Thursday, May 29, 2014

১৮৪. হিন্দু ধর্মগ্রন্থ


যাদের বিচার-বুদ্ধি কেড়ে নিয়েছে পার্থিব আকাঙ্ঘা তারা অপদেবতার উপাসনা করে অর্থ্যাত 'যারা জড়বাদী তারাই শুধু অপদেবতার উপাসনা করে। ভগবদগীতাঃ ৭.২০

তিনি সেই সত্তা যিনি আমাকে জন্মের পূর্বে থেকেই জানেন, যার কোনো আদি নেই, তিনি হচ্ছেন জগটসমূহের সর্ময় কর্তৃত্বের অধিকারী প্রভূ। ভগবদগীতাঃ ১০.৩


মহাজ্ঞানীরা এক প্রভূকে বিভিন্ন নামে ডাকে। ঋগবেদঃ ১.৬৪.৪৬

তাঁর ব্যাপারে কোনো কল্পনা করা যায় না। তিনি হচ্ছেন এমন সত্তা যিনি জন্মগ্রহন করেননি, তিনি আমাদের উপাসনার যোগ্য। (জজুরবেদ.৩২.৩)

তিনি হচ্ছেন নিরাকার এবং বিশুদ্ধ। (জজুরবেদঃ ৪০.৮)

তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে যারা প্রাকৃতিক বস্তুর পূজা করে। (জজুরবেদঃ ৪০.৯)

প্রভূ অত্যন্ত মহান। (অথর্ববেদঃ ২.৫৮.৩)

তিনি একজন ব্রহ্ম। (ঋগবেদ বই-২, স্তুতিবাচক শ্লোক-৩)। ব্রহ্ম শব্দটির অর্থ স্রষ্টা। শব্দটির আরবী অনুবাদ করলে দাঁড়ায় 'খালিক'। ইসলাম মহান প্রভূকে খালিক বা ব্রহ্ম বা স্রষ্টা বলে ডাকতে নিষেধ করে না। কিন্তু কেউ যদি বলে ব্রহ্ম, তথা সর্বশক্তিমান প্রভূর চারটি মাথা আর প্রতি মাথায় একটি মুকুট এবং চারটি হাত আছে, তবে এক্ষেত্রে ইসলামের প্রবল আপত্তি রয়েছে। কারণ এ ধরনের বর্ণনা সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে মানুষের মনে কল্পনার সৃষ্টি করে। আর এ বর্ণনা জজুরবেদের ৩২ নং অধ্যায়ের ৩ নং শ্লোকে উল্লিখিত বর্ণনার সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা সেখানে বলা হয়েছে, 'তাঁর সম্পর্কে কল্পনাও করা যায় না' অর্থ্যাত স্রষ্টার কোনো প্রতিমূর্তি নেই।

বিষ্ণু অর্থ পালনকর্তাঃ
 ঋগবেদে প্রভূর আরেকটি সুন্দর গুণের কথা বলা হয়েছে। যেমন বই-২, স্তুতিস্তাবক-১, শ্লোক নং-৩ এ বিষ্ণুর উল্লেখ আছে। 'বিষ্ণু' শব্দটির অর্থ হচ্ছে রক্ষাকর্তা বা পালনকর্তা। আপনি যদি এ শব্দটিকে আরবিতে অনুবাদ করেন তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় 'রব'। আর কেউ যদি সর্বশক্তিমান প্রভূকে 'রব', 'রক্ষাকর্তা' কিংবা 'বিষ্ণু' হিসেবে আখ্যায়িত করে তাতে ইসলামের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কেউ বলে যে বিষ্ণুই হলেন সেই ঈশ্বর যিনি বসে আছেন সাপকে আসন বানিয়ে, সমূদ্রের নীচে ভ্রমণ করেন, গরুর নামক এক পাখির পিঠে চড়ে আকাশে উড়ে বেড়ান, তার চারটি হাত আছে, ডান হাতদ্বয়ের একটি হাত দ্বারা শংখ বর্ম এবং বিষ্ণু পাখি কিংবা সাপের ছোবলের বাহনে উপবিষ্ট তাহলে এক্ষেত্রে ইসলামের ঘোর আপত্তি আছে। কারণ, বিষ্ণুর এ ধরনের বর্ণনা সর্বশক্তিমান প্রভূর আকৃতি সম্পর্কে ধারণার সৃষ্টি করে। আর এ বর্ণনা জজুরবেদের ৩২ নং অধ্যায়ের ৩ নং অনুচ্ছেদে বর্ণনার [সেখানে বলা হয়েছে, না আস্তি প্রতিমা আস্তি অর্থ্যাত সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিপালকের কোনো প্রতিমূর্তি নেই।] সম্পূর্ণ বিপরীত।

# ঋগবেদ খন্ড-৮, স্তুতিবাচন অনুচ্ছেদ-১, শ্লোক নং-১ এ বলা হয়েছে- !মা চদিনদি সানসাদ, অর্থ্যাত 'তিনি (প্রভূ) ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করো না। তিনি একমাত্র স্বর্গীয়। কেবল তাঁরই প্রশংসা করো।' (ঋগবেদ সমিতি, খন্ড-৯, পৃষ্ঠা-১ ও ২)

# ঋগবেদ খন্ড-৫, স্তুতিস্তাবক-৮১, শ্লোক নং-১ এ বলা হয়েছে- 'সত্যিই স্বর্গীয় স্রষ্টার গৌরব অত্যন্ত সুমহান।' (ঋগবেদ সমিতি, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৮০২ ও ১৮০৩)

#ঋগবেদ খন্ড-৬, স্তুতিস্তাবক-৪৫, এর ১৬ শ্লোকে বলা হয়েছে- 'তাঁরই প্রশংসা করো যার কোনো তুলনা নেই এবং তিনি একক।' (র‍্যাঙ্ক টি এইচ গ্রিফথ কর্তৃক রচিত ঋগবেদ, পৃষ্ঠা-৬৪৮)

হিন্দু বেদান্তের ব্রহ্মসূত্রঃ
হিন্দু বেদান্তের ব্রহ্মসূত্র হচ্ছে- "এক কম ব্রাহম দিউতা নাস্তি নেহনা নাস্তি কিঞ্চন" অর্থ্যাত 'সৃষ্টিকর্তা কেবল একজন এবং দ্বিতীয় কোনো দেবতা নেই, আদৌ নেই, কখনো ছিল না এবং কখনো হবে না।'
হিন্দুধর্মের প্রকৃত ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে নেয়া এসব ধারা স্পষ্টভাবে স্রষ্টা সর্বশক্তিমান প্রভূর একত্ব এবং অদ্বিতীয়তা প্রমাণ করে। উপরন্তু এসব ধারা স্পষ্টভাবে স্রষ্টা সর্বশক্তিমান প্রভূর একত্ব এবং অদ্বিতীয়তা প্রমাণ করে। উপরন্তু এসব ধারা সত্য প্রভূ একক আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য দেবতার অস্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছে। এসব ধারা অত্যন্ত সুন্দরভাবে একেশ্বরবাদ তথা তাওহীদের ধারণাকে স্পষ্ট করে। কেউ যদি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে হিন্দুধর্ম গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন তবে তিনি হিন্দুধর্মের প্রভূ সম্পর্কিত যথার্থ ধারণা বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারবেন।

No comments:

Post a Comment