আল্লাহ বলেন,
রসূল তার রবের
পক্ষ থেকে তার ওপর যে হিদায়াত নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছে। আর যেসব লোক ঐ রসূলের প্রতি ঈমান
এনেছে তারাও ঐ হিদায়াতকে মনে-প্রাণে স্বীকার করে
নিয়েছে। তারা সবাই আল্লাহকে, তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাবসমূহকে ও তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমাণ রাখে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছেঃ “আমরা আল্লাহর রসূলদের একজনকে আর একজন থেকে আলাদা করি
না। আমরা নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি। হে
প্রভু! আমরা তোমার কাছে গোনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদের তোমারই দিকে ফিরে যেতে হবে।
২.২৮৫
আর যে কিতাব
তোমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে (অর্থাৎ কুরআন) এবং তোমার আগে যেসব কিতাব নাযিল করা
হয়েছিল সে সবগুলোর ওপর ঈমান আনে৭ আর
আখেরাতের ওপর একীন রাখে। ২.৪
ঈমান আনার ব্যাপারটা যতটা সহজ ভাবা হয় ততটা
সহজ নয়। মুখে বললাম আর মনে মনে ভাবলাম যে আমি ঈমান এনেছি ব্যাপারটা তেমন নয়। এটি আল্লাহ তাকেই প্রদান করেন যে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তা পাবার
চেষ্টা করে। ঈমান হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি রূহ বা চেতনা যা ছাড়া ঈমান আসা সম্ভব নয়। এ প্রসংগে আল্লাহ বলেন,
এভাবেই (হে
মুহাম্মাদ) , আমি আমার নির্দেশে তোমার কাছে এক
রূহকে অহী করেছি। তুমি আদৌ জানতে
না কিতাব কি এবং ঈমানই বা কি। কিন্তু সেই রূহকে আমি একটি আলো বানিয়ে দিয়েছি যা দিয়ে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথ দেখিয়ে থাকি।
নিশ্চিতভাবেই আমি তোমাকে সোজা পথের দিক নির্দেশনা দান করছি। সেই আল্লাহর
পথের দিকে যিনি যমীন ও আসমানের সব জিনিসের মালিক। সাবধান, সব কিছু আল্লাহর দিকেই ফিরে যায়। ৪২/৫২-৫৩
লোকেরা কি মনে করে
রেখেছে, “আমরা ঈমান এনেছি” কেবলমাত্র একথাটুকু
বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না? অথচ
আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে
সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক। ২৯/২-৩
ঈমান গ্রহণকারীদের
জন্য এখনো কি সে সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে তাদের মন বিগলিত হবে, তাঁর
নাযিলকৃত মহা সত্যের সামনে অবনত হবে এবং তারা সেসব
লোকদের মত হবে না যাদেরকে ইতিপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ
সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে তাদের মন কঠোর হয়ে গিয়েছে এবং আজ তাদের অধিকাংশই ফাসেক হয়ে গেছে।
৫৭/১৬
ঈমান বলতে মূলত ঈমান বিল গায়েব বা অদৃশ্যের
প্রতি বিশ্বাসকে বুঝায়। আল্লাহ, ফেরেশতা, নবী-রাসূল, কিতাব, আখেরাত এ সবই অদৃশ্য। কিতাব অদৃশ্য এই
কারনে যে এটি সরাসরি আমাদের কাছে আসেনি। এটিই
যে সেই কিতাব তা আমাদের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। এই কারনে কোরানের শুরুর দিকে আমাদের শেখানো হচ্ছে যে, এটিই সেই কিতাব যা সন্দেহমুক্ত এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পথনির্দেশ। এই বিশ্বাস নিয়ে যখন আমরা কিতাবকে তথা
আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধরতে পারব তখনই আমাদের ভিতর সূরা বাকারার তৃতীয় আয়াতের প্রথম কথা গায়েবের প্রতি সত্যিকারের বিশ্বাস আসবে।
আল্লাহর প্রতি
ঈমানঃ
সূরা ইখলাস এর
শিক্ষা তথা, " বলো, তিনি আল্লাহ, একক। আল্লাহ কারোর ওপর নির্ভরশীল নন এবং সবাই তাঁর ওপর নির্ভরশীল। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনি কারোর
সন্তান নন। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।" এই
শিক্ষার উপর ঈমান আনা।
আমি মানুষকে
সৃষ্টি করেছি আর তাদের মনে যেসব কুমন্ত্রণা উদিত হয় তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ের
রগের চেয়েও তার বেশী কাছে আছি। ৫০.১৬
তিনিই রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে
রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করেন। তিনি অন্তরের গোপন কথা পর্যন্ত জানেন। ৫৭.৬
আল্লাহ আসমান ও
যমীনের প্রতিটি গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে জানেন। তোমরা যা কিছু করছো তা সবই তিনি
দেখছেন। ৪৯.১৮
রসূলগণের প্রতি
ঈমানঃ
এই পৃথীবিতে জানা-অজানা যত নবী রাসূল
এসেছেন সবার প্রতি ঈমান আনতে হবে। নবী রাসূলগনই আমাদের প্রকৃত আদর্শ। তারা যেই পথে চলেছেন আমাদেরকেও ঠিক সেই পথেই চলতে হবে। সকল নবী রাসূলের একটাই কাজ
ছিল আর তা হল আল্লাহর কালাম দিয়ে মানুষকে সতর্ক করা এবং সুসংবাদ দান করা। সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মদ (দঃ) এর কাছে প্রেরিত আল-কোরয়ান পূর্বের
নবীদের কাছে আসা সকল কিতাবের সত্যায়নকারী তথা পূর্বের সকল নবীদের শিক্ষাই মহাগ্রন্থ আল কোরআন এ
সন্নেবেশিত। তাই কোরআন এর
অনুসরনের মাধ্যমে মূলত সকল নবী রাসূলের শিক্ষারই অনুসরন। নবী-রাসূলগন এই পৃথিবীতে প্রেরনের পূর্বেই আল্লাহ
কর্ত্রিক নির্বাচিত। তাদের প্রতি
আমাদের এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তারা আল্লাহর
গোলাম এবং নির্বাচিত প্রেরিত দূত।
রসূল তার রবের
পক্ষ থেকে তার ওপর যে হিদায়াত নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছে। আর যেসব লোক ঐ রসূলের প্রতি ঈমান
এনেছে তারাও ঐ হিদায়াতকে মনে-প্রাণে স্বীকার করে
নিয়েছে। তারা সবাই আল্লাহকে, তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাবসমূহকে ও তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমাণ রাখে এবং
তাদের বক্তব্য হচ্ছেঃ “আমরা আল্লাহর রসূলদের একজনকে আর একজন থেকে আলাদা করি
না। আমরা নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি। হে
প্রভু! আমরা তোমার কাছে গোনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদের তোমারই দিকে ফিরে যেতে হবে।
২.২৮৫
আসমানী
কিতাবসমূহের প্রতি ঈমানঃ
আল্লাহ তা'লা মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য বর্ননা করতে গিয়ে বলেন, "আর যে কিতাব তোমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে (অর্থাৎ কুরআন) এবং তোমার আগে যেসব
কিতাব নাযিল করা হয়েছিল সে
সবগুলোর ওপর ঈমান আনে আর আখেরাতের ওপর একীন রাখে।" ২.৪
আর হে নবী, যারা এ কিতাবের ওপর ঈমান আনবে এবং (এর বিধান অনুযায়ী) আমলে সলেহ বা সৎকাজ করবে
তাদেরকে এ মর্মে সুখবর দাও যে, তাদের জন্য এমন
সব বাগান আছে যার নিম্নদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে ঝর্ণাধারা। সেই বাগানের ফল দেখতে দুনিয়ার ফলের মতই হবে। যখন কোন ফল
তাদের দেয়া হবে খাবার জন্য, তারা বলে উঠবেঃ এ ধরনের ফলই ইতিপূর্বে দুনিয়ায় আমাদের
দেয়া হতো। তাদের জন্য সেখানে থাকবে
পাক-পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে থাকবে চিরকাল। ২.২৫
কিতাবের প্রতি
ঈমান আনলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আমাদের উপর কোরানের যে হক রয়েছে তা আদায় করতে
হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, "তারা কি কুরআন
নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেনি, নাকি তাদের মনের ওপর তালা লাগানো আছে? প্রকৃত ব্যাপার হলো, হিদায়াত সুস্পষ্ট হওয়ার পরও যারা তা থেকে ফিরে গেল শয়তান তাদের জন্য এরূপ আচরণ সহজ বানিয়ে দিয়েছে এবং
মিথ্যা আশাবাদকে দীর্ঘায়িত করে
রেখেছেন।" ৪৭/২৪-২৫
কাজেই হে নবী, কাফেরদের কথা কখনো মেনে নিয়ো না এবং এ
কুরআন নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তম জিহাদ করো। সূরা আল ফুরক্বান - ৫২
হাশরের ময়দানে আল্লাহর একমাত্র
জিজ্ঞাসা থাকবে,
অবশেষে যখন সবাই এসে যাবে তখন (তাদের রব তাদেরকে) জিজ্ঞেস করবেন, “তোমরা আমার আয়াত অস্বীকার করেছো অথচ তোমরা জ্ঞানগতভাবে তা আয়ত্ত করো নি? যদি এ না হয়ে থাকে তাহলে তোমরা আর কি করেছিলে।” আল কোরআন:২৭/৮৪
ফেরেশতাগণের
প্রতি ঈমানঃ
দু’জন লেখক তার ডান ও বাঁ দিকে বসে সবকিছু লিপিবদ্ধ করছে।
এমন কোন শব্দ
তার মুখ থেকে বের হয় না যা সংরক্ষিত করার জন্য একজন সদা প্রস্তুত রক্ষক উপস্থিত
থাকে না। ৫০.১৮
আখেরাতের প্রতি ঈমানঃ
((আজ তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে মত্ত হয়ে আছে।
) আর যেদিন আল্লাহ তাদেরকে একত্র করবেন সেদিন। (এ দুনিয়ার জীবন তাদের কাছে এমন ঠেকাবে) যেন মনে হবে তারা পরস্পরের মধ্যে পরিচয় লাভের উদ্দেশ্য
নিছক একদণ্ডের জন্য অবস্থান করেছিল। (সে সময় নিশ্চিতভাবে জানা যাবে)
প্রকৃতপক্ষে যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে মিথ্যা বলেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
এবং তারা মোটেই সঠিক পথে ছিল না।তারপর যে অতি অল্প পরিমাণ ভালোকাজ করবে সে তা দেখে নেবে এবং যে অতি অল্প পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে
তা দেখে নেবে। {আল যিলযালঃ ৭-৮
দুনিয়ার জীবন তো একটি খেল-তামাসার
ব্যাপার। আসলে যারা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে চায় তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই ভালো। তবে কি তোমরা
বুদ্ধি-বিবেচনাকে কাজে লাগাবে না? {আল আন'আমঃ ৩২ }
সেদিনটি অচিরেই আসবে যেদিন মুত্তাকীদেরকে
মেহমান হিসেবে রহমানের সামনে পেশ করবো এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত পশুর মতো জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবো। সে সময় যে রহমানের কাছ থেকে
পরোয়ানা হাসিল করেছে তার ছাড়া আর কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না। {মারয়ামঃ ৮৫-৮৭}
সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি করুণাময় কাউকে অনুমতি দেন এবং তার কথা শুনতে পছন্দ করেন।
{ত্বাহাঃ ১০৯ }
আসলে যারা আখেরাত বিশ্বাস করে না তাদের
জন্য আমি তাদের কৃতকর্মকে সুদৃশ্য করে দিয়েছি, ফলে তারা দিশেহারা
হয়ে ঘুরে বেড়ায়। {আন নামলঃ ৪
যে আখেরাতের কৃষিক্ষেত্র চায় আমি তার
কৃষিক্ষেত্র বাড়িয়ে দেই। আর যে দুনিয়ার কৃষিক্ষেত্র চায় তাকে দুনিয়ার অংশ থেকেই দিয়ে থাকি। কিন্তু
আখেরাতে তার কোন অংশ
নেই। {আশ শূরাঃ ২০ }
কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য
দিয়ে থাকো। অথচ আখেরাত উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। {আল আ’লাঃ ১৬-১৭}
অবশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং
তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে। একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
আর এ দুনিয়াটা তো নিছক
একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। {আলে ইমরানঃ ১৮৫ }
প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ
করতে হবে। আর আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি, শেষ পর্যন্ত তোমাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে। {আল আম্বিয়াঃ
৩৫ }
No comments:
Post a Comment