান আল-আসকারী, ১২. মুহাম্মদ আল-মুনতাযার।
প্রথম পর্যায়ে মুসলিমগণ অমুসলিম হয় ১. শিয়া ও ২. সুন্নী নামে। শিয়ারা অনুসরণ করে -  ১. রাসূল মুহাম্মাদ, ২. আলী, ৩. ফাতেমা, ৪. হাসান ও ৫. হোসেনকে। আর সূন্নীরা অনুসরণ করে - ১. রাসূল মুহাম্মাদ, ২. আবু বকর, ৩. ওমর, ৪. ওসমান ও  ৫. আলীকে।
এ সকল মুশরিক সূন্নীরা নিজেদের দুনিয়ার স্বার্থ হাসিলের জন্য আরও অনুসরণ করে ১. ইমাম আবু হানীফা, ২. ইমাম শাফেয়ী, ৩. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ও ৪. ইমাম মালেককে। এরাই হলো আহ্লুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত। আহ্লুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত তথা কথিত মুসলিমদের ৭২ দলে বিভক্ত দেখায়েছেন- মুল বাতিল দল ৬ টা; যথা-১. শিয়া, ২. খারেজী, ৩. মুতাজেলা, ৪. জাবারিয়া, ৫. মুরজিয়া ও ৬. মুশাব্বিহা। এদের প্রত্যেক দলই নানা উপদলে বিভক্ত; যেমন- শিয়া ৩২ দলে, খারেজী ১৫ দলেমুতাজেলা ১২ দলেজাবারিয়া ৩ দলেমুরাজিয়া ৫ দলে ও  মুশাব্বিহা ৫ দলে, মোট ৭২ দলে। অন্যদিকে আহলে সূন্নাতওয়াল জামাআত পীর, ফকীর ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে বিভক্ত হয়েছে। বাংলাদেশেই রয়েছে শতাধিক রাজনৈতিক দল ও পীরের দল। সকল দলই জান্নাতে যাবার আশা রাখে। কিন্তু কুরআন তন্ন তন্ন করে খুজে উপরোক্ত দলের ইমাম এবং খলিফাদের মধ্যে মুহাম্মাদছাড়া আর কারো নাম পাওয়া যায়নি। সুতরাং বিশ্বের সকল মানুষ আসুন আমরা খাতামান নবী মুহাম্মাদএর অনুসরণ করি। মুহাম্মাদ মুসলিম ছিলেন।
কুরআনে দেখুন, ‘বল, হে কিতাবীগণ! আসুন সে কথায় যা আমাদের ও আপনাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত কারো ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই তাঁর শরিক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকেও আল্লাহ্ ব্যতীত রব হিসেবে গ্রহণ না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক, অবশ্যই আমরা মুসলিম;-৩:৬৪। বল, ‘আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের রব আল্লাহ্রই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম;-৬:১৬২-১৬৩। বল, ‘আমি তো আদিষ্ট হয়েছে, আল্লাহ্র আনুগত্যে একনিষ্ট হয়ে তাঁর ইবাদত করতে; ‘আরও আদিষ্ট হয়েছি, আমি যেন মুসলিমদের অগ্রণী হই;-৩৯:১১-১২। [এক আল্লাহ্ ও  রাসূলে বিশ্বাসীরা মুসলিম ব্যতীত অন্য নামে পরিচয় দিতে পারে কী?
৫৫. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে মানুষ নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী
কুরআনে দেখুন, ‘তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করে দেন;-৪২:৩০। অকল্যাণ যা তোমার হয় তা তোমার নিজের কারণে;-৪:৭৯। মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়ায়ে পড়ে; যার ফলে তাদেরকে তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে;-৩০:৪১। [দেশের প্রায় তিন লক্ষ মসজিদের ইমামদের পথ ধরে কুরআনের আইন বর্জন করে ভোট দিয়ে এম.পি-মন্ত্রী বানাই। তাদের অধিকাংশই আমাদের শোষণ আর শাসন করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়। আমরা তা বোকার মত দেখি কেন? আল্লাহ্কে ভয় না করে আমরা যাদের ভোট দিয়েছি তাদেরকেই ভয় করি কেন?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘বান্দার প্রতি যে দুঃখ পৌঁছে থাকে চাই বড় হোক, চাই ছোট হোক তা নিশ্চয়ই অপরাধের কারণে এবং যা আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেন তা এ অপেক্ষা অধিক। এর সমর্থনে রাসূল এ আয়াত পাঠ করলেন, ‘তোমাদের প্রতি যে বিপদ পৌঁছে তা তোমাদের কৃতকর্মের দরুন, আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেন অনেক (তিরমিযি);-মেশকাত-৪/১৪৭২। [দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তা জনগণের হাতের তৈরি নয় কী?]


৫৬. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে আল্লাহ্র কালাম বিকৃতির পরিণাম জাহান্নাম
কুরআনে দেখুন, ‘তাদের জিহ্বা মিথ্যা বর্ণনা করে যে, মংগল তাদেরই জন্য। নিঃসন্দেহে তাদের জন্য আছে অগ্নি এবং তাদেরই সর্বাগ্রে তাতে নিক্ষেপ করা হবে;-১৬:৬১। হে রাসূল! .... শব্দগুলি যথাযথ সুবিন্যস্ত থাকার পরও তারা সেগুলির অর্থ বিকৃত করে। .... তাদের জন্য আছে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা আর আখিরাতে রয়েছে তাদের জন্য মহাশাস্তি;-৫:৪১। সেই দিন দুর্ভোগ মিথ্যাবাদীদের জন্য;-৭৭:১৫, ১৯, ২৪, ২৮, ৩৪, ৩৭, ৪০,৪৫, ৪৭, ৪৯। আল্লাহ্র কালামের কোন পরিবর্তন নেই;-১০:৬৪; ৬:১১৫; ১৮:১৭। [আল্লাহ্র কালাম পরিবর্তন করা যাবে কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘রাসূল বলেছেন, ‘আমার পক্ষ হতে মানুষের নিকট পৌঁছাতে থাক যদিও (কুরআনের) একটি মাত্র আয়াত হয়। .... কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করবে সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্তুত করে নেয় (বুখারি);-মেশকাত-২/১৮৮। যে ব্যক্তি তার জানা এলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে তা গোপন করেছে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেওয়া হবে (আহ্মদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযি ও ইবনু মাযাহ);-মেশকাত-২/২১২। যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে তৈরি করে নেয় (তিরমিযি ও ইবনু মাযাহ);-মেশকাত-২/২১৭।
আল্লাহ্র কালাম পরিবর্তন বা বিকৃতির কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো। যেমন - ১. কুরআন (৪৭:২৪), বিকৃত কুরআন শরীফ। ২. রামাযান (২:১৮৫), বিকৃত রমযান শরীফ। ৩. সালাতে দাঁড়াও (২:১১০), বিকৃত নামাজ পড়, নামাজ আদায় কর, সালাত আদায় কর। ৪. যাকাত দান কর (৫:১২), বিকৃত যাকাত আদায় কর। ৫. সিয়াম সাধনা কর (২:১৮৩), বিকৃত রোযা রাখ, ‘সিয়াম পালন কর। ৬. সূন্নাত আল্ল¬¬¬¬াহ্র (৩৩:৬২; ১৭:৭৭; ৩৩:৩৮; ৩৫:৪৩; ৪০:৮৫; ৪৮:২৩), ‘বিকৃত সূন্নাত রাসূলের। ৭. সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর (২:৪৫, ১৫৩), বিকৃত করে নামাজে কুরআন পড়। ৮. সদ্কা দাতার জন্য দুআ কর (৯:১০৩), বিকৃত নামাজ শেষে দুআ কর। ৯. আল্লাহ্র স্বরণে সালাতে দাঁড়াও (২০:১৪)বিকৃত  কাবা, সূর্য, চন্দ্র, দিবস, রজনী, পীর, পুরহীত, পন্ডিত, দরবেশ বা, সন্যাসীর ম্মরণে নামাজ পড়; আরামের (তারাবির) এবং আনান্দ উৎসবের (ঈদের) নামাজও পড়। ১০. সালাতের স্বর উঁচ্চ করো না, নিচু করো না, মধ্যম স্বরে সালাত (প্রার্থনা) কর (১৭:১১০), বিকৃত নামাজের স্বর উচ্চ বা নিরব অথবা উচ্চ-নিরব দুই রকমই কর। ১১. আল্লাহ্র সাথে কাউকে ডেকো না (৭২:১৮), সালাত আল্লাহ্র জন্য (৬:১৬২), বিকৃত আছ্লাতু, আছ্ছালামু ইয়া রাসূলাল্লাহ্। নামাজের তাশাহুদে আল্লাহ্র সাথে নবীকে ডাক ও নবীর নামে সূন্নত সালাত পড়। আল্লাহ্র নির্দেশ (৭২:১৮) অমান্য করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্বল। ১২. প্রার্থনা শেষে রব্বানা ওয়া তা ক্বাব্বাল্ দুআ-য়ি (১৪:৪০), বিকৃত প্রার্থনা শেষে আমিন বা, আমিন-আমিনবল। ১৩. সালাত শেষে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের সম্পদ হতে সমস্যার সমাধান কর (৪২:৩৮), বিকৃত নামাজ শেষে মুসলল্ল¬¬¬ীদের বিদায় কর। ১৪. আল্ল¬¬¬াহ্কে মনে মনে সবিনয়ে ও অনুচ্চারিত স্বরে যিকির কর (৭:২০৫), বিকৃত উচ্চ স্বরে যিকর কর, যিকিরে জলি, যিকিরে খোফির প্রচলন কর। ১৫. কখনও বলো না, ‘তিন, নিবৃত হও (৪:১৭১), বিকৃত রুকু ও সিজদায় তিন বার দুআ কর, অযুতে হাত, পা ও মুখমন্ডল তিন বার ধৌত কর, তিন বার কুলি কর, বিয়েতে তিনবার কবূল বল এবং যে কোন অনুষ্ঠানে তিনকে পুরস্কৃত কর। ১৬. তোমরা সালাতে যা বল, তা না বুঝা পর্যন্ত সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না (৪:৪৩), বিকৃত নামাজে অর্থ না বুঝে ফাতিহার সাথে অন্য সূরাহ পড়। ১৭. যা বুঝ না তার অনুসরণ করো না (১৭:৩৬), বিকৃত সওয়াবের আশায় না বুঝে কুরআন পড়। ১৮. সালাতে বিনীত ভাবে দাঁড়াও (২:২৩৮), বিকৃত বাম হাতের ওপর ডান হাত রেখে শক্ত করে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়াও। ১৯. প্রত্যেক সালাতে লক্ষ্য স্থির রাখ এবং বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহ্কে ডাক (৭:২৯), বিকৃত- না বুঝে কুরআন পড় ও তোতাপাখির মত শেখানো কথা বল। ২০. [নবী জীবিত থাকা কালে] তোমরা নবীকে যথাযথ ভাবে সালাম জানাও [অর্থাৎ নবীর কাজে আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য ও সহযোগীতা কর (৩৩:৫৬)], বিকৃত মৃত নবীর নামে দরূদ পড়। ২১. মুসল্লীদের অর্থের সদ্কা আদায় কর ও আটটি খাতে ব্যয় কর (৯:৬০, ১০৩), বিকৃত সদ্কা বা যাকাত ধনীর জন্য, লিল্ল¬¬¬াহ্ বোর্ডিং- এ ও আতœীয়-স্বজনকে দিলে দ্বিগুণ সওয়াব। ২২. বোধশক্তিসম্পন্নরা ব্যতীত অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না (৩:৭), বিকৃত নির্বোধরাও বেহেস্তী জেওর, ফাজায়েলে আমল ও মাসালার কিতাব থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর। ২৩. কুরআন শিক্ষা গ্রহণের জন্য সহজ (৫৪:১৭, ২২, ৩২, ৪০)বিকৃত হুজুরদের (হুজুর অর্থ প্রভু, রব, প্রতিপালক বা পালন কর্তার) তৈরি ইজমা-কিয়াস ঝুঝা সহজ। ২৪. তালাক দিবে ইদ্দাতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তিন মাসে তিন বারে (৬৫:৪; ২:২২৯; ৬৫:১), বিকৃত রাগের মাথায় একবারে তিন তালাক দিলেও নিরাপরাধ স্ত্রী তালাক হয়। ২৫. কুরআনের নাম হাদিস (১৮:৬; ৩৯:২৩; ৪৫:৬), বিকৃত, ‘রাসূলের কথা দীনের হাদিস। ২৬. আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতের বাদশা (৫৩:২৫), বিকৃত, ‘রাসূল দুই জাহানের বাদশা। ২৭. প্রত্যেকে নিজ নিজ পাপের ভার বহন করবে (৩৫:১৮), বিকৃত রাসূলের সুপারিশে আমরা জান্নাতে যাব। ২৮. বৈধ ও হালাল খাবার ভক্ষণ কর (১৬:১১৪), বিকৃত, অবৈধ ও হারাম অর্থ মোনাজাত করে ভক্ষণ কর। ২৯. কবর আযাব নেই (৩৬:৫১-৫২) শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে (২:৮৫), বিকৃত মাটির কবরেও শাস্তি হয়। ৩০. আল্লাহ্ই মাওলানা (২:২৮৬; ৯:৫১; ৬৬:২), বিকৃত মাদ্রাসায় পড়য়াদের নামের আগে মাওলানালেখ, ‘মাওলানা মুহাম্মাদবল। ৩১. রাব্বি আওযূবিকা মিন হামাযাতিশ্ শাইয়াত্বিন। ওয়া আওযূবিকা রাব্বি আয় ইয়া দূরূন (২৩:৯৭-৯৮), বিকৃত আঊযূ বিল্ল¬¬াহি মিনাশ শাইত্বোয়ানির রাযীম (১৬:৯৮)৩২. সালামুন আলাইকুম (৫:৫৪), বিকৃত আচ্ছালামু আলাইকুম। ৩৩. সকল প্রাণী আল্লাহ্র উম্মত (৬:৩৮), রাসূলও উম্মত (১৩:৩০), বিকৃত আমরা রাসূলের উম্মত। ৩৪. সকল মানুষ আল্লাহ্র খলিফা (২:৩০; ৬:১৬৫; ১০:১৪; ২৭:৬২; ৩৫:৩৯), বিকৃত আবুবকর, ওমর, ওসমান ও আলী রাসূলের খলিফা। ৩৫. আল্লাহ্ই দুনিয়া ও আখিরাতের ওলী (১২:১০১; ২:২৫৭), বিকৃত পীরগণ তাদের মুরীদদের ওলী। ৩৬. রাসূল বলেন, ‘আমার কালাম আল্লাহ্র কালামকে রহিত করে না....;-মেশকাত-১/১৮৫, ইমাম হানীফা, ‘কুরআনের আয়াতকে রাসূলের কথা দ্বারা রহিত করেন;-মেশকাত-১/১৮৫ নং হাদিসের এর ব্যাখ্যা। [ইসলামের প্রচলিত ধারক, বাহক ও প্রচারকগণ ফিরআওনের মত বলেন,] ‘আমি যা বুঝি, আমি তোমাদের তাই বলছি। আমি তোমাদের কেবল সৎপথই দেখায়ে থাকি;-৪০:২৯। [আসলেই তারা আমাদেরকে সৎপথ দেখাচ্ছেন কী?]
৫৯. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে উচ্চ পর্যায় তাকাবে না
কুরআনে দেখুন, ‘তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনও প্রসারিত করো না তার প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, তদ্বারা তাদের পরীক্ষা করার জন্য। তোমর রব প্রদত্ত রিয্ক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী;-২০:১৩১। আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না; তুমি মুমিনদের জন্য তোমার পক্ষপুট অবনমিত কর;-১৫:৮৮। [আল্লাহ্ যার যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।]
 প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তিকে দেখে যাকে ধন-সম্পদে, স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে অধিক দেয়া হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চেয়ে নিম্ন মানের ব্যক্তির দিকে তাকায়। .... তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিম্ন অবস্থার লোকের প্রতি তাকাও। এমন ব্যক্তির দিকে তাকাইও না যে, তোমাদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের। যদি এ নীতি অবলম্বন কর তা হলে আল্লাহ্ তোমাকে যে নেয়ামত দান করেছেন, তাকে ক্ষুদ্র বা হীন মনে হবে না (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৯/৫০১৩। [মুসলিমগণ কুরআন-হাদিসের নীতির অনুসরণ করেন কী?]
৬০. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে মুখে ভর দিয়ে উঠানো হবে
কুরআনে দেখুন, ‘আল্লাহ্ যাদের পথ-নির্দেশ করেন তারা তো পথপ্রাপ্ত এবং যাদের তিনি পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কাউকেও তাদের আঊলিয়া পাবে না। কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, মুক ও বধির করে। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম; যখনই তা স্তিমিত হবে আমি তখনই তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দিব;-১৭:৯৭। যাদেরকে মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্র করা হবে, তারা স্থানের দিক দিয়ে অতি নিকৃষ্ট এবং অধিক পথভ্রষ্ট;-২৫:৩৪। তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন শ্রেণিতেÑ ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! এবং বাম দিকের দল; কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী, তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত;-৫৬:৭-১১।
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘এক ব্যক্তি রাসূলকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিয়ামতের দিন কাফিরদের কিভাবে মুখের ওপরে হাঁটিয়ে একত্রিত করা হবে? তিনি উত্তরে বললেন, ‘যিনি দুনিয়াতে মানুষকে দুই পায়ে চালিয়েছেন তিনি কি কিয়ামতের দিন তাকে মুখের ওপরে চলাবার ক্ষমতা রাখেন না? (বুখারি-মুসলিম);-১০/৫৩০৩। কিয়ামতের দিন মানুষকে তিন দলে বিভক্ত করা হবে। একদল আসবে সওয়ারীতে, একদল পদব্রজে এবং একদল আসবে নিজের মুখের ওপরে ভর করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল। তারা নিজেদের চেহারার ওপরে ভর করে কিভাবে চলবে? তিনি বললেন; নিশ্চয়ই যিনি তাদের পদযুগলে চালিত করতে পারেন, তিনি তাদের চেহারার ওপরে ভর দিয়ে চালাবার ক্ষমতা রাখেন। তোমরা জেনে রাখ, তারা নিজেদের মুখের ওপরে চলাকালে প্রতিটি টিলা-টংকর ও কাঁটা-কুট ইত্যাদি হতে আতœরক্ষা করে চলবে (তিরমিযি ও নাসাঈ);-মেশকাত-১০/৫৩১২; ১০/৫৩১৪। [আমাদের দৃশ্যমান- শামুক ও ঝিনুক মুখের ওপর ভর দিয়ে চলে কী?]
৬১. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে ইমান ও কিতাব
কুরআনে দেখুন, ‘আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা বলে, ‘আমারা আল্লাহ্ ও  আখিরাতে ঈমান এনেছি, কিন্তু তারা মুমিন নয়;-২:৮। এভাবে আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি রূহ তথা আমার নির্দেশ; তুমি তো জানতে না কিতাব কি এবং ঈমান কি! পক্ষান্তরে আমি একে (কিতাব এবং ঈমানকে) করেছি নূর (আলো) যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি; তুমি তো প্রদর্শন কর কেবল সরল পথ (আল্ল¬¬াহ্র কিতাব)Ñ সেই আল্ল¬¬াহ্র পথ যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার মালিক;-৪২:৫২-৫৩। [মুখে বিশ্বাসের সাথে সাথেই আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নামই ঈমান নয় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘ইসলাম হলো মুখে কালেমা উচ্চারণ করা। আর ঈমান হলো আমালুস্ সালিহ্ [সৎকর্ম] (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৮/৩৮৫৩। [অবশ্যই সৎকর্ম করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন,] ‘যারা ইমান আনে (আল্লাহ্র নির্দেশমত কাজ করে) আল্লাহ্ তাদের ওলী, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে বের করে আলোতে নিয়ে যান। আর যারা কুফরি করে (মানব রচিত আইন মেনে চলে) তাগূত তদের আঊলিয়া, এরা তাদেরকে আলো (কুরআন) থেকে অন্ধকারে (মানব রচিত কিতাবে) নিয়ে যায়। তারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে;-২:২৫৭। [আল্লাহ্র কিতাবের পুরাপুরি অনুসরণ করার নামই ঈমান নয় কী?]
৬৪. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে যিনার শাস্তি বেত্রাঘাত
 কুরআনে দেখুন, ‘এ একটি সূরা, এ আমি অবতীর্ণ করেছি এবং এর বিধানকে ফরয করেছি, এতে আমি অবতীর্ণ করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। যিনাকারিণী ও যিনাকারীÑ তাদের প্রত্যেককে একশত (১০০) বেত্রাঘাত করবে, আল্লাহ্র বিধান কার্যকরীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদিগেকে প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহে ও আখিরাতে বিশ্বাসী হও; মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে;-২৪:১-২। ‘....(মুমিন দাসী) বিবাহিত হওয়ার পর যদি তারা ব্যভিচার করে তবে তাদের শাস্তি স্বাধীনা নারীর অর্ধেক (৫০ বেত্রাঘাত)....;-৪:২৫। হে নবী-পতিœগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ ব্যভিচার করলে তাকে দ্বিগুণ (২০০ বেত্রাঘাত) শাস্তি দেয়া হবে ....;-৩৩:৩০। যারা আল্লাহ্র সাথে কোন ইলাহ্কে ডাকে না। আল্লাহ্ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না এবং যিনা করে না। যে এগুলি করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়;-২৫ঃ৬৮-৬৯। [যিনার শাস্তি স্বাধীন ব্যক্তির জন্য ১০০ বত্রাঘাত, নবীর স্ত্রীদের জন্য ২০০ বেত্রাঘাত এবং দাসদাসীদের জন্য ৫০ বেত্রাঘাত। আল্লাহ্র নাম দিয়ে কাউকে হত্যা করা যাবে কী? জীবনের অর্ধেক বা দ্বিগুণ করা সম্ভব হয় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘যদি তোমাদের কোন দাসী যিনা করে আর তা প্রকাশ হয়ে যায়, তখন তাকে চাবুক মার। কিন্তুু তাকে তিরস্কার করা যাবে না। পুনরায় যদি যিনা করে এবারও তাকে র্দোরা লাগাও (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৭/৪২৮০। ব্যাখ্যাঃ দাসী চাই বিবাহিতা হোক কিংবা অবিবাহিতা, উভয় অবস্থায় তকে চাবুক মারতে হবে, তাও স্বাধীনা নারীর অর্ধেক-পঞ্চাশ দোররা। একবার রাসূলের একটি দাসী যিনা করেছিল। তাকে চাবুক মারার জন্য আলীকে হুকুম দিয়েছিলেন (মুসলিম);-মেশকাত-৭/৪২৮১। [উপরোক্ত হাদিসগুলো দীন ইসলামের প্রচলিত ধারক, বাহক ও প্রচারকগণ অনুসরণ করেন কী?]
৬৬. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে শূকুর ব্যতীত সকল পশুর মাংস হালাল
কুরআনে দেখুন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মৃত জন্তু, রক্ত, শূকর মাংস এবং যার ওপর আল্লাহ্র নাম ব্যতীত অন্যের নাম উচ্চারিত হয়েছে, তা তোমাদের জন্য হারাম করেছেন....;-২:১৭৩; ৫:৩; ৬:১৪৫ ও ১৬:১১৫ দ্রষ্টব্য। [এছাড়াও সকল অবৈধ উপার্জন মুমিনদের জন্য হারাম করা হয়েছে। যেমন- সুদ, ঘুষ, চুরি, অন্যায়ভাবে কোন সম্পদ আতœসাৎ ইত্যাদি।]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘আল্লাহ্ যা হালাল বলেছেন, তাই হালাল আর তিনি যা হারাম করেছেন তাই হারাম আর যে বস্তু সম্পর্কে নিরব রয়েছেন তা মার্জনীয় (আবূ দাঊদ);-মেশকাত-৮/৩৯৬৭। আল্লাহ্ তাঁর কিতাবে যা কিছু হালাল বলে উল্লেখ করেছেন তাই হালাল এবং তাঁর কিতাবে যা কিছু হারাম করেছেন তাই হারাম (ইবনু মাযাহ ও তিরমিযি);-মেশকাত-৮/৪০৪৪। [অবৈধ উপার্জনের বৈধতা ইসলামে আছে কী?]
কুরআনে দেখুন, ‘স্মরণ কর, যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল আল্লাহ্ তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, ‘তোমরা  তা (আল্লাহ্র কিতাব) মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না। এর পরও তারা তা অগ্রাহ্য করে ও তুচ্ছ মুল্যে বিক্রয় করে; সুতরাং তারা যা ক্রয় করে, তা কত নিকৃষ্ট;-৩:১৮৭। তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত;-৫:৪২। রাব্বানীগণ ও প-িতগণ কেন তাদেরকে পাপ কথা বলতে ও অবৈধ ভক্ষণে নিষেধ করে না? এরা যা করে নিশ্চয়ই তাও নিকৃষ্ট;-৫:৬৩।


৬৭. দজ্জালের নয় আল্লাহ্র কিতাবের অনুসরণ কর
কুরআনে দেখুন, ‘তোমাদের রবের নিকট হতে তোমর নিকট স্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই এসেছে। সুতরাং কেউ তা দেখলে তা দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে, আর কেউ না দেখলে তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে....;-৬:১০৪। যারা আল্লাহ্র আয়াত প্রত্যাখ্যান করে তুমি কখনও তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না- তা হলে তুমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে;-১০:৯৫। আর যে ব্যক্তি এখানে (কুরআনের বিষয়ে) অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট;-১৭:৭২। আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য; অতঃপর যে সৎপথ অবলম্বন করে সে তা করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে বিপথগামী হয় সে তো বিপথগামী হয় নিজেরই ধ্বংসের জন্য;-৩৯:৪১। ক্ষতিগ্রস্ত তারাই, ‘দুনিয়ার জীবনে যাদের প্রচেষ্টা প- হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারাই সৎকর্ম করছে;-১৮:১০৪। আল্লাহ্র নিকট নিকৃষ্ট জীব সে-ই বধির ও মূক যারা কিছুই বুঝে না;-৮:২২। [ক্ষতিগ্রস্তরাই কুরআন প্রচার করে না। কারণ যখন জিজ্ঞাসা করা হবে] তোমাদের রব কী অবতীর্ণ করেছিলেন?’ তারা বলবে, ‘মহাকল্যাণ;-১৬:৩০।’ [মহকল্যাণ কুরআন না তাবলীগে নিসাব?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘দজ্জাল নিশ্চয়ই কানা হবে কিন্তু আল্লাহ্ কানা নয় (বুখারি-মুসলিম, আবু দাঊদ);-মেশকাত-১০/৫২৬০, ৫২৫১, ৫২৪৯, ৫২৩৮, ৫২৩৭, ৫২৩৬। তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তিই সরাসরি দলীল- প্রমাণে দজ্জালের মুকাবেলা করবে। তখন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার পরিবর্তে আল্ল¬¬¬¬¬াহ্ই হবেন সহায়ক (মুসলিম);-মেশকাত-১০/৫২৪১ ও ৫২৫৭। [আল্ল¬¬¬¬¬াহ্ই হবেন সহায়ক অর্থাৎ কুরআনই হবে একমাত্র দলিল।] আমার কাছে ঈমানের দিক দিয়া সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় ঐ সম্প্রদায়, যারা আমার পরে জন্মগ্রহণ করবে। যারা সহিফা (কুরআন) পাবে, তাতে আল্লাহ্র যেসকল বিধানসমূহ লিপিবন্ধ রয়েছে, তার ওপর ঈমান আনবে;-মেশকাত-১১/৬০২৮। [দজ্জাল অর্থ চরম মিথ্যাবাদী, ধোকাবাজ ও প্রতারক। মুসলিমদের দীনের দলিল কুরআন ব্যতীত আরও কোন সহায়ক গ্রন্থ আছে কী?]
৭৩. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে মানুষ ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে নয়
কুরআনে দেখুন, ‘আমার রব ভুল করেন না এবং বিস্মৃতও হন না;-২০:৫২। মূসা ও তার সংগী যখন দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে পৌঁছাল তারা নিজেদের মৎসের কথা ভুলে গেল;-১৮:৬১। মূসার সংগী বলল, ‘যখন শিলাখ-ে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মৎসের কথা ভুলে গিয়েছিলাম;-১৮:৬৩। মসূা বলল, ‘আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না;-১৮:৭৩। আমি তো ইতিপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম, কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল;-২০:১১৫। যদি ভুলে যাও তবে তোমার রবকে স্মরণ কর;-১৮:২৪। নিশ্চয়ই আল্লাহ্র প্রতিশ্রুটি সত্য, তুমি তোমার ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর;-৪০:৫৫। সুতরাং জেনে রাখ, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নর-নারীদের ত্রুটির জন্য;-৪৭:১৯। [রব এবং রবের কিতাব নির্ভুল। সুতরাং আমাদের ভুল-ত্রুটি রবের মহাগ্রন্থ কুরআন দ্বারা সংশোধন করে নেওয়া উচিত নয় কী?]

প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘(রাসূল ফজরে) যখন সালাত শেষ করলেন; বললেন, ‘আমি অ-শৌচ ছিলাম অথচ গোসল করতে ভুলে গিয়েছিলাম (আহ্মদ ও মালেক);-মেশকাত-৩/৯৪৪। রাসূল বলেছেন, আমিও তোমাদের ন্যায় একজন মানুষই। আমিও ভুলে থাকি তোমরা যেরূপ ভুলে থাক। সুতরাং আমি যখন কিছু ভুলে যাই তখন তোমরা আমাকে স্মরণ করায়ে দিবে (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৩/৯৫০। রাসূল ইমামতি করলেন এবং ভুল করলেন (তিরমিযি);-মেশকাত-৩/৯৫৩। [মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। আমরা কেউই ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে নই। কুরআনের সাহায্যে আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন করে নেওয়া উচিত নয় কী?]
৭৪. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে একজনের ইবাদত অন্যজনে করতে পারে না
কুরআনে দেখুন, ‘কোন বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না; কোন ভারাক্রান্ত ব্যক্তি যদি কাউকেও এ বহন করতে আহ্বান করে তবে তার কিছুই বহন করা হবে নাÑ নিকট আতœীয় হলেও;-৩৫:১৮। আল্লাহ্র শাস্তির মুকাবিলায় তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদের কোন কাজে আসবে না; তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেথায় তারা স্থায়ী হবে;-৫৮:১৭।
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘কেউ কারো পক্ষ হতে সিয়াম সাধনা করতে পারে কি না! কেউ কারো পক্ষ হতে সালাতে দাঁড়াতে পারে কি না! উত্তরে তিনি বলতেন, ‘কেউ কারো পক্ষ হতে সিয়াম সাধনা করতে পারে না এবং কেউ কারো পক্ষ হতে সালাতে দাঁড়াতে পারে না (মালেক);-মেশকাত-৪/১৯৩৭। [বাবা-মা জীবিত অবস্থায় আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধ মানেনি। এখন আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্য করে মৃত বাবা-মার জন্য কাঙ্গালী ভোজ করলে হবে কী?]

৭৫. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি মুত্তাকী
কুরআনে দেখুন, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সে-ই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী;-৪৯:১৩। তারা এর (মসজিদুল হারামের) তত্ত্বাবধায়ক নয়; শুধু মুত্তাকীগণই এর (মসজিদুল হারামের) তত্ত্বাবধায়ক; কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা অবগত নয়;-৮:৩৪। [২:১৭৭ আয়াতের গুনাবলী সম্পন্ন মুত্তাকী বর্তমানে দেখা যায় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘রাসূলকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কোন ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা সম্মানিত?’ তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নিকট সর্বাপেক্ষা মুত্তাকী, সে-ই অধিক সম্মানিত (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৯/৪৬৭৬। দীন ও তাক্ওয়া ছাড়া একজনের ওপর আরেক জনের কোনই মর্যাদা নেই (আহ্মদ ও বায়হাকী);-মেশকাত-৯/৪৬৯৩। [আল্লাহ্র নিকট মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার জন্য আমাদেরকে মুত্তাকী (২:১৭৭) হওয়া উচিত নয় কী?

৭৬. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে একদল হওয়ারনির্দেশ
কুরআনে দেখুন, ‘তোমরা সকলে আল্লাহ্র রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। .... তোমাদের মধ্যে এমন একদল হোক যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎকার্যে নিষেধ করবে; তারাই সফলকাম। তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা তাদের নিকট স্পষ্ট আয়াত আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে;-৩:১০৩-১০৫। আমার বান্দাগণের মধ্যে একদল ছিল....আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্য্যরে কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হলো সফলকাম;-২৩:১০৯-১১১। [এক আল্লাহ্, এক রাসূল, এক কিতাব! মুসলিমদের মধ্যে বহু দল কেন?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন,‘সকল মুমিন এক ব্যক্তির মত, যদি তার চক্ষু অসুস্থ হয় তখন তার সর্বঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে (মুসলিম);-৯/৪৭৩৭। একজন মুমিন আর একজন মুমিনের জন্য এক গৃহের মত, যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় রাখে (বুখারি-মুসলিম);-৯/৪৭৩৮। [হানাফি, মালকি, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক নয়, বরং একদল মুসলিম হিসেবে কাজ করা উচিত নয় কী?]

৭৭. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে ব্যয়ের জন্য উৎসাহ্ দান
কুরআনে দেখুন, ‘যারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যদানা। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন....;-২:২৬১। তারা আল্লাহ্ ও আখিরাতে বিশ্বাস করলে এবং আল্লাহ্ তাদেরকে যা প্রদান করেছেন তা হতে ব্যয় করলে তাদের কী ক্ষতি হতো?;-৪:৩৯। কেউ কোন সৎকার্য করলে সে তার দশ গুণ পাবে এবং কেউ কোন অসৎ কার্য করলে তাকে শুধু তারই প্রতিফল দেওয়া হবে, ....;-৬:১৬০।  আল্লাহ্র পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে;-৮:৬০। তোমরা আল্লাহ্র পথে কেন ব্যয় করবে না? আকাশম-লী ও পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহ্রই;-৫৭:১০। দালশীল পুরুষ ও দানশীল নারীগণকে ....দেয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার;-৫৭:১৮। আকাশম-লী ও পৃথিবীর ধন-ভা-ার তো আল্লাহ্রই;-৬৩:৭। [পৃথিবীতে এসেছি শুন্য হাতে, পরপারে যাবো শুন্য হাতে। সুতরাং ব্যয় করলে হারাবার ভয় কিসের?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ উত্তমরূপে মুসলিম হয় তখন তার জন্য প্রত্যেক সৎকাজÑ যা সে করে থাকে, তার দশগুণ হতে সাত শতগুণ পর্যন্ত লেখা হয়ে থাকে। আর তার অসৎকাজÑ যা সে করে থাকে, তার অনুরূপই লেখা হয় (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-১/৪০। প্রত্যেক সৎকাজ দশগুণ হতে সাত শত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয় (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৪/১৮৬৩। আল্লাহ্ সৎকাজ তার দশগুণ হতে সাতশত গুণ বরং বহুগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন; আর অসৎ কাজ তার এক গুণ মাত্র (বুখারি);-মেশকাত-৫/২২৬৩। যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ সম্পাদন করে আল্লাহ্ তার জন্য তা দশ গুণ হতে সাত শতগুণ পুণ্যরূপে লেখেন .... আর যে পাপের সংকল্প করে অতঃপর তা সম্পাদন করে আল্লাহ্ তার জন্য তাকে একটি মাত্র পাপরূপে লেখেন (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৫/২২৬৪। [হাদিসগুলো কুরআনের সাথে সংগতিপূর্ণ; বিধায় সৎকাজের পরিমাণ কমে গেছে?]
 ৭৮. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে প্রত্যেক মুসলিমের ওপর সদ্কা ফরয
কুরআনে দেখুন, ‘আমি তোমাদের যে রিয্ক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে, ‘আমার রব! আমাকে আরও কিছুকালের জন্য অবকাশ দিলে আমি সদ্কা দিতাম এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম;-৬৩:১০। মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সদ্কা করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রুপ করে, আল্লাহ্ তাদেরকে বিদ্রুপ করেন; তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে;-৯:৭৯। [উপরোক্ত আয়াত দরিদ্র শ্রমিকদের খুমুসসহ অতিরিক্ত স্বেচ্ছাধীন সদ্কা ইমামের নিকট দেওয়ার প্রমাণ। ইমামকে স্বাধীনভাবে সদ্কা আদায়-বণ্টণের (৯:৬০, ১০৩) ব্যবস্থা করা উচিত নয় কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর সদ্কা করা অবশ্যই কর্তব্য। সাথীরা জিজ্ঞাসা করলেন: যদি সদ্কা করার কিছু না পায়? তিনি বললেন, ‘তখন সে যেন আপন হাতে কাজ করে। অতঃপর তা দ্বারা নিজেও উপকৃত হয় এবং সদ্কা করে। তাঁরা বললেন, ‘সে যদি তা করতে না পারে?’ তিনি বললেন, ‘তখন সে যেন উৎপীড়িত অভাবগ্রস্তের সাহায্য করবে। তাঁরা বললেন, ‘সে যদি এরূপও করতে না পারে?’ তিনি বললেন, ‘তখন সে যেন ভালো কাজের উপদেশ দেয়। তাঁরা বললেন, ‘সে যদি তাও করতে না পারে (অর্থাৎ সে যদি বোবা হয়, কথা বলতে না পারে)?’ তিনি বললেন, ‘তখন সে যেন অন্তত: মন্দ কাজ হতে বিরত থাকে। এ-ই তার জন্য সদ্কা (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৪/১৮০১। [একটি মহল্লার ৩০-চল্লিশটি পরিবার- সকলেই সদ্কা করলে সেই সদকা নিবে কে? নিবে ইমাম।]
৭৯. বাধ্যতামূলক ভাবে যাকাত-সদকা আদায়
কুরআনে দেখুন, ‘অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের যেখানে পাবে হত্যা করবে, তাদের বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে থাকবে। কিন্তু যদি তারা তওবা (ক্ষমা প্রার্থনা) করে, সালাতে দাঁড়ায় এবং যাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালূ;-৯:৫। আরবদের কেউ কেউ, যা তারা আল্লাহ্র পথে ব্যয় (যাকাত-সদ্কা দান) করে তা অর্থদ- বলে মনে করে এবং তোমাদের (আদায়কারীদের) ভাগ্য বিপর্যয়ের প্রতীক্ষা করে। মন্দ ভাগ্যচক্র তাদেরই হোক। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আরবদের কেউ কেউ আল্লাহে ও আখিরাতে ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় (যাকাত-সদ্কা দান) করে তাকে আল্লাহ্ ও রাসূলের দুআ লাভের উপায় মনে করে। বাস্তবিকই তা তাদের জন্য আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের উপায়; আল্লাহ্ তাদেরকে নিজ রহমতে দাখিল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালূ;-৯:৯৮-৯৯।

প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘একবার গ্রাম্য আরবদের কতক লোক রাসূলের নিকট এসে বলল; সদ্কা আদায়কারী লোকেরা আমাদের নিকট গিয়ে আমাদের ওপর অবিচার করেন। রাসূল বললেন, ‘তোমরা তোমাদের সদ্কা আদায়কারীকে সন্তুষ্ট রাখবে। তারা বলল, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! যদিও তারা আমাদের প্রতি অবিচার করে? রাসূল বললেন, ‘তোমরা তোমাদের সদ্কা আদায়কারীকে সন্তুষ্ট রাখবে যদিও তোমাদের ওপর অবিচার করা হয় (আবূ দাঊদ);-মেশকাত-৪/১৬৯১। বশির বিন খাসাসিয়া বলেন, ‘আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! সদ্কা আদায়কারীরা আমাদের প্রতি অবিচার করে থাকেন। সুতরাং আমরা কি অবিচার পরিমাণ আমাদের মাল গোপন করতে পারি? রাসূল বললেন, ‘না! (আবূদাঊদ);-মেশকাত-৪/১৬৯২। [ইমাম সাহেবগণ! আপনারা সত্যি কি রাসূলের অনুসরণ করেন?]
৮০. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে সদ্কার প্রাপক এবং যার জন্য তা হালাল নয়
কুরআনে দেখুন, ‘নিশ্চয়ই সদ্কা ১. ফকির, ২. মিসকিন, ৩. আমেল, ৪. মন জয়ে, ৫. দাস মুক্তি, ৬. ঋণ মুক্তি, ৭. আল্লাহ্র পথে ও  ৮. পথিকদের জন্য। এ আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ফরয;-৯:৬০। [প্রতিটি মসজিদের ইমাম আল্লাহ্ কর্তৃক ফরয সদ্কা আদায়-বণ্টন করেন কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘আমি যেইভাবে আদিষ্ট হয়েছি ঠিক সেই ভাবেই বণ্টন করি (বুখারি);-মেশকাত-৭/৪৪৪৭। এক ব্যক্তি নবীর নিকট এসে বলল, ‘আমাকে কিছু সদ্কার মাল দিন। তখন রাসূল বললেন, ‘সদ্কা সম্পর্কে আল্লাহ্ নবী বা অপর কারো নির্দেশের অপেক্ষা করেননি বরং তিনি স্বয়ং সে সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন এবং (আট রকমের লোকের জন্য) তা আট ভাগে বিভক্ত করেছেন। দেখ! যদি তুমি ঐ আট রকমের কোন এক রকমে পড়ে থাকো তা হলে আমি তোমাকে দিতে পারি! (আবূ দাঊদ);-মেশকাত-৪/১৭৪১। [রাসূল আল্লাহ্ নির্দেশিত ফরয বাস্তবায়ন করেছেন। মসজিদের ইমামগণ তা করেন কী?]
 ৮১. কুরআন ও প্রচলিত হাদিসে সদ্কা দাতার জন্য দু
কুরআনে দেখুন, ‘অপর কতক লোকে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে, তারা এক সৎকর্মের সাথে অপর অসৎকর্ম মিশ্রিত করেছে; আল্লাহ্ হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করবেন .... তুমি তাদের সম্পদ হতে সদ্কা গ্রহণ কর। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র এবং পরিশোধিত কর। তুমি তাদের জন্য দুআ কর। তোমার দুআ তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা....;-৯:১০২-১০৩। [প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেব আল্লাহ্র উক্ত আয়াত ন্য দুআ করেন কী?]
প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন আবূ আওফা বলেন,‘কোন পরিবারের লোকেরা যখন নবীর নিকট তাদের সদ্কা নিয়ে আসত তিনি বলতেন, আল্লাহ্! আপনি অমুক পরিবারের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।আব্দুল্লাহ্ বলেন, ‘একদা আমার বাবা তাঁর নিকট সদ্কা নিয়ে আসলেন, তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্! আপনি দয়া করুন আবূ আওফার পরিবারের প্রতি (বুখারি-মুসলিম)। অপর বর্ণনায় রয়েছে, যখন কোন ব্যক্তি নবীর নিকট আপন সদ্কা নিয়ে আসত তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ্! আপনি তার প্রতি দয়া করুন (বুখারি-মুসলিম);-মেশকাত-৪/১৬৮৫। [সদ্কা আদায় হয় না, দুআও হয় না। ফরয সালাতের পর দুআ করার কারণকী?]
 ৮২. কুরআনে জান্নাতিদের সম্পদ ও জীবন আল্লাহ্র
কুরআনে দেখুন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মুমিনদের নকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করে, নিধন করে ও নিহত হয়....;-৯:১১১। যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রয় করে তারা আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম করুক এবং কেউ আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম করেলে সে নিহত হোক অথবা বিজয়ী হোক আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করব;-৪:৭৪। হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সংবাদ দিব যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে মর্মন্তুদ শাস্তি হতে। তা এ-ই যে, তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করবে। এ-ই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে! আল্লাহ্ তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদিগকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত, এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এ-ই মহাসাফল্য;-৬১:১০-১২। [আল্লাহ্ প্রদত্ত জান্নাত পেতে হলে সৎকর্মে অর্থ ব্যয় অবশ্যই করতে হবে কী? বিনা পরিশ্রমে ও বিনা অর্থ ব্যয়ে জান্নাত পাওয়া যাবে কী?]
৮৩. সৎকাজে ব্যয়ের জন্য উৎসাহ দান
কুরআনে দেখুন, ‘যারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য রাত্রে ও দিবসে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের পুণ্য ফল তাদের রবের নিকট রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না;-২:২৭৪। যারা ঈমান আনে, সৎকার্য করে এবং যাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের রবের নিকট আছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না;-২:২৭৭। যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য ধারণ করে, সালাতে দাঁড়ায়, আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভালো দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে, তাদের জন্য শুভ পরিণামস্থায়ী জান্নাত;-১৩:২২। যারা আল্লাহ্র কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাতে (প্রার্থনাতে) দাঁড়ায়, আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রাকাশ্যে ব্যয় করে, তারা আশা করে এমন ব্যবসায়ের যার ক্ষয় নেই;-৩৫:২৯।[অমরত্ব এবং অনন্তকাল জান্নাত লাভের জন্য অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন আছে কী?]
৯১. জাহান্নামি মুসল্লিদের পরিচয়

কুরআনে দেখুন, ‘তুমি কি দেখেছ তাকে, যে দীনকে অস্বীকার করে? সে তো সে-ই যে ইয়াতীমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয় এবং মিসকিনকে খাদ্য দানে উৎসাহিত করে না। সুতরাং অয়েল (জাহান্নাম) সেই মুসল্লিদের, যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন;-১০৭:১-৫। তোমাদিগকে কিসে সাকার-এ নিক্ষেপ করেছে?’ তারা বলবে, ‘আমরা মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, আমরা মিসকিনকে আহার্য দান করতাম না;-৭৪:৪৩-৪৪। যে কল্যাণের কার্যে বাধা দান করে, সীমালংঘনকারী, পপিষ্ঠ;-৬৮:১২। [জাহান্নামে নিক্ষেপের কারণ] তারা মিসকিনকে অন্নদানে উৎসাহিত করত না;-৬৯:৩৪। [নিজেও কল্যাণমূলক কাজে অর্থ দিবে না এবং অন্যকেও উৎসাহিত করে না। জান্নাতি মুসল্লিরা] আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা মিসকিন, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে;-৭৬:৮। আর যাদের সম্পদে নির্ধারিত হক রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের;-৭০:২৪২৫। [জাহান্নামিরা বলবে,] ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তা হলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না;-৬৭:১০। [দরিদ্র হলেও রাষ্ট্রীয় কাজে আয়ের এক-পঞ্চমাংশ ব্যয় করা উচিত নয় কী?]

সৌজন্যেঃ আমিরুল ইসলাম