Saturday, November 1, 2014

অধ্যায়২ঃ গাভী (২১-৩৯)

পরিচ্ছেদ-
হে মানব জাতি
দাসত্ব করো তোমাদের প্রভূ-সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালকের,
যিনি তোমাদের তোমাদের পূর্ববর্তী সবার সৃষ্টিকর্তা২১

এভাবেই তোমরা নিষ্কৃতি লাভের আশা করতে পারো
তিনিই তোমাদের জন্য মাটির শয্যা বিছিয়েছেন,
আকাশের ছাদ তৈরি করেছেন,
ওপর থেকে পানি বর্ষণ করেছেন
এবং তার সাহায্যে সব রকমের ফসলাদি উৎপন্ন করে
তোমাদের আহার যুগিয়েছেন
কাজেই একথা জানার পর
তোমরা অন্যদেরকে উপাস্যের প্রতিপক্ষে পরিণত করো না২২

আর যা আমি আমার দাসের কাছে প্রকাশ করেছি
সেটি আমার কিনা-
ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করে থাকো
তাহলে তার মতো একটি অধ্যায় রচনা করে আনো
এবং নিজেদের সমস্ত সমর্থক গোষ্ঠীকে ডেকে আনো
এক উপাস্যকে ছাড়া আর যার যার চাও তার সাহায্য নাও,
যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে কাজটি করে দেখাও২৩

কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো
আর নিঃসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবে না,
তাহলে সচেতন থাকো সেই আগুনের ব্যাপারে,
যার ইন্ধন হবে পাষান মানুষ,
যা তৈরি রাখা হয়েছে আমার দাসের কাছে প্রকাশিত
সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য২৪

যারা এই সত্যকে মনে-প্রানে গ্রহণ করে নিয়ে
ভাল কাজ করে যায়
তাদেরকে মর্মে সুখবর দাও যে,
তাদের জন্য রয়েছে এমন সব বাগান
যার বুক চিরে বয়ে চলে অসংখ্য ঝর্ণাধারা
সেই বাগানের ফল দেখতে দুনিয়ার ফলের মতই হবে
যখন কোন ফল তাদের দেয়া হবে খাবার জন্য,
তারা বলে উঠবেঃ
ধরনের ফলইতো ইতিপূর্বে দুনিয়ায় আমাদের দেয়া হতো
তাদের জন্য সেখানে থাকবে পবিত্র জুড়ি
এবং তারা সেখানে থাকবে চিরকাল২৫

অবশ্য উপাস্যলজ্জা কিংবা সংকোচ করেন না
মশা বা তার চেয়ে তুচ্ছ কোন জিনিসের দৃষ্টান্ত দিতে
যারা সত্য গ্রহণকারী
তারা দৃষ্টান্তউপমাগুলো দেখে জানতে পারে-
এগুলো সত্য,
এগুলো এসেছে তাদের প্রভূর পক্ষ থেকে,
আর যারা (সত্যকে) গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়
তারা এগুলো শুনে বলতে থাকে,
ধরনের দৃষ্টান্তউপমার সাথে উপাস্যের কী সম্পর্ক?
এভাবে উপাস্য একই কথার সাহায্যে
অনেককে বিভ্রান্ত করেন
আবার অনেককে চালান সরল সোজা পথে২৬

আর তিনি বিভ্রান্তির মধ্যে তাদেরকেই নিক্ষেপ করেন
যারা মুখে বলে কিন্তু কাজে করে না।
যারা উপাস্যের সাথে দৃড়ভাবে অঙ্গীকার করার পর
আবার তা ভেঙ্গে ফেলে,
উপাস্য যাকে জোড়ার হুকুম দিয়েছেন
তাকে কেটে ফেলে
এবং যমীনে অশান্তি-বিপর্যয় সৃষ্টি করে চলে
আসলে এরাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত২৭

তোমরা কেমন করে উপাস্যকে অমান্য করতে পারো!
অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন,
তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন
অতঃপর তিনি তোমাদের প্রাণ হরণ করবেন
এবং অতঃপর তিনি তোমাদের জীবন দান করবেন
তারপর তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে২৮

তিনিই পৃথিবীতে তোমাদের জন্য সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করলেন
তারপর ওপরের দিকে লক্ষ করলেন
এবং সাত আকাশ বিন্যস্ত করলেন।
তিনিই সর্বজ্ঞাতা২৯

পরিচ্ছেদ-৪
আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর
যখন তোমাদের সৃষ্টিকর্তা দেবত্বগণকে বলেছিলেন,
আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই
তারা বললো, “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান
যে সেখানে অশান্তি-বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং রক্তপাত করে?
আপনার প্রশংসা স্তুতিসহকারে গুনকীর্তন
এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি
উপাস্য বললেন, “আমি জানি যা তোমরা জানো না৩০

অতঃপর উপাস্যআদমকে সমস্ত জিনিসের নাম-পরিচয় শেখালেন
তারপর সেগুলো পেশ করলেন দেবগণের সামনে
এবং বললেন, “যদি তোমাদের ধারণা সঠিক হয়
(অর্থাৎ কোন প্রতিনিধি নিযুক্ত করলে ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হবে)
তাহলে একটু বলতো দেখি এই জিনিসগুলোর নাম-পরিচয়?”৩১

তারা বললোঃত্রুটিমুক্ত তো একমাত্র আপনারই সত্তা,
আমরা তো মাত্র ততটুকু জ্ঞান রাখি যতটুকু আপনি আমাদের দিয়েছেন
প্রকৃতপক্ষে আপনি ছাড়া আর এমন কোন সত্তা নেই
যিনি সবকিছু জানেন সবকিছু বোঝেন৩২

তখন উপাস্য আদমকে বললেন,
তুমি ওদেরকে এই জিনিসগুলোর নাম-পরিচয় বলে দাও
যখন সে তাদেরকে সেসবের নাম-পরিচয় জানিয়ে দিল
তখন উপাস্যবললেনঃআমি না তোমাদের বলেছিলাম,
আমি আকাশ পৃথিবীর এমন সমস্ত নিগূঢ় তত্ত্ব জানি
যা তোমাদের অগোচরে রয়ে গেছে?
যা কিছু তোমরা প্রকাশ করে থাকো তা আমি জানি
এবং যা কিছু তোমরা গোপন করো তাও আমি জানি৩৩

তারপর যখন দেবগণকে আদেশ দিলাম,
আদমের সামনে নত হও,
তখন সবাই অবনত হলো, কিন্তু ইবলিস অস্বীকার করলো
সে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মেতে উঠলো
এবং অবাধ্যদের অন্তর্ভুক্ত হলো৩৪

তখন আমরা আদমকে বললাম,
তুমি তোমার স্ত্রী উভয়েই বাগানে থাকো
এবং এখানে স্বাচ্ছন্দের সাথে ইচ্ছে মতো খেতে থাকো,
তবে এই গাছটির কাছে যেয়ো না
অন্যথায় তোমরা দুজন অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে৩৫

শেষ পর্যন্ত দুরাত্মা তাদেরকে সেই গাছটির লোভ দেখিয়ে
আমার আদেশের আনুগত্য থেকে সরিয়ে দিল
এবং যে অবস্থার মধ্যে তারা ছিল
তা থেকে তাদেরকে বের করে ছাড়লো
আমি আদেশ করলাম, “এখন তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও
তোমরা একে অপরের শত্রু
তোমাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে অবস্থান করতে
জীবন অতিবাহিত করতে হবে

তখন আদম কয়েকটি বাক্য শিখে নিয়ে
তার প্রভূর আনুগত্যের দিকে ফিরে এলো
তার প্রভূ তাকে গ্রহণ করে নিলেন
কারণ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল অনুগ্রহকারী৩৭

আমরা বললাম, “তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও
এরপর যখনই আমার পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা
তোমাদের কাছে পৌঁছুবে
তখন যারা আমার সেই নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে
তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয় দুঃখ বেদনা৩৮

আর যারা একে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাবে
এবং আমার বানীসমূহকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেবে
তারা হবে আগুনের মধ্যে প্রবেশকারী
সেখানে তারা থাকবে চিরকাল৩৯

(অধ্যায়ঃগাভী, সূত্রঃ২১-৩৯)