Wednesday, April 23, 2014

১৫৩. জাহান্নামের বর্ননা

মহান আল্লাহ বলেন:
“আর তুমি কি জানো, জাহান্নাম কি? তা শান্তিতে থাকতে দেয় না আবার ছেড়েও দেয় না। চামড়া ঝলসে দেয়। উনিশজন ফেরেশতা তার প্রহরী হবে।’’ (সূরা মুদ্দাসসির: ২৭-৩০)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
‘‘হে (জাহান্নামে) মরবেও না আবার জীবিতও থাকবে না।’’ (সূরা আ’লা: ১৩)
আরো বলা হয়েছে:
‘‘তারা (জাহান্নামীরা) যখন সেখানে নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার ক্ষিপ্রতার তর্জন-গর্জন শুনতে পাবে এবং তা উত্থাল-পাতাল করতে থাকবে, ক্রোধ আক্রোশে এমন অবস্থা ধারণ করবে, মনে হবে তা গোস্বায় ফেটে পড়বে।’’ (সূরা মুলক: ৭-৮)
‘‘জাহান্নাম যখন দূর হতে তাদেরকে (জাহান্নামীদের)দেখতে পাবে তখন তারা তার ক্রোধ ও তেজস্বী আওয়াজ (অর্থাৎ তর্জন-গর্জন) শুনতে পাবে। আর যখন তাদেরকে হাত-পা বাধা অবস্থায় জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা সেখানে কেবল মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে।’’ (সূরা ফুরকান: ১২-১৩)
সূরা নাবায়ে বলা হয়েছে:
‘‘নিশ্চয় জাহান্নাম একটি ঘাঁটি। আল্লাহদ্রোহীদের জন্য আশ্রয়স্থল। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।’’ (সূরা নাবা: ২১-২৩)
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘জাহান্নামের সাতটি দরজা (স্তর) আছে। প্রত্যেকটি দরজার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দল নির্ধারিত হয়েছে।’’ (সূরা আল-হিজর: ৪)
সাউদ: এটা তীনাতুল খবলের পাড়ে অবস্থিত একটি বিশাল পাহাড়।
এক শ্রেণীর জাহান্নামীদেরকে ঐ পাহাড়ের উপর উঠায়ে সজোরে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলা হবে, পূণরায় উঠানো হবে এবং ফেলা হবে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে।
ইরশাদ হচ্ছে:﴿ سَأُرۡهِقُهُۥ صَعُودًا ١٧ ﴾ [المدثر: ١٧]  ‘‘সহসা-ই আমি তাকে সাউদ নামক পর্বতে চড়াবো।’’ (সূরা মুদ্দাসসির: ১৭)
মহান আল্লাহ বলেন,
(নিদের্শ দেয়া হবে) ধরো এবং গলায় ফাঁস লাগিয়ে দাও। অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। আর সত্তর হাত দীর্ঘ শিকল দিয়ে ভালোভাবে বেধে দাও।’’  (সূরা আল হাক্কাহ: ৩১-৩৫)
সূরা মুরসালাতে বলা হয়েছে:
‘‘(জাহান্নামীদের বলা হবে) চলো, সে ছায়ার দিকে যা তিনটি শাখা বিশিষ্ট। যেখানে না (শীতল) ছায়া আছে আর না আগুনের লেলিহান শিখা হতে রক্ষাকারী কোন বস্তু। সে আগুন প্রাসাদের ন্যায় বিরাট স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে। তা এমনভাবে লাফাতে থাকবে, দেখলে মনে হবে যেন হলুদ বর্ণের উট।’’ (সূরা মুরসালাত: ৩০-৩৩)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
‘‘যখন তাদের গলায় শিকল ও জিঞ্জির লাগানো হবে, তখন তা ধরে টগবগ করে ফুটন্ত পানি দিয়ে টানা হবে এবং পরে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’’ (সূরা আল-মুমিন: ৭১-৭২)
‘‘আর খোদাদ্রোহী লোকদের নিকৃষ্ট পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে তারা (অনন্তকাল) জ্বলবে। এটা অত্যন্ত খারাপ স্থান। প্রকৃতপক্ষে এ তাদের জন্যেই। অতএব সেখানে তারা স্বাধ গ্রহণ করবে টগবগ করা ফুটন্ত পানি, ফুঁজ, রক্ত এবং এ ধরনের আরো অনেক কষ্টের। ’’ (সূরা সাদ: ৫৫-৫৮)
‘‘তাদের (জাহান্নামীদের)মাথার উপরে তীব্র গরম পানি ঢেলে দেয়া হবে, ফলে তাদের পেটের মধ্যে অবস্থিত সকল বস্তু ও চামড়া (সাথে সাথে) গলে যাবে এবং তাদের জন্য লোহার ডান্ডা থাকবে। যখনই তারা স্বাসবোধন অবস্থান জাহান্নাম হতে বের হবার চেষ্টা করবে তখনই তাদেরকে প্রতিহত করা হবে এবং বলা হবে দহনের শাস্তি ভোগ করতে থাক।’’ (সূরা হজ্জ: ১৯-২২)
পুজ পান করানো হবে
প্রচন্ড শাস্তির কারণে জাহান্নামীদের ক্ষুধা-পিপাসা মারাত্মক হবে। তারা কেবল খাইতে চাইবে। যা দেয়া হবে তাই খাবে ও পান করবে। তাদেরকে পুজ ও রক্ত মিশ্রিত পানি পান করতে দেয়া হবে। আল্লাহ বলেন:
“তার সামনে দোযখ রয়েছে। তাতে পুজ ও রক্ত মিশ্রিত পানি পান করানো হবে। ঢোক গিলে তা পান করবে এবং গলার ভেতরে প্রবেশ করাতে কমই পারবে।” (সূরা ইব্রাহীম: ১৬-১৭)
আগুনের পোশাক, গরম পানি ও লোহার হাতুড়ি দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে
দোযখীদের শাস্তি বহুমুখী। আল্লাহ বলেন:
‘যারা কাফের, তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরি করা হয়েছে। তাদের মাথার উপা ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। ফলে তাদের পেটে যা আছে, তা এবং চামড়া গলে বের হয়ে যাবে। তাদের জন্য আছে লোহার হাতুড়ি। তারা যখনই যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে। বলা হবে: দহন শাস্তি ভোগ কর।’
জাহান্নামীদের নীচে ও উপরে এবং ডানে ও বামে আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। তারা এ আগুনে দগ্ধ হতে থাকবে। আল্লাহ বলেন:
‘তাদের জন্য উপর দিক এবং নীচের দিক থেকে আগুনের ছাতা থাকবে। ( সূরা যুমার: ১৬)
জাহান্নামীদের আকার আকৃতির বিস্তৃতি ঘটিয়ে আজাব দেয়া হবে
পৃথিবীর মতো এতো সুন্দর চেহারা বা আকার আকৃতি জাহান্নামীদের থাকবে না। সেদিন তাদের চেহারাকে বিকৃতি ও কুৎসিত করে দেয়া হবে।
ইরশাদ হচ্ছে:
‘‘যারা খারাপ কাজ করবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ খারাপ হবে। অপমান লাঞ্চনা তাদেরকে আবন্ধ করে রাখবে। আর আল্লাহর আজাব থেকে কেউ তাদেরকে রক্ষা করবে না। তাদের মুখমন্ডল যেন তমসাচ্ছন্ন রাতের তিমিরে আচ্ছাদিত।’’ (সূরা ইউনুস: ২৭)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
‘‘আগুন তাদের মুখ মন্ডলকে চেটেচেটে খাবে এবং তাদের চেহারাগুলো হবে বীভৎস।’’ (সূরা মুমিনুন: ১০৪)
আল্লাহ বলেন:
‘কখনই নয়। নিশ্চয় এটা লেলিহান অগ্নি। যা চামড়া তুলে নেবে। (সূরা মা’আরেজ: ১৫-১৬)
‘‘যখন তাদের দেহের চামড়া আগুনে পুড়ে পুড়ে গলে যাবে, তখন (সাথে সাথে) সেখানে অন্য চামড়া সৃষ্টি করে দেবো; যেনো তারা আজাবের স্বাদ পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে। বস্তুত আল্লাহ বড়োই শক্তিশালী এবং নিজের ফায়সালা সমূহ কার্যকরী করার কৌশল খুব ভালো করেই জানেন।’’ (সূরা নিসা: ৫৬)
‘‘তারা গরম বাষ্প, টগবগ করা ফুটন্ত পানি এবং কালো ধুঁয়ার ছায়ার মধ্যে থাকবে। তা (কখনো না ঠান্ডা হবে, না শান্তি দায়ক)’’। (সূরা ওয়াকি‘আহ্‌: ৪২-৪৫)
 ‘নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য হবে। গলিত তামার মতো পেটে ফুটতে থাকবে। যেমন পাটি ফুটে। একে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও। (সূরা দোখান: ৪৩-৪৮)
আরও বলেন,
‘‘অতঃপর পান করার জন্য তাদের ফুটন্ত পানি দেয়া হবে।’’ (সূরা ছাফ্ফাত: ৬৭)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
 ‘‘অবশ্যই তারা যাক্কুম গাছের খাদ্য খাবে। ওগুলোর দ্বারাই পেট ভর্তি করবে। আর উপর হতে টগবগ করে ফুটন্ত পানি পিপাসা কাতর উটের ন্যায় পান করবে।’’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্‌: ৫২-৫৩)
যাক্কুম গাছের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন:
‘তা এমন একটি গাছ যা জাহান্নামের তলদেশ হতে বের হয়। তার ছড়াগুলি এমন, যেনো শয়তানগুলোর মাথা?’’
‘‘শয়তানগুলোর মাথা’’ এ কথাটি একটি দৃষ্টান্ত। যেমন আমরা কারো চেহারা বিবর্ণ দেখলে বলি একেবারে পেত্মীর মতো দেখতে। ঠিক এমনি একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে শয়তানের মাথার দৃষ্টান্ত। এ যে অত্যন্ত অরুচিকর, অখাদ্য, কুখাদ্য তা বুঝানোই হচ্ছে উক্ত আয়াতের অভিপ্রায়।
সূরা গাশিয়ায় বলা হয়েছে:
‘‘তাদেরকে ফুটন্ত কুপের পানি পান করানো হবে। কাটা যুক্ত শুস্ক ঘাস ছাড়া আর কোন খাদ্য তাদের জন্য থাকবে না। তার দেহের পুষ্টি সাধন করবে না এবং তাতে ক্ষুধারও উপশম হবে না।’’ (সুরা গাশিয়া: ৫-৭)
সে পানি শুধুমাত্র গরম ও ফুটন্তই হবে না বরং তা তামা বা কঠিন কোন ধাতুকে তাপ প্রয়োগে তরল করা হলে, সেই উত্তপ্ত তরলের মতো হবে।
ইরশাদ হচ্ছে:
‘‘তারা পানির আকাংখা করলে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি সরবরাহ করা হবে। যা তাদের মুখমন্ডলকে ঝলসে দেবে। এটা কতো নিকৃষ্ট পানীয় এবং জাহান্নাম কতোই না নিকৃষ্ট স্থান।’’ (সূরা কাহারু: ১৯)
আরো বলা হয়েছে,
‘‘সে পানি পান করা মাত্র) তা তাদের নাড়ি ভূড়িকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে।’’ (সূরা মুহাম্মদ: ১৫)
‘‘ সেখানে ঠান্ডা ও পানোপযোগী কোন বস্তুর স্থান তারা পাবে না। যদিও বা কিছু পায় তা হচ্ছে উত্তপ্ত গরম পানি ও দুর্গন্ধযুক্ত মিশ্রিত রক্ত।  (সূরা নাবা: ২৪-২৫)
সূরা ইব্রাহীমে বলা হয়েছে:
“আর গলিত পুঁজ পান করানো হবে যা সে অতিকষ্টে গলধ:করণ করবে এবং তা গলধ:করণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।  চতুর্দিক থেকে মৃত্যু যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করে নেবে কিন্তু তবুও তার মৃত্যু হবে না।’’ (সূরা ইব্রাহীম: ১৬-১৭)
‘‘জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবে, আমাদেরকে সামান্য পানি দাও কিংবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন তা হতে কিছু আমাদের দিকে নিক্ষেপ করে দাও। জবাবে জান্নাতীগণ বলবে: আল্লাহ তা’আলা এ দুটো বস্তুই কাফেরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’’ (সূরা আ’রাফ: ৫০)
তারা জাহান্নামের কঠোর আযাব দেখে আফসোস করে বলবে:
সেদিন সত্যিকার রাজত্ব হবে দয়াময় আল্লাহর এবং কাফেরদের পক্ষে দিনটি হবে কঠিন। জালেম সেদিন আপন হাত দুটো দংশন করতে করতে বলবে, হায়! আফসুস, আমি যদি রাসূলের পথ অনুসরণ করতাম। হায়! আমি যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম। সে আমার কাছে উপদেশ আসার পরই আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছে। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়। (সূরা ফোরকান:২৬-২৯)
জাহান্নামের আযাব স্থায়ী
আল্লাহ বলেন,
‘অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে চিরস্থায়ী অবস্থান করবে।’  (সূরা যুখরুফ: ৭৪)
আল্লাহ বলেন,
“তুমি ঐ দিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃঙ্খলাবদ্ধ দেখবে। তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমন্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে।” (সূরা ইব্রাহীম: ৪৯-৫০)
জাহান্নামীদেরকে যখন ফেরেশতারা এক হাতে চুলের মুঠি এবং অন্য হাতে পা ধরে চ্যাংদোলা করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে নিয়ে যাবে, তখন জাহান্নামের পাহারাদারগণ জিজ্ঞেস করবে: তোমাদের কাছে কি কোন সুসংবাদ দাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী পৌছেনি? তখন কাফেরগণ বলবে: হ্যাঁ, পৌঁছেছিল কিন্তু আমরা তাদেরকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতাম এবং মিথ্যা মনে করতাম। তখন আফসোস করবে এবং বলবে:
‘‘হায়! আমরা যদি শুনতাম এবং অনুধান (জ্ঞান দিয়ে চিন্তা ভাবনা) করতাম, তবে আমরা আজ দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনে নিক্ষিপ্ত লোকদের মধ্যে শামিল হতাম না।’’ সূরা মূলক: ১০)

সূরা আনআমে বলা হয়েছে:
‘‘হায়! সে সময়ের অবস্থা যদি তুমি দেখতে পারতে, যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় করানো হবে; তখন তারা বলবে: হায়! আমরা যদি দুনিয়ায় আবার ফিরে যেতে পারতাম এবং সেখানে আল্লাহর আয়াততে মিথ্যা মনে না করতাম, আর ঈমানদার লোকদের মধ্যে শামিল হতে পারতাম!’’ (সূরা আনআম: ২৭)
তাদের এ আবেদন নিবেদন ব্যর্থ হয়ে যাবে। আল্লাহ সরাসরি তাদের কথাকে প্রত্যাখান করবেন। ইরশাদ হচ্ছে:
‘‘তাদেরকে যদি পূর্ববর্তী জীবনের দিকে ফিরিয়েও দেয়া হয়,তবুও তারা সে সব কাজই করবে যা হতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। তারা তো সবচেয়ে বড়ো মিথ্যাবাদী।’’ (সূরা আনআম: ২৮)
সূরা যুমারে বলা হয়েছে,
‘‘যে সব লোক কুফরী করেছিলো তাদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছাবে তখন তার (অর্থাৎ জাহান্নামের) দরজাগুলো খুলা হবে এবং তার কর্মচারীরা তাদেরকে বলবে: তোমাদের নিকট তোমাদের নিজেদের মধ্যে এমন কোন রাসূল কি আসেনি, যে তোমাদেরকে তোমাদের রবের আয়াতসমূহ শুনিয়েছে এবং তোমাদেরকে এ বলে ভয় প্রদর্শন করেছেন যে, এ দিনটি অবশ্যই একদিন তোমাদেরকে দেখতে হবে?’’ তারা বলবে: ‘‘হ্যাঁ এসেছিলো! কিন্তু আজাব হওয়ার ফায়সালা কাফেরদের ভাগ্যলিপি হয়ে গিয়েছে।’’ (সূরা যুমার: ৭১)
কুরআনে এসেছে,
‘‘তারা বলবে হে আমাদের রব! তুমি নিশ্চয়ই আমাদেরকে দু’বার মৃত্যু ও তার জীবন দান করেছো। এখন আমরা আমাদের অপরাধসমূহ স্বীকার করি। এখন (জাহান্নাম) থেকে বের হবার কোন পথ আছে কি?’’ (সূরা আল মু’মিন: ১১)
দু’বার মৃত্যু এবং দু’বার জীবন দান অর্থ-মানুষ অস্তিত্বহীন ছিলো অর্থাৎ মৃত্যু ছিলো, আল্লাহ জীবন দান করেছেন। আবার মৃত্যু দেবেন এবং পুণরায় কিয়ামতের দিন জীবিত করে উঠাবেন। এ কথা কয়টি স্বয়ং আল্লাহ রাববুল আলামীন সূরা বাকারায় স্পষ্ট করে বলেছেন:
‘‘তোমরা আল্লাহর সাথে কেমন করে কুফুরী করতে পারো। অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন-মৃত্যু, তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন। আবার মৃত্যু দেবেন এবং পুণরায় জীবন দান করে উঠাবেন। তারপর তার দিকেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’’ (সূরা বাকারা: ২৮)
সূরা ফাতির এ বলা হয়েছে:
‘‘সেখানে (জাহান্নামে) তারা চিৎকার করে বলবে: হে আমাদের রব! আমাদেরকে এখান হতে বের করে নাও, যেনো আমরা নেক আমল করতে পারি। সে আমল থেকে ভিন্নতর যা আমরা পূর্বে করছিলাম।’’ (সূরা ফাতির: ৩৭)
অতঃপর তাদেরকে প্রতি উত্তরে বলা হবে:
‘‘আমরা কি তোমাদেরকে এমন বয়স দান করিনি যে,শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতে? আর তোমাদের নিকট সতর্ককারীও এসেছিলো। এখন (আজাবের) স্বাদ গ্রহণ করো। এখানে জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।’’ (সূরা ফাতির: ৩৭)
আত্মীয় স্বজন ও দুনিয়ার সব মানুষকে বিনিময় দিয়ে হলেও জাহান্নামীরা বাঁচতে চাবে
‘‘সেদিন অপরাধীরা চাবে তার সন্তান, স্ত্রী, ভাই এবং সাহায্যকারী নিকটবর্তী পরিবার এমনকি দুনিয়ার সব মানুষকে বিনিময় দিয়ে হলেও নিজেকে আজাব থেকে বাঁচিয়ে দিতে।’’ (সূরা আল মা‘আরিজ: ১১-১৪)
সূরা আল-মু’মিনে বলা হয়েছে:
‘‘তখন তাদের মধ্যে আর কোন আত্মীয়তা থাকবে না, এমনকি পরস্পর দেখা হলেও (কেউ কাউকে) জিজ্ঞেস করবে না।’’ (সূরা আল মু’মিনুন: ১০১)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
‘‘সেদিন কোন প্রাণের বন্ধু অপর প্রাণের বন্ধুকে জিজ্ঞেসও করবে না।’’ (সূরা আল মা‘আরিজ: ১০)
প্রত্যেক জাহান্নামী দল পূর্ববর্তী দলকে দোষ দেবে
‘‘প্রত্যেকটি দল যখনই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, নিজের সঙ্গের দলটির উপর অভিশাপ দিতে দিতে অগ্রসর হবে। শেষ পর্যন্ত সকলেই যখন সেখানে সমবেত হবে, তখন (প্রত্যেক) পরবর্তী লোক পূর্ববর্তী লোকদের সম্পর্কে বলবে: হে আমাদের রব! এ লোকরাই আমাদের বিভ্রান্ত করেছে। এখন তাদেরকে আগুনে (আমাদের চেয়ে) দ্বিগুন শাস্তি দাও।
আল্লাহ বলবেন: ‘‘সকলের জন্যই দ্বিগুণ আজাব কিন্তু তোমরা তা বুঝবে না।’’ (সূরা আ’রাফ: ৩৮)
‘‘(যখন জাহান্নামীদেরকে আগুণে পুড়ানো হবে) তখন তারা বলবে: হে আমাদের রব! আমরা আমাদের সরদার ও নেতাদের আনুগত্য করেছি, তারা আমাদেরকে সঠিক সরল পথ থেকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। হে রব! এ লোকদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদের উপর কঠিন অভিশাপ বর্ষণ করো।’’ (সূরা আহযাব: ৬৭-৬৮)
জাহান্নামীরা জাহান্নামে জ্বলতে জ্বলতে অসহ্য হয়ে যাবে। তখন চিৎকার করে বলতে থাকবে:
‘‘হে পরোয়ারদেগার! সেই জ্বিন ও মানুষদেরকে আমাদের সামনে এনে দাও, যারা আমাদেরকে গোমরাহ করছিলো। আমরা তাদেরকে আমাদের পায়ের তলায় রেখে দলিত মথিত করবো, যেনো তারা লাঞ্চিত ও অপমানিত হয়।’’ (সূরা হা-মীম-আস সিজদাহ: ২৯)
জাহান্নামীদের অনুভুতি তীব্র হবে। তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং সেদিন বুঝবে অন্ধভাবে নেতাদের অনুসরণ করা কতো বড় ভ্রান্তনীতি ছিলো। আল্লাহ বলেন
‘‘(আর এই বিভ্রান্ত লোকেরা নিজেদের নেতাদেরকে লক্ষ্য করে বলবে) আল্লাহর কসম! আমরা তো সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিলাম, যখন তোমাদেরকে রাববুল আলামীনের মর্যাদা দিচ্ছিলেন।’’ (সূরা শু‘আরা: ৯৭-৯৮)
সূরা বাকারায় বলা হয়েছে:
যখন জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে তখন এসব নেতা ও প্রধান ব্যক্তিরা দুনিয়ায় যাদের অনুসরণ করা হতো, (তারা) তাদের অনুসারীদের সাথে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করতে থাকবে কিন্তু তবুও শাস্তি তারা পাবেই। এবং তাদের সমস্ত উপায় উপকরণের ধারা ছিন্ন হয়ে যাবে। আর যেসব লোক দুনিয়ায় তাদের অনুসারী ছিলো, তারা বলতে থাকবে: ‘‘হায়! যদি আমাদেরকে আরেকবার সুযোগ দেয়া হতো, তবে এরা আজ যেভাবে আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, তেমনি আমরাও এদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে দেখিয়ে দিতাম। এভাবেই দুনিয়ায় এরা যে সমস্ত কাজ করেছে সেগুলো আল্লাহ তাদের সামনে এমনভাবে উপস্থিত করবেন যাতে তারা কেবল দুঃখ ও আক্ষেপই করতে থাকবে। কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে বের হবার কোন পথই তারা খুঁজে পাবে না।’’ (সূরা বাকারা: ১৬৬-১৬৭)
সেখানে সবর করা না করা সমান হবে
‘যেদিন তাদেরকে ধাক্কা মেরে মেরে জাহান্নামের দিতে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তাদেরকে বলা হবে এই সে আগুন যাকে তোমরা ভিত্তিহীন গুজব মনে করেছিলে। এবার বলো, এটা কি যাদু? না তোমরা কিছুই দেখানো? এবার যাও এর মধ্যে ভষ্ম হতে থাকো। এখন তোমরা ধৈর্য ধারণ করো যা না করো, সবই তোমাদের জন্য সমান। তোমাদেরকে সে রকম প্রতিফলই দেয়া হচ্ছে যা তোমরা আমল করেছে।’’ (সূরা তুর: ১৩-১৬)
সূরা হাদীদে বলা হয়েছে:
যখন ফেরেশতাগণ জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে, তখন বলবে:
‘‘আজ তোমাদের নিকট হতে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না এবং যারা পৃথিবীতে (প্রকাশ্য দাম্ভিকতার সাথে আল্লাহর আয়াতগুলো) অস্বীকার করেছিলে (তাদেরকেও বিনিময় নিয়ে মুক্তি দেয়া হবে না। উপরন্ত বলা হবে) তোমাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সে জাহান্নামই তোমাদের খোঁজখবর গ্রহণকারী অভিভাবক। কতো নিকৃষ্ট পরিণতি।’’ (সূরা আল হাদীদ: ১৫)
“আর যারা আগুনের অধিবাসী হবে তারা জাহান্নামের প্রহরীদেরকে বলবে, ‘তোমাদের রবকে ডাক, তিনি যেন আমাদের থেকে শাস্তি লাঘব করেন এক দিনের জন্য।’
তারা বলবে, ‘তোমাদের কাছে কি স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেননি?’ জাহান্নামীরা বলবে, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’ প্রহরীরা বলবে, ‘সুতরাং তোমরাই ডাক; আর কাফিরদের ডাক শুধু ব্যর্থই হয়।” [সূরা গাফির: ৪৯, ৫০]

No comments:

Post a Comment