প্রার্থনা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যঃ
আমিই আল্লাহ,
আমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই,
কাজেই তুমি আমার দাসত্ব করো
এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য প্রার্থনা প্রতিষ্ঠিত করো।
(সূরা ত্বহা/১৪।)
প্রার্থনা প্রতিষ্ঠার সময়ঃ
প্রার্থনা প্রতিষ্ঠা করো দিনের দু’প্রান্তে
এবং রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত।
আসলে সৎকাজ অসৎকাজকে দূর করে দেয়।
এটি একটি স্মারক তাদের জন্য যারা আল্লাহকে স্মরণ রাখে।
(সূরা হুদ/১১৪।)
প্রার্থনা প্রতিষ্ঠা করো
সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে নিয়ে
রাতের অন্ধকার পর্যন্ত
এবং ভোরবেলায় কুরআন পড়ারও ব্যবস্থা করো।
কারণ ভোরের কুরআন পাঠ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
(সূরা বনী ইসরাঈল/৭৮।)
হে বিশ্বাসীগণ!
তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসী
এবং তোমাদের এমন সব সন্তান
যারা এখনো বুদ্ধির সীমানায় পৌঁছেনি,
তাদের অবশ্যি তিনটি সময়ে অনুমতি নিয়ে
তোমাদের কাছে আসা উচিতঃ
ভোরের প্রার্থনার আগে,
দুপুরে যখন তোমরা পোশাক ছেড়ে রেখে দাও
এবং সন্ধ্যার প্রার্থনার পর।
এ তিনটি তোমাদের গোপনীয়তার সময়।
এরপরে তারা বিনা অনুমতিতে এলে
তোমাদের কোন পাপ নেই এবং তাদেরও না।
তোমাদের পরস্পরের কাছে বারবার আসতেই হয়।
এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য
নিজের বাণী সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন
এবং তিনি সবকিছু জানেন ও বিজ্ঞ।
(সূরা আন নূর/৫৮।)
প্রার্থনার কোরআনিক উদাহরণ ও নির্দেশনাঃ
হে বিশ্বাসীগণ!
যখন তোমরা প্রার্থনার জন্য তৈরী হও,
তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দু’টি
কনুই পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো,
মাথার ওপর হাত বুলাও
এবং পা দু’টিও গোড়ালী পর্যন্ত।
যদি তোমরা অপরিচ্ছন্ন থাক , তাহলে পরিচ্ছন্ন হয়ে নাও।
যদি তোমরা রোগগ্রস্ত হও বা সফরে থাকো
অথবা তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে
বা নারী সম্ভোগ করে থাকো এবং পানি না পাও,
তাহলে পরিচ্ছন্ন মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও।
তার ওপর হাত রেখে নিজের চেহারা ও হাতের ওপর মুছে নাও।
আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না
কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পরিচ্ছন্ন করতে
এবং তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে,
হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞ হবে।
(সূরা আল মায়েদাহ-৬।)
হে বিশ্বাসীগণ!
তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রার্থনা করো না।
প্রার্থনা তখন করা উচিত
যখন তোমরা যা বলছো তা বুঝতে পারো।
অনুরূপভাবে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায়ও
যতক্ষন না তা ধূয়ে পরিস্কার করে নাও।
তবে যদি ভ্রমনরত থাকো, তাহলে ভিন্ন কথা।
আর যদি কখনো তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো, সফরে থাকো
বা তোমাদের কেউ মলমূত্র ত্যাগ করে আসে
অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ করে থাকো
এবং এরপর পানি না পাও,
তাহলে পাক–পবিত্র মাটির সাহায্য গ্রহণ করো
এবং তা নিজেদের চেহারা ও হাতের ওপর বুলাও।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ কোমলতা অবলম্বনকারী ও ক্ষমাশীল।
(সূরা নিসা/৪৩।)
আর যখন তোমরা ভ্রমনরত থাকো
তখন প্রার্থনা সংক্ষেপ করে নিলে কোন ক্ষতি নেই।
(বিশেষ করে) যখন তোমাদের আশঙ্কা হয় যে,
অবিশ্বাসীরা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে।
কারণ তারা প্রকাশ্যে তোমাদের শত্রুতা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
যখন তুমি তাদের মধ্যে থাকো
তখন তাদেরকে নিয়ে প্রার্থনায় দাঁড়াও।
তখন তাদের মধ্য থেকে একটি দলের
তোমার সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত এবং তারা অস্ত্রসস্ত্র সঙ্গে নেবে।
তারপর তারা আল্লাহর সামনে মস্তক অবনমিত করবে ও পেছনে চলে যাবে
এবং দ্বিতীয় দলটি, যারা এখনো প্রার্থনা করেনি,
তারা এসে তোমার সাথে প্রার্থনা করবে।
আর তারাও সতর্ক থাকবে এবং নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র বহন করবে।
কারণ অবিশ্বাসীরা সুযোগের অপেক্ষায় আছে,
তোমরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ও জিনিস পত্রের দিক থেকে সামান্য গাফেল হলেই
তারা তোমাদের ওপর অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়বে।
তবে যদি তোমরা বৃষ্টির কারণে কষ্ট অনুভব করো অথবা অসুস্থ থাকো,
তাহলে অস্ত্র রেখে দিলে কোন ক্ষতি নেই।
কিন্তু তবুও সতর্ক থাকো।
নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো,
আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
তারপর তোমরা প্রার্থনা শেষ করার পর
দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো।
আর মানসিক প্রশান্তি লাভ করার পর
(জীবনের সকল ক্ষেত্রে) প্রার্থনা প্রতিষ্ঠিত করো।
আসলে নির্ধারিত সময়ে প্রার্থনা বিশ্বাসীদের জন্য লিখে দেয়া হয়েছে।
(সূরা নিসা /১০১-১০৩)
তোমাদের প্রার্থনাসমূহের সংরক্ষণ করো,
বিশেষ করে এমন প্রার্থনা
যা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরীর মাধ্যম।
আল্লাহর সামনে এমনভাবে দাঁড়াও
যেমন অনুগত সেবকরা দাঁড়ায়।
(সূরা আল বাকারাহ/২৩৮)
যারাঃ নিজেদের প্রার্থনায় বিনয়াবনত থাকে।
(সূরা আল মুমিনুন/২)
এবং নিজেদের প্রার্থনাসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ করে।
(সূরা আল মুমিনুন/৯)
এদেরকে বলে দাও,
আল্লাহ বা দয়াময় যে নামেই ডাকো না কেন,
তাঁর জন্য সবই ভাল নাম।
আর নিজের প্রার্থনা খুব বেশী উচ্চ কণ্ঠেও করবে না,
বেশী ক্ষীণ কণ্ঠেও না,
বরং এ দু’য়ের মাঝামাঝি মধ্যম পর্যায়ের কণ্ঠস্বর অবলম্বন করবে।
আর বলো,
সেই আল্লাহর প্রশংসা,
যিনি কোন পুত্রও গ্রহণ করেননি।
তাঁর বাদশাহীতে কেউ অংশীদারও হয়নি
এবং তিনি এমন অক্ষমও নন যে,
কেউ তাঁর সাহায্যকারী ও নির্ভরতা হবে।”
আর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করো,
চূড়ান্ত পর্যায়ের শ্রেষ্ঠত্ব।
(সূরা বনী ইসরাঈল-১১০।)
এ অবস্থা দেখে
যাকারিয়া তার প্রভূর কাছে প্রার্থনা করলোঃ
“প্রভূ! তোমরা বিশেষ ক্ষমতা বলে আমাকে সৎ সন্তান দান করো।
তুমিই প্রার্থনা শ্রবণকারী।”
যখন তিনি মেহরাবে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছিলেন।
তখন এর জবাবে তাকে মালাইকাগণ বললোঃ
“আল্লাহ্ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দান করেছেন।
সে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আদেশের সত্যতা প্রমাণকারী হিসেবে আসবে।
তার মধ্যে নেতৃত্ব ও সততার গুণাবলী থাকবে।
সে পরিপূর্ণ সংযমী হবে, আল্লাহর বানী বলবে
এবং সৎকর্মশীলদের মধ্যে গণ্য হবে।”
(সূরা আলে ইমরান ৩৮-৩৯)
তুমি কি দেখনা!
আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করেছে
যারা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আছে তারা সবাই
এবং যে পাখিরা ডানা বিস্তার করে আকাশে ওড়ে।
প্রত্যেকেই জানে তার প্রার্থনা ও পবিত্রতা বর্ণনা করার পদ্ধতি।
আর এরা যা কিছু করে আল্লাহ তা জানেন।
(সূরা আন নূর, ৪১)
প্রকৃত প্রার্থনাকারীদের বৈশিষ্ট্যঃ
তবে যারা প্রার্থনাকারী।
তারা তাদের প্রার্থনায় অবিচল থাকে।
তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট অধিকার আছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের।
তারা প্রতিফলের দিনটিকে সত্য বলে মানে।
তারা তাদের লালন পালনকারীর শাস্তিকে ভয় করে।
কারণ তাদের লালন পালনকারীর শাস্তি এমন বস্তু নয়
যা সম্পর্কে নির্ভয় থাকা যায়।
তারা নিজেদের লজ্জাস্থান
নিজের স্ত্রী অথবা মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ছাড়া
অন্যদের থেকে রক্ষা করে।
স্ত্রী ও মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে তারা তিরস্কৃত হবে না।
তবে যারা এর বাইরে আর কেউকে চাইবে
তারা সীমালংঘনকারী।
যারা আমানত রক্ষা করে ও প্রতিশ্রুতি পালন করে।
আর তারা সাক্ষ্য দানের ক্ষেত্রে সততার ওপর অটল থাকে।
তারা প্রার্থনার রক্ষনাবেক্ষণ করে।
এসব লোক সম্মানের সাথে বাগানসমূহে অবস্থান করবে।
(সূরা আল মা'আরিজ/২২-৩৫)
কিতাব থেকে তোমার প্রতি যা অহি করা হয়
(সূরা আল আনকাবুত/৪৫)
দু'মুখো লোকদের প্রার্থনাঃএই দু'মুখো লোকেরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করছে।
অথচ আল্লাহই তাদেরকে ধোঁকার মধ্যে ফেলে রেখে দিয়েছেন।
তারা যখন প্রার্থনার জন্য ওঠে,
আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে শৈথিল্য সহকারে
নিছক লোক দেখাবার জন্য ওঠে
এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।
(সূরা নিসা, ১৪২)
তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার
এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে,
তারা আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহককে অস্বীকার করেছে,
প্রার্থনার জন্য যখন আসে আড়মোড় ভাংতে ভাংতে আসে
এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃত ভাবে।
(সূরা তওবা/৫৪)
নবীদের পরই প্রার্থনা বিকৃত করা হয়েছেঃ
তারপর এদের পর এমন নালায়েক লোকেরা এদের স্থলাভিষিক্ত হলো
যারা প্রার্থনাকে বিকৃত করলো এবং প্রবৃত্তির কামনার দাসত্ব করলো। তাই শীঘ্রই তারা বিভ্রান্তির মুখোমুখি হবে। (সূরা মারয়াম, ৫৯)
প্রার্থনা না করার পরিনামঃ
সেখানে তারা অপরাধীদের জিজ্ঞেস করতে থাকবে
কিসে তোমাদের দোযখে নিক্ষেপ করলো।
তারা বলবেঃ আমরা প্রার্থনাকারী ছিলাম না।
অভাবীদের খাবার দিতাম না।
সত্যের বিরুদ্ধে অপবাদ রটনাকারীদের সাথে মিলে আমরাও রটনা করতাম;
প্রতিফল দিবস মিথ্যা মনে করতাম।
শেষ পর্যন্ত আমরা সে নিশ্চিত জিনিসের মুখোমুখি হয়েছি।
(সূরা আল মুদ্দাসসির, ৪৩-৪৭)সেদিন কিছু সংখ্যক চেহারা তরতাজা থাকবে।
নিজের রবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।
আর কিছু সংখ্যক চেহারা থাকবে উদাস-বিবর্ণ।
মনে করতে থাকবে যে,
তাদের সাথে কঠোর আচরণ করা হবে।
কখ্খনো না,যখন প্রাণ কণ্ঠনালীতে উপনীত হবে
এবং বলা হবে, ঝাঁড় ফুঁক করার কেউ আছে কি?
মানুষ বুঝে নেবে এটা বিদায় নেয়ার সময়।
উভয় পায়ের গোছা বা নলা একত্র হয়ে যাবে।
সেদিনটি হবে তোমার প্রভুর কাছে যাত্রা করার দিন।
অথচ সে সত্যকে অনুসরণও করেনি।
প্রার্থনাও করেনি।
বরং সে অস্বীকার করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
তারপর গর্বিত ভঙ্গিতে
নিজের পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে গিয়েছে।
(সূরা আল কিয়ামাহ/২২-৩৩)
তারপর সেই প্রার্থনাকারীদের জন্য ধ্বংস
যারা নিজেদের প্রার্থনার ব্যাপারে উদাসীন।
যারা লোক দেখানো কাজ করে।
(সূরা আল মাউন/৪-৬)
No comments:
Post a Comment