Wednesday, January 22, 2014

৯০. যারা কোরআন মেনে সৎকাজ করেছে

অন্যদিকে যারা আমার আয়াত মেনে নিয়েছে এবং সৎকাজ করেছে- আর এ পর্যায়ে আমি কাউকে তার সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করি না- তারা হচ্ছে জান্নাতবাসী। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। তাদের মনে পরস্পরের বিরুদ্ধে যা কিছু গ্লানি থাকবে তা আমি বের করে দেবো। তাদের নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হবে এবং তারা বলবেঃ “প্রশংসা সব আল্লাহরই জন্য, যিনি আমাদের এ পথ দেখিয়েছেন। আমরা নিজেরা পথের সন্ধান পেতাম না যদি না আল্লাহ‌ আমাদের পথ দেখাতেন। আমাদের রবের পাঠানো রসূলগণ যথার্থ সত্য নিয়েই এসেছিলেন।” সে সময় আওয়াজ ধ্বনিত হবেঃ “তোমাদেরকে এই যে জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে, এটি তোমরা লাভ করেছো সেই সমস্ত কাজের প্রতিদানে যেগুলো তোমরা অব্যাহতভাবে করতে।” ৭/৪২-৪৩

৯১. যারা দুনিয়ার জীবনের দ্বারা প্রতারিত এবং আখেরাত ও আল্লাহর আয়াতের অস্বীকারকারী

যারা নিজেদের দ্বীনকে খেলা ও কৌতুকের ব্যাপার বানিয়ে নিয়েছিল এবং দুনিয়ার জীবন যাদেরকে প্রতারণায় নিমজ্জিত করেছিল।” আল্লাহ‌ বলেন, “আজ আমিও তাদেরকে ঠিক তেমনিভাবে ভুলে যাবো যেভাবে তারা এ দিনটির মুখোমুখী হওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিল এবং আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিল।” ৭/৫১

৯২. আল কোরআনে সবকিছু বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা আছে (কোরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা)

আমি তোমাদের কাছে এমন এক কিতাব নিয়ে এসেছি যাতে সবকিছু বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা আছে এবং যা ঈমানদারদের জন্য ইলম, হুদা ও রহমত। ৭/৫২

৯৩. ইলম, হুদা ও রহমত হচ্ছে আল কোরআন

আমি তোমাদের কাছে এমন এক কিতাব নিয়ে এসেছি যাতে সবকিছু বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা আছে এবং যা ঈমানদারদের জন্য ইলম, হুদা ও রহমত। ৭/৫২

৯৪. মুনাজাত বা দোয়া বা প্রার্থনা


মুনাজাত বা দোয়া করার পদ্ধতি
তোমাদের প্রভূকে ডাকো
কান্নাজড়িত কণ্ঠে চুপে চুপে।
অবশ্যি তিনি সীমা লংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
দুনিয়ায় সুস্থ পরিবেশ বহাল করার পর
আর সেখানে অশান্তি-বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।
আল্লাহকেই ডাকো ভীতি আশা সহকারে।
নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীল লোকদের নিকবর্তী।
(সূরা আরাফঃ ৫৫-৫৬)

কুরয়ানুল কারীমের কিছু মুনাজাত


আল্লাহ কারোর ওপর তার সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপান না
প্রত্যেক ব্যক্তি যে নেকী উপার্জন করেছে তার ফল তার নিজেরই জন্য
এবং যে গোনাহ সে অর্জন করেছে, তার প্রতিফলও তারই উপর বর্তাবে
(হে ঈমানদারগণ, তোমরা এভাবে দোয়া চাওঃ)
“হে আমাদের রব! ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা যেসব গোনাহ করে বসি,
তুমি সেগুলো পাকড়াও করো না।
হে প্রভু! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না,
যা তুমি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলে।
হে আমাদের প্রতিপালক!
যে বোঝা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই,
তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না
আমাদের প্রতি কোমল হও,
আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো
এবং আমাদের প্রতি করুণা করো।
তুমি আমাদের অভিভাবক।
কাফেরদের মোকাবিলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো।“
(সূরা বাকারাঃ ২৮৬)
যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে শয়নে
সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে
এবং আকাশ পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে,
তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন
(তারা আপনা আপনি বলে ওঠেঃ)
হে আমাদের প্রভু!
এসব তুমি অনর্থক উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে সৃষ্টি করো নি
বাজে নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র মুক্ত
কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো
তুমি যাকে জাহান্নামে ফেলে দিয়েছো,
তাকে আসলে বড়ই লাঞ্ছনা অপমানের মধ্যে ঠেলে দিয়েছো
এবং এহেন জালেমদের কোন সাহায্যকারী হবে না
হে আমাদের মালিক! আমরা একজন আহ্বানকারীর আহ্বান শুনেছিলাম
তিনি আমাদেরকে ঈমানের দিকে আহবান করছিলেন
তিনি বলছিলেন, তোমরা নিজেদের সৃষ্টিকর্তাকে মেনে নাও
আমরা তার আহবান গ্রহণ করেছি
কাজেই, হে আমাদের প্রভু!
আমরা যেসব অপরাধ করছি তা ক্ষমা করে দাও
আমাদের মধ্যে যেসব অসৎবৃত্তি আছে
সেগুলো আমাদের থেকে দূর করে দাও
এবং ভাল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করো
হে আমাদের প্রভূ! তোমার বার্তাবাহকদের মাধ্যমে
তুমি যেসব অংগীকার করেছো আমাদের সাথে, সেগুলো পূর্ণ করো
এবং কিয়ামতের দিন আমাদের লাঞ্ছনার গর্তে ফেলে দিয়ো না
নিঃসন্দেহে তুমি অংগীকার ভংগকারী নও
জবাবে তাদের প্রভূ বললেনঃ
আমি তোমাদের কারো কর্মকাণ্ড নষ্ট করবো না
পুরুষ হও বা নারী, তোমরা সবাই একই জাতির অন্তর্ভুক্ত
কাজেই যারা আমার জন্য নিজেদের স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করেছে
এবং আমার পথে যাদেরকে
নিজেদের ঘর বাড়ি থেকে বের করে দেয়া কষ্ট দেয়া হয়েছে
এবং যারা আমার জন্য লড়েছে মারা গেছে,
তাদের সমস্ত অপরাধ আমি ক্ষমা করে দেবো
এবং তাদেরকে এমন সব বাগানে প্রবেশ করাবো
যার নীচে দিয়ে ঝরণাধারা বয়ে চলবে
এসব হচ্ছে আল্লাহর কাছে তাদের প্রতিদান
এবং সবচেয়ে ভালো প্রতিদান আল্লাহর কাছেই আছে
(সূরা আলে ইমরানঃ ১৯১-১৯৫)

৯৫. বিতর্কের ক্ষেত্রে যুক্তি প্রমান হতে হবে কোরআনের (দলিল আল্লাহর নাজিল করা কিতাব)

সে বললোঃ “তোমাদের রবের অভিসম্পাত পড়েছে তোমাদের ওপর এবং তাঁর গযবও। তোমরা কি আমার সাথে এমন কিছু নাম নিয়ে বিতর্ক করছো, যেগুলো তৈরী করেছো তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা এবং যেগুলোর স্বপক্ষে আল্লাহ‌ কোন সনদ নাযিল করেননি? ঠিক আছে, তোমরা অপেক্ষা করো এবং আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।” ৭/৭১

৯৬. যেমন কর্ম তেমন ফল

আমার নিদর্শনসমূহকে যারাই মিথ্যা বলছে এবং আখেরাতের সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেছে, তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হয়ে গেছে। যেমন কর্ম তেমন ফল-এছাড়া লোকেরা কি আর কোন প্রতিদান পেতে পারে? ৭/১৪৭

৯৭. যাদের সকল কাজ ব্যর্থ

আমার আয়াতসমূহকে যারাই মিথ্যা বলছে এবং আখেরাতের সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেছে, তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হয়ে গেছে। যেমন কর্ম তেমন ফল-এছাড়া লোকেরা কি আর কোন প্রতিদান পেতে পারে? ৭/১৪৭

সময়ের কসম। মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে। সূরা আসর/২-৩

৯৮. রাসূলের আনুগত্য

রাসূল (দঃ) আল্লাহর আয়াতের আনুগত্য করতেন আমাদেরকেও তাই করতে হবে তবেই রাসূল (দঃ) এর প্রকৃত আনুগত্য হবে। আল কোরআনের আয়াত,

হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, “হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের জন্য সেই আল্লাহর রসূল হিসেবে এসেছি, যিনি পৃথিবী ও আকাশ মণ্ডলীর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান। কাজেই ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তার প্রেরিত সেই নিরক্ষর নবীর প্রতি, যে আল্লাহ‌ ও তাঁর বাণীর প্রতি ঈমান আনে এবং তার আনুগত্য করে। আশা করা যায়, এভাবে তোমরা সঠিক পথ পেয়ে যাবে। ৭/১৫৮

৯৯. মূসা (আঃ) এর সংগীদের অবস্থা

মূসার অনুপস্থিতিতে তার জাতির লোকেরা নিজেদের অলংকার দিয়ে বাছুরের মূর্তি তৈরী করলো। তার মুখ দিয়ে গরুর মত 'হাম্বা' রব বের হতো। তারা কি দেখতে পেতো না যে, ঐ বাছুর তাদের সাথে কথাও বলে না আর কোন ব্যাপারে তাদেরকে পথনির্দেশনাও দেয় না? কিন্তু এরপরও তাকে মাবুদে পরিণত করলো। বস্তুত তারা ছিল বড়ই জালেম।
তারপর যখন তাদের প্রতারণার জাল ছিন্ন হয়ে গেলো এবং তারা দেখতে পেলো যে, আসলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে তখন বলতে লাগলোঃ “যদি আমাদের রব আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন এবং আমাদের ক্ষমা না করেন, তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।”
ওদিকে মূসা ফিরে এলেন তার জাতির কাছে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ অবস্থায়। এসেই বললেনঃ “আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার বড়ই নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছো! তোমরা কি নিজেদের রবের হুকুমের অপেক্ষা করার মত এতটুকু সবরও করতে পারলে না?” সে ফলকগুলো ছুঁড়ে দিল এবং নিজের ভাইয়ের (হারুন) মাথার চুল ধরে টেনে আনলো। হারুন বললোঃ “হে আমার সহোদর! এ লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে ফেলেছিল এবং আমাকে হত্যা করার উপক্রম করেছিল। কাজেই তুমি শত্রুর কাছে আমাকে হাস্যাম্পদ করো না এবং আমাকে এ জালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না। তখন মূসা বললোঃ “হে আমার রব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং তোমার অনুগ্রহের মধ্যে আমাদের দাখিল করে নাও, তুমি সবচাইতে বেশী অনুগ্রহকারী।” (জওয়াবে বলা হলো) “যারা বাছুরকে মাবুদ বানিয়েছে তারা নিশ্চয়ই নিজেদের রবের ক্রোধের শিকার হবেই এবং দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত হবে। মিথ্যা রচনাকারীদেরকে আমি এমনি ধরনের শাস্তিই দিয়ে থাকি। আর যারা খারাপ কাজ করে তারপর তাওবা করে নেয় এবং ঈমান আনে, এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে এ তাওবা ও ঈমানের পর তোমার রব ক্ষমাশীল ও করুণাময়। তারপর মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলে সে ফলকগুলি উঠিয়ে নিল। যারা নিজেদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য ঐ সব ফলকে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত। আর মূসা (তার সাথে) আমার নির্ধারিত সময়ে হাযির হবার জন্য নিজের জাতির সত্তর জন লোককে নির্বাচিত করলো। যখন তারা একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত হলো তখন মূসা বললোঃ “হে প্রভু! তুমি চাইলে আগেই এদেরকে ও আমাকে ধ্বংস করে দিতে পারতে। আমাদের মধ্য থেকে কিছু নির্বোধ লোক যে অপরাধ করেছিল সেজন্য কি তুমি আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দেবে? এটি তো ছিল তোমার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা, এর মাধ্যমে তুমি যাকে চাও পথভ্রষ্ট করো আবার যাকে চাও হেদায়াত দান করো। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক। কাজেই আমাদের মাফ করে দাও এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করো। ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ। আর আমাদের জন্য এ দুনিয়ার কল্যাণ লিখে দাও এবং আখেরাতেরও, আমরা তোমার দিকে ফিরেছি।” জওয়াবে বলা হলোঃ “শাস্তি তো আমি যাকে চাই তাকে দিয়ে থাকি, কিন্তু আমার অনুগ্রহ সব জিনিসের ওপর পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। কাজেই তা আমি এমন লোকদের নামে লিখবো যারা নাফরমানী থেকে দূরে থাকবে, যাকাত দেবে এবং আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনবে। ৭/১৪৮-১৫৬
মূসার জাতির মধ্যে এমন একটি দলও ছিল, যারা সত্য অনুযায়ী পথনির্দেশ দিতো এবং সত্য অনুযায়ী ইনসাফ করতো। ৭/১৫৯