Sunday, February 16, 2014

৫৩. কোরআনের জ্ঞান আসার পর তা না মানা ও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট থাকার ফল

আর হে মুহাম্মাদ! এদের সামনে সেই ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করো, যাকে আমি দান করেছিলাম আমার আয়াতের জ্ঞান। কিন্তু সে তা যথাযথভাবে মেনে চলা থেকে দূরে সরে যায়। অবশেষে শয়তান তার পিছনে লাগে। শেষ পর্যন্ত সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েই যায়। আমি চাইলে ঐ আয়াতগুলোর সাহায্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম কিন্তু সে তো দুনিয়ার প্রতিই ঝুঁকে রইল এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। কাজেই তার অবস্থা হয়ে গেল কুকুরের মত, তার ওপর আক্রমণ করলেও সে জিভ ঝুলিয়ে রাখে আর আক্রমণ না করলেও জিভ ঝুলিয়ে রাখে। যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাদের দৃষ্টান্ত এটাই। তুমি এ কাহিনী তাদেরকে শুনাতে থাকো, হয়তো তারা কিছু চিন্তা-ভাবনা করবে। যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলেছে, তাদের দৃষ্টান্ত বড়ই খারাপ এবং তার নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম চালিয়ে গেছে। ৭/১৭৫-১৭৭

৫৪. আল্লাহর আয়াত মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া ফরজ

হে রসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার কাছে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তা মানুষের কাছে পৌঁছাও। যদি তুমি এমনটি না করো তাহলে তোমার দ্বারা তার রিসালাতের হক আদায় হবে না। মানুষের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমাকে আল্লাহ‌ রক্ষা করবেন। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, তিনি কখনো কাফেরদেরকে (তোমার মোকাবিলায়) সফলতার পথ দেখাবেন না। ৫/৬৭

৫৫. আল্লাহর নাজিল করা আইন ছাড়া বিচার/ফায়সালা করা যাবে না

আমি তাওরাত নাযিল করেছি। তাতে ছিল পথ নির্দেশ ও আলো। সমস্ত নবী, যারা মুসলিম ছিল, সে অনুযায়ী এ ইহুদী হয়ে যাওয়া লোকদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করতো। আর এভাবে রব্বানী ও আহবারও (এরই ওপর তাদের ফায়সালার ভিত্তি স্থাপন করতো) । কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং তারা ছিল এর ওপর সাক্ষী। কাজেই (হে ইহুদী গোষ্ঠী!) তোমরা মানুষকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো এবং সামান্য তুচ্ছ মূল্যের বিনিময়ে আমার আয়াত বিক্রি করা পরিহার করো। আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী যারা ফায়সালা করে না তারাই কাফের।
তাওরাতে আমি ইহুদীদের জন্য এ বিধান লিখে দিয়েছিলাম যে প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং সব রকমের যখমের জন্য সমপর্যায়ের বদলা। তারপর যে ব্যক্তি ঐ শাস্তি সাদকা করে দেবে তা তার জন্য কাফ্‌ফারায় পরিণত হবে। আর যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই জালেম। তারপর ঐ নবীদের পরে মারয়ামপুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি। তাওরাতের মধ্য থেকে যা কিছু তার সামনে ছিল সে তার সত্যতা প্রমাণকারী ছিল। আর তাকে ইনজিল দিয়েছি। তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো এবং তাও তাওরাতের মধ্যে থেকে যা কিছু সে সময় বর্তমান ছিল তার সত্যতা প্রমাণকারী ছিল আর তা ছিল আল্লাহভীরুদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ। আমার নির্দেশ ছিল, ইনজীলে আল্লাহ‌ যে আইন নাযিল করেছেন ইনজীল অনুসারীরা যেন সে মোতাবেক ফায়সালা করে। আর যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই ফাসেক।
তারপর হে মুহাম্মাদ! তোমাদের প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যা সত্য নিয়ে এসেছে এবং আল কিতাবের মধ্য থেকে তার সামনে যা কিছু বর্তমান আছে তার সত্যতা প্রমাণকারী ও তার সংরক্ষক। কাজেই তুমি আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী লোকদের বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালা করো এবং যে সত্য তোমার কাছে এসেছে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না।--তোমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি শরীয়াত ও একটি কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে রেখেছি। আল্লাহ চাইলে তোমাদের সবাইকে একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তার মধ্যে তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য এমনটি করেছেন। কাজেই সৎকাজে একে অপরের চাইতে অগ্রবর্তী হবার চেষ্টা করো। শেষ পর্যন্ত তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। তারপর তিনি সেই প্রকৃত সত্যটি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যে ব্যাপারে তোমরা মতবিরোধ করে আসছিলে।
কাজেই হে মুহাম্মাদ! তুমি আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী তাদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করো এবং তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করো না। সাবধান হয়ে যাও, এরা যেন তোমাকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করে সেই হেদায়াত থেকে সামান্যতমও বিচ্যুত করতে না পারে, যা আল্লাহ‌ তোমার প্রতি নাযিল করছেন। যদি এরা এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে জেনে রাখো, আল্লাহ‌ এদের কোন কোন গোনাহর কারণে এদেরকে বিপদে ফেলার সিদ্ধান্তই করে ফেলেছেন। আর যথার্থই এদের অধিকাংশ ফাসেক। ৫/৪৪-৪৯

৫৬. রাসূল (দঃ) কে তার ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে

অতএব, হে নবী! ভাল করে জেনে নাও, আল্লাহ‌ ছাড়া আর কেউ গোলামীর যোগ্য নয়। নিজের ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং মু’মিন নারী ও পুরুষদের জন্যও। আল্লাহ তোমাদের তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত এবং তোমাদের ঠিকানা সম্পর্কেও অবহিত। ৪৭/১৯

৫৭. কোরআনের বক্তব্য পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই (নবী (দঃ) কে শাস্তির হুমকি)

"এ বাণী বিশ্ব-জাহানের প্রভূর পক্ষ থেকে অবতীর্ন।
যদি এ নবী নিজে কোন কথা বানিয়ে
আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো
তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম
এবং ঘাড়ের রগ (স্পাইনাল কর্ড) কেটে দিতাম।
তোমাদের কেউ-ই (আমাকে)
এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতো না।
আসলে এটি আল্লাহভীরু লোকদের জন্য একটি নসীহত।
আমি জানি তোমাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোক
(কোরয়ানকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে থাকবে।
নিশ্চিতভাবে তা এসব অস্বীকারকারীদের জন্য
অনুতাপ ও আফসোসের কারণ হবে।
এটি (কোরআন) অবশ্যই এক নিশ্চিত সত্য।"
(সূরা আল হাক্কাহ/৪৩-৫১)


হে নবী! তোমার রবের কিতাবের মধ্য থেকে যা কিছু তোমার ওপর অহী করা হয়েছে তা (হুবহু) শুনিয়ে দাও। তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই, (আর যদি তুমি কারো স্বার্থে তার মধ্যে পরিবর্তন করো তাহলে) তাঁর হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে পালাবার জন্য কোন আশ্রয়স্থল পাবে না। ১৮/২৭

হে মুহাম্মাদ! তোমার কাছে আমি যে অহী পাঠিয়েছি তা থেকে তোমাকে ফিরিয়ে রাখার জন্য এ লোকেরা তোমাকে বিভ্রাটের মধ্যে ঠেলে দেবার প্রচেষ্টায় কসুর করেনি, যাতে তুমি আমার নামে নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা তৈরি করো।৮৭ যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে তারা তোমাকে নিজেদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতো। আর যদি আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিল না। কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মোকাবিলায় তুমি কোন সাহায্যকারী পেতে না। ১৭/৭৩-৭৫

ইহুদি ও খৃস্টানরা তোমার প্রতি কখনোই সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের পথে চলতে থাকো।১২১ পরিষ্কার বলে দাও, পথ মাত্র একটিই, যা আল্লাহ‌ বাতলে দিয়েছেন। অন্যথায় তোমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে তারপরও যদি তুমি তাদের ইচ্ছা ও বাসনা অনুযায়ী চলতে থাকো, তাহলে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষাকারী তোমর কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী থাকবে না।  ২/১২০

৫৮. রাসূল (দঃ) এর সাথে কি আচরন করা হবে তিনি তা জানেন না

যখন এসব লোকদের আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ শুনানো হয় এবং সত্য তাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করে তখন এই কাফেররা বলে এতো পরিষ্কার যাদু। তারা কি বলতে চায় যে রসূল নিজেই এসব রচনা করেছেন? তাদের বলে দাওঃ “আমি নিজেই যদি তা রচনা করে থাকি তাহলে কোন কিছু আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করতে পারবে না। যেসব কথা তোমরা তৈরী করছো আল্লাহ তা ভাল করেই জানেন। আমার ও তোমাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তিনিই যথেষ্ট। তিনি অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
এদের বলো, ‘আমি কোন অভিনব রসূল নই। কাল তোমাদের সাথে কী আচরণ করা হবে এবং আমার সাথেই বা কী আচরণ করা হবে তা আমি জানি না। আমি তো কেবল সেই অহীর অনুসরণ করি যা আমার কাছে পাঠানো হয় এবং আমি সুস্পষ্ট সাবধানকারী ছাড়া আর কিছুই নই। ৪৬/৭-৯

৫৯. কোরআন ছাড়া অন্য কথা আল্লাহর বলে চালিয়ে দেয়া (ঘাঁড়ের রগ কেঁটে দেয়ার হুমকী)

এ বাণী বিশ্ব-জাহানের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।
যদি এ নবী নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং ঘাড়ের রগ কেটে দিতাম। তোমাদের কেউ-ই (আমাকে) এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতো না। আসলে এটি আল্লাহভীরু লোকদের জন্য একটি নসীহত। আমি জানি তোমাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোক (এটাকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে থাকবে। নিশ্চিতভাবে তা এসব কাফেরদের জন্য অনুতাপ ও আফসোসের কারণ হবে। এটি অবশ্যই এক নিশ্চিত সত্য। সূরা আল হাক্কাহ/৪৩-৫১

৬০. রূহ

তিনি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের অধিপতি। তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার কাছে ইচ্ছা নিজের হুকুমে ‘রূহ’ নাযিল করেন যাতে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সাবধান করে দেয়। সূরা আল মুমিন/১৫